এবার বিশেষ আইনে আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পেট্রোবাংলা।
এর বিপরীতে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। সরকারের অনুমোদন পেলে চলতি ডিসেম্বরেই এই প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান যায়যায়দিনকে বলেন, চলতি মাসেই এ প্রক্রিয়ায় চুক্তি আওতায় কোম্পানির তালিকা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট প্রদান করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলেই নতুন নির্বাচিত কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং আগের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি বাতিল হবে।
মূলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহে সাবেক সরকারের করা বিশেষ আইন ২০১০ আওতায় করা বিভিন্ন চুক্তি খতিয়ে দেখছে সরকার। ইতোমধ্যেই এ খাতে বেশকিছু চুক্তি বাতিল ও প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিশেষ আইনে করা সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা হবে। তার আগে নতুন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত কোম্পানির তালিকা চূড়ান্ত করতে হবে। আশা করি ডিসেম্বরের শুরুতেই এই তালিকা চূড়ান্ত হবে। এরপর সরকার অনুমোদন দিলেই নতুন চুক্তিতে থাকা কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হবে।’
তবে যেসব কোম্পানি থেকে এলএনজি আমদানি হয় তার সবগুলোই বিশেষ আইন ২০১০ এর আওতায় করা। প্রথম ধাপে ১৫টি কোম্পানি ও পরবর্তীতে আরও ৫টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা হয়। সবমিলিয়ে মোট ২৩টি কোম্পানির সঙ্গে করা পুরনো চুক্তি বাতিল হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের নামে বিশেষ আইনের আওতায় প্রতিটি চুক্তি প্রশ্নবিদ্ধ। এ খাতে করা লুটপাট নিয়ে কেউ যেন কোনো প্রশ্ন না করতে পারে তার জন্য এই আইনের আওতায় এসব চুক্তি করা হয়েছে। তা না হলে স্পট থেকে এলএনজি আমদানিতে কেন টেন্ডার আহ্বান করা হবে না। নিশ্চয়ই সাবেক সরকারের সংশ্লিষ্টরা সিলেক্টেট এসব কোম্পানি থেকে মোটা অঙ্কের কমিশন ভোগ করত। আর চড়া মূল্যে এই জ্বালানির বোঝা চাপানো হতো ভোক্তার ওপর।
জানা গেছে ২৩ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি থাকলে হতেগোনা ৩ থেকে ৪টি প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মিত আমদানি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ভিটোল এশিয়া, সুইজারল্যান্ডের টোটাল এনার্জিস, যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি ও সিঙ্গাপুরের গানভর। আগস্টে সরকার পতনের আগে সরকারের এলএনজি বাবদ বকেয়া বিল ছিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্যে স্পট থেকে কেনা ৩ কোম্পানির বকেয়া ছিল ৮৭ মিলিয়ন ডলার।
এমনকি বকেয়ার পরিমাণ বেশি থাকায় গত ২ সেপ্টেম্বর ও ৯ সেপ্টেম্বর দুই কার্গো এলএনজি খালাস না করে সরবরাহকারীরা চলে যাচ্ছিলেন। জ্বালানি বিভাগ জরুরিভাবে অনুরোধ করে তা খালাস করার ব্যবস্থা করেছেন।
বিশেষ আইনের কারণে এ নিয়ে গত সরকারের আমলে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি। জ্বালানি বিশ্লেষকরা বলছেন, স্পট থেকে এলএনজি আমদানি করে এমন দেশ অনেক। কিন্তু এমন বিশেষ আইনে কেউ আমদানি করে বলে মনে হয় না। স্পট মার্কেটে যখন এলএনজির দাম নিম্নমুখী তখনও তুলনামূলক বেশি দামে এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। কম দামে কেনার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সুনির্দিষ্ট কিছু কোম্পানি থেকেই আমদানি করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যুতের দাম পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দফায় দফায় বাড়ানো হয়েছে। শিল্পের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে বহুগুণে।
এদিকে নতুন প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতামূলক দামে এলএনজি আমদানি করা হলে এ খাতে ব্যয় কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। যেহেতু বাংলাদেশ এলএনজির বড় ক্রেতা তাই বড় বড় বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো কম দামে এই বাজার ধরতে আগ্রহী হবে।
যাযাদি/ এস