মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

আইনের শাসন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম নিয়ামক: মানবাধিকার কমিশন

যাযাদি ডেস্ক
  ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৫০
ছবি: সংগৃহীত

মানবাধিকার সুরক্ষা ও সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকারকর্মীদের কার্যাবলী ইতিবাচকভাবে দেখে এবং প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে। সে লক্ষ্যে সোমাবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, ইউএনডিপি ও সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের আয়োজনে Consultation with Human Rights Defenders শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে মানবাধিকারকর্মীগণ অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনব্যাপী এই সভায় সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।

আলোচনাকালে চেয়ারম্যান উপস্থিত মানবাধিকারকর্মীদের দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন। তিনি জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনে রাজনৈতিক, নাগরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের প্রভাব নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেন। পাশাপাশি তিনি মানবাধিকার সুরক্ষায় গণমাধ্যমকর্মীদের ভূমিকা, নারী ও শিশু অধিকার, বাল্যবিবাহ নিরসন, বৈষম্যবিরোধী আইনের প্রয়োজনীয়তা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। মানবাধিকার সংরক্ষণে যেসব প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিবর্গ কাজ করছে তাদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অগ্রসর হতে এবং পরস্পরের সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো বৃদ্ধিতে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে সমাজে মানবাধিকার সংরক্ষণ নির্ভর সুশীল ভূমিকা রাখতে আহ্বান জানান চেয়ারম্যান।

কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারগুলোও নিশ্চিত করতে মানবাধিকারকর্মীদের কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখতে হবে, কারণ একটি অপরটির পরিপূরক এবং কোনো একটির অবর্তমানে মানবাধিকার সংরক্ষণ সম্ভব নয়। নানা সীমাবদ্ধতা ও বাধা থাকলেও আমাদের আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রসর হতেই হবে। দেশের একজন নাগরিক প্রকৃতপক্ষেই ক্ষমতায়িত ব্যক্তি হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন এ অধিকারগুলো নিশ্চিত হলে। আমাদের সংবিধানের ৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। মানবাধিকারকর্মীদের মিলিত প্রয়াসে জনগণকে ক্ষমতায়িত করা এবং সকলের মানবাধিকার সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে যথাযথ অবদান রাখা দায়িত্ব। আমাদের মৌলিক অধিকারগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই তা সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক গুম বিষয়ক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে। যা দেশের মানবাধিকার সুরক্ষায় একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। নিঃসন্দেহে গুম হওয়া বেআইনি, নির্যাতনমূলক এবং এটি মানবাধিকারকে চরমভাবে লঙ্ঘন করে। আমরা আশা করবো সরকার দ্রুত এর অনুসমর্থন করবে এবং বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ আইনে সম্পৃক্ত হবে। দুর্ভাগ্যবশত মানবাধিকার কমিশন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে সরাসরি তদন্ত করতে পারে না, মানবাধিকার কমিশন শুধু সে বিষয়ে সরকারকে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলতে পারে। আইন শক্তিশালী করতে এ বিষয়ে সংশোধন আনা যেতে পারে।

আলোচনাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্যে চেয়ারম্যান বলেন, দেশের জনগণের স্বার্থে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়মিত মানবাধিকারকে উচ্চ অবস্থানে প্রকাশ করতে হয়। জনগণণের মাঝে মানবাধিকার বিষয়ক সচেতনতা তৈরি ও লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরা এবং দেশে মানবাধিকার সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের দায়িত্বশীলতাপূর্ণ কাজ সকলের কাম্য। গণমাধ্যমকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, সেগুলো দূর করতে হবে।

আজকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশের বিভিন স্থান থেকে আগত মানবাধিকারকর্মীগণ। আরও উপস্থিত ছিলেন ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক এবং কমিশনের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আরফান আশিক।

যাযাদি/ এসএম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে