দুর্নীতি আমাদের সমাজের অশনি সংকেতঃ এ কে এম রেজাউল করিম

প্রকাশ | ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:৪৫

যাযাদি ডেস্ক
সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা কি সত্যিই কার্যকর? নাকি আমাদের অন্ধকারে তলিয়ে যাওয়ার দিনগুলো কেবল বেড়ে চলছে? একসময়, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরতে সংবাদপত্রগুলো প্রথম পাতায় খবর প্রকাশ করত। কিন্তু আজকাল ঘুষ বা দুর্নীতির খবর প্রায় শোনা যায় না। এর অর্থ কি সমাজের মধ্যে ঘুষের ব্যবহার কমেছে, নাকি এটি সহনীয় ও গ্রহণযোগ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে?

৮০-এর দশকের দিকে, বাংলাদেশে স্বাধীন গণমাধ্যমের অভাব ছিল, তবে তখনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি সামাজিক ঘৃণা ছিল। আজ সেই ঘৃণা কোথায়? সমাজে দুর্নীতির প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এর ফলে সততা এবং নৈতিকতার মূল্যবোধ ক্ষয়ে গেছে।

দুর্নীতি আমাদের সমাজের মধ্যে এত গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে যে, এর বিরুদ্ধে লড়াই করা যেন অচিরেই অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের দুর্নীতি পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি, যেখানে ভুটান, যেটি দুর্নীতিতে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় ঈর্ষণীয়ভাবে এগিয়ে।

দুর্নীতির বিরুদ্ধে গঠিত কমিশন নিজেদের ‘দন্তহীন, নখহীন’ বলে দাবি করছে। আসলে দুর্নীতি এখন একটি স্থায়ী বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এবং এর প্রতিকার দেখা যাচ্ছে না। দেশের অর্থ বিদেশে পাচার হচ্ছে, আর যারা এসব করছে, তারা নিজেদের দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।

দুর্নীতি সমাজের সব স্তরে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি অফিসের দুর্নীতির চেয়ে বেসরকারি খাতে দুর্নীতির পরিস্থিতি আরও ভীতিজনক। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য মানুষ কখনো কখনো জীবনের মৌলিক বিষয়গুলোকে উপেক্ষা করছে। এখানে প্রশ্ন উঠছে, সত্যিই কি সমাজে সততা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, নাকি দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে?

দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাওয়া মানুষের অভাব নেই। এমনকি, অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন যে, নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে দুর্নীতি করার অধিকার আছে। কিন্তু এই মানসিকতা সমাজকে শুধু দুর্বল করে, বরং সৎ মানুষকে ‘বোকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে।

তবে সত্যি বলতে, ধনীরা আরো বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত। এটি একটি ভুল ধারণা যে, শুধুমাত্র নিম্ন আয়ের মানুষই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। দুর্নীতির এই ভয়াবহ পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হলে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মানসিকতা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের প্রয়োজন একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ, যা শিশুদের মধ্যে সততা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা দেবে। সমাজে যারা সৎ থাকার চেষ্টা করছেন, তাদেরকে ‘হিরো’ হিসেবে তুলে ধরা উচিত।

অবশেষে, যদি আমরা সবাই গর্বিত হয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারি, তবে বাংলাদেশ সত্যি ‘সোনার বাংলা’ হয়ে উঠতে পারে। এটি একদিনে হবে না, তবে সঠিক উদ্যোগ এবং সচেতনতা থাকলে আমরা ভবিষ্যতে একটি সততার সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।

 

লেখক: এ কে এম রেজাউল করিম, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও রাজনীতিবিদ

 

যাযাদি/এসএস