মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৯ আশ্বিন ১৪৩১

প্রকৃত আসামি ছাড়া কাউকে হয়রানি করা হবে না: ডিএমপি

যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৪১
সংগৃহীত ছবি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় দায়ের হওয়া মামলায় যারা প্রকৃত অর্থে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে, কাউকে অযথা হয়রানি করা হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান। তিনি বলেছেন, এ বিষয়ে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

‘ডিএমপির ৫০ থানায় এখন অনেক মামলা হচ্ছে, দেখা গেছে এক ব্যক্তির নামে ৮ থেকে ১০ থানায় মামলা। আসলে এসব অভিযোগের সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তি জড়িত কি না? এই বিষয়টি কীভাবে পুলিশ তদন্ত করছে’—প্রশ্ন করা হলে মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে মামলাগুলো আমরা গ্রহণ করছি। প্রতিটি মামলার একটি তদন্ত প্রক্রিয়া রয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করে কাউকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসি। এখন যদি কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা একাধিক থানায় থাকে তাহলে অভিযোগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এক্ষেত্রে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য বিশ্লেষণ করে কারও যদি সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পান, তখনই তাকে গ্রেপ্তারের আওতায় আনা হয়। এক্ষেত্রে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশনা আছে, মামলায় যারা প্রকৃত অর্থে জড়িত আছে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এখানে কাউকে অযথা হয়রানি বা ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। ’

‘রাজধানীতে বেশ কিছু অপ্রীতকর ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে হত্যা ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়েছে’—এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজের প্রক্রিয়া দুই ধরনের। একটি হলো প্রিভেন্টিং পুলিশিং আরেকটি হলো ডিটেকটিভ পুলিশিং। আমাদের চেষ্টা থাকে সমাজ থেকে অপরাধকে যতটুক পারা যায় মিনিমাইজ করে রাখা। এক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু কৌশলও রয়েছে,‌ এই কৌশলগুলো আমরা প্রয়োগ করছি। ঢাকা শহরে প্রায় দুই কোটি মানুষের বসবাস। এক্ষেত্রে কিছু ঘটনা ঘটতে পারে এবং অনেক সময় ঘটে যায়। সেই ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমাদের কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশিংয়ের একটি ব্যবস্থা রয়েছে। যখন একটা ঘটনা ঘটে, ঘটনার কারণ কী এবং অপরাধীদের চিন্তা কী, এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে আমরা কিন্তু অভিযুক্তদের‌ আইনের আওতায় নিয়ে‌ আসি। ’

‘অনেক অভিযুক্ত অভিযোগ করে বলেছেন, তারা স্পটে না থাকলেও বা দেশে না থাকলেও এসব মামলায় তাদের নাম আসছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলা বিভিন্ন থানায় দায়ের হচ্ছে। এই বিষয়টা পুলিশ কীভাবে দেখছে’—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ মামলার আসামি হলেই যে আমরা অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করছি সেটা কিন্তু না। সংশ্লিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করি। এক্ষেত্রে কারও যদি সংশ্লিষ্ট তা না থাকে, সেই ক্ষেত্রে আমরা যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে মামলায় তার কতটুকু সংশ্লিষ্টতা আছে তা আমরা বিচার বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। ’

‘অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে মামলার বাদী তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’—এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ডিসি তালেবুর রহমান বলেন, ‘মামলার ক্ষেত্রে মিথ্যা অভিযোগ করলে বাদীর বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিন্তু আইন আছে। যে কেউ মনগড়া একটা অভিযোগ করলে আমরা সেক্ষেত্রে কিন্তু তদন্ত এবং বিশ্লেষণ ছাড়া ব্যবস্থা নিচ্ছি না । এক্ষেত্রে বাদীদের আমরা বলবো তারা যেন বস্তুনিষ্ঠ অভিযোগ নিয়ে আমাদের কাছে আসেন। ’

‘মামলা দায়েরের পর যেমন বাদীদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, আবার অনেক মামলার ক্ষেত্রে দেখা গেছে বারবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হচ্ছে। এসব মামলার তদন্ত ও ভবিষ্যৎ নিয়ে পুলিশ কতটুকু আশাবাদী’—প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হতেই পারে। দেখার বিষয় হচ্ছে যে নতুন তদন্ত করে কর্মকর্তা মামলাটা কতটুকু গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। আমাদের যারা তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা রয়েছেন তারা অবশ্যই এ বিষয়ে অবগত আছেন। এতে তদন্ত কাজ বিঘ্নিত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ’

‘এসব মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা আসলে থাকতে চাচ্ছেন কি না’—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে থাকা বা না থাকার বিষয় না, কারও ওপর যদি তদন্তভার ন্যস্ত হয় তাহলে সে চেষ্টা করবে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজটা করার। ’

‘পুলিশের রাত্রিকালীন টহল শুরু হয়েছে কি না? বিভিন্ন এলাকায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাসাবাড়ি দখল করে নিচ্ছে একশ্রেণির অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযান পুলিশ করবে কি না’—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের বেশ কিছু পুলিশি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। আমাদের এসব স্থাপনার সংস্কার কাজ পুরোদমে চলছে। আমরা এই মাসের মধ্যে কাজগুলি শেষ করতে পারবো। এর বাইরেও আমাদের বেশ কিছু যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই যানবাহনগুলোর বিকল্প আমরা খোঁজার চেষ্টা করছি। কীভাবে আমাদের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করা যায়। আমাদের টহল কার্যক্রম চলছে, থানার যারা সেবাপ্রত্যাশী আছেন তাদের সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো ধরনের ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ’

‘অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলবে কি না’—এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। ’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার মামলা তদন্তে পুলিশ এখন পর্যন্ত কতটুকু এগিয়েছে’—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আমাদের তদন্তের বিষয়েও আমরা কাজ করছি। আশা করি এই ঘটনার সঙ্গে অন্য যারা জড়িত, তাদের দ্রুত আমরা আইনের আওতায় আনতে পারব। ঘটনার প্রকৃত কারণ ও রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হব। ’

‘যে হলে তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, সেই হলের প্রভোস্টের কোনো গাফেলতি আছে কি না বা তাকে আইনের আওতায় আনা হবে কি ন ‘—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্তে যদি আরও কোনো ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

‘কাকরাইলে অডিট ভবনের সামনে পুলিশ সদস্যরা তাদের সিনিয়র অফিসারদের কমান্ড মানেননি, এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে কি না’—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে যে অবস্থা তৈরি হয়েছিল, এরপর কিন্তু আমরা পুলিশিংয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। আর এ বিষয়ে আমার আরও জানতে হবে। ’

‘৫ আগস্ট অনেক পুলিশ সদস্য মারা গিয়েছেন, এ বিষয়ে পুলিশ বাদী হয়ে কোনো মামলা করেছে কি না’—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ফৌজদারী মামলা কখনো তামাদি হয় না। যেহেতু এসব বিষয়ে প্রাথমিক কার্যক্রম চলছে সেহেতু কেউ ফৌজদারি অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

যাযাদি/এসএস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে