ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে বাংলাদেশকে বৈষম্যহীন, শোষণ বঞ্চনামুক্ত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সুবর্ণ সুযোগ এসেছে। প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বতীকালীন সরকার সকল ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ভিত্তিক একটি সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ৩৫২তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে মঙ্গলবার এ মন্তব্য করেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের শ্রম খাতে সাধিত অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন আইন উপদেষ্টা। বাংলাদেশের শ্রম অধিকার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে উন্নীত করার লক্ষ্যে একজন শ্রম অধিকার কর্মীর নেতৃত্বে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন শ্রম অধিকার সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তাছাড়া পুলিশ, জনপ্রশাসন, সংবিধান, নারীর অধিকার সংক্রান্ত সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও মানবিক মর্যাদাসম্পন্ন দেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র তিন মাসের মধ্যেই গুম বিরোধী জাতিসংঘ কনভেনশনে যোগদান করেছে এবং কুখ্যাত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহযোগিতায় আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই বাংলাদেশ শ্রম আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হবে বলে আইন উপদেষ্টা অবহিত করেন। এ লক্ষ্যে শ্রমিকপক্ষ, মালিকপক্ষ ও সরকারের প্রতিনিধিদের সমণ্বয়ে ত্রিপক্ষীয় পরামর্শক কাউন্সিল পুনর্গঠিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি। ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংখ্যা ও নথিপত্র কমানো ও দাখিলকৃত নথিপত্রের গোপনীয়তা রক্ষায় আইনগত সংস্কার করা হবে বলে জানান উপদেষ্টা।
ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে জরিমানা বৃদ্ধি ছাড়াও একটি কারিগরী কমিটির মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ইউনিয়ন কর্মীদের বায়োমেট্রিক উপায়ে কালোতালিকাভুক্ত করা, নির্যাতন ও হয়রানির ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলা জানান আইন উপদেষ্টা। তাছাড়া গত বছরের ন্যুনতম মজুরি আন্দোলনে দায়েরকৃত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পর্যালোচনা করা হচ্ছে বলেও গভর্নিং বডি সদস্যদেরকে অবহিত করেন উপদেষ্টা। শ্রম পরিদর্শনের গুণগত উন্নয়নে অঘোষিত পরিদর্শন পরিচালনা করা ও পরিদর্শকদেরকে সেক্টর ভিত্তিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবেও জানান তিনি অধিবেশনে দাখিলকৃত প্রতিবেদন নিয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনায় অংশ নিয়ে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিনিধিরা শ্রম অধিকার উন্নয়ন ও শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকল্পে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর প্রশংসা করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রক্রিয়া দ্রুত বন্ধ করার জন্য দাবী জানান। বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী কয়েকটি দেশের প্রতিনিধিরা শ্রমখাত সংস্কারে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনাকে স্বাগত জানান এবং এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। উল্লেখ্য, চলতি অধিবেশনে গভর্নিং বডির কোনো সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের দাবী জানায়নি।
গত সোমবার আইন উপদেষ্টা ডঃ আসিফ নজরুল আনিসুল হক আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার মহাপরিচালক গিলবার্ট হোংবোর সাথে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে আইন উপদেষ্টা বাংলাদেশের শ্রমজীবী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন এবং এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সহযোগিতা ও অংশীদারিত্ব অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।
মহাপরিচালক হোংবো সরকারের সদিচ্ছা ও গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির প্রশংসা করেন। বৈঠকে শ্রম উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূইয়া, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, জেনেভায় বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি, শ্রম সচিব ছাড়াও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার উর্দ্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
যাযাদি/এসএস