মনিরুলকে গুলি করে কাউসার শুনছিলেন ‘আমি তো মরে যাব, চলে যাব... রেখে যাব সবই’

প্রকাশ | ১২ জুন ২০২৪, ১১:০০ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪, ১১:১৬

যাযাদি ডেস্ক
কনস্টেবল মনিরুল হক-ফাইল ছবি

রাজধানীতে পুলিশের গুলিতে পুলিশ নিহত হবার ঘটনায় দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কারণ যাদের হাতে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য অস্ত্র দেয়া হয়েছে তারা যদি নিজেদের নিজেরা গুলি করে হত্যা করে কিংবা নিজেদের রক্ষা করতে না পারে তাহলে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।  গতকাল নেত্রকোনোয় আরও এক পুলিশ সদস্য আত্মহত্যা করে। 

এদিকে রাজধানীর গুলশানের বারিধারায় ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে কনস্টেবল মনিরুল হককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় রিমান্ডে মুখ খুলছেন না দায়ি কনস্টেবল কাওসার আলী। তাকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কিন্তু তিনি প্রতিবারই চুপ থাকছেন। বারবার তিনি শুধু একটা কথাই বলছেন কাজটি ঠিক করেননি।

এদিকে রাজধানীর গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবিএম মাজহারুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, কাওসার আলীকে জিজ্ঞাসাবাদে এখনো উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি। কোনো তথ্য পেলে পরে জানানো হবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা বসে কাওসার আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তাদের সব প্রশ্নই চুপ থেকে কাওসার আলী এড়িয়ে গেছেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বের জেরেই মনিরুলকে এলোপাতাড়ি গুলি চালান কাওসার। তিনি নিজেকে সিনিয়র দাবি করে ডিউটি কম করতে চাইতেন। নিয়ম অনুযায়ী একজন গার্ডরুমে বসেন এবং একজন বাইরে দাঁড়িয়ে ডিউটি করেন। কাওসার চাইতেন মনিরুল বেশি সময় বাইরে দাঁড়িয়ে ডিউটি করুক। আর তিনি গার্ডরুমে বসে ডিউটি করবেন। মনিরুল তা মেনে নিতে পারেননি। 

মনিরুল বলেছিলেন, আপনিও কনস্টেবল, আমিও কনস্টেবল। দুজনে সমানভাবে ডিউটি করব। এ কথায় কাওসার মনে করেন মনিরুল তাকে অসম্মান করেছে। এ নিয়ে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে কাওসার প্রথমে ডিউটি খাতা ছুড়ে মারেন মনিরুলের ওপর। এরপর শুরু করেন এলোপাতাড়ি গুলি। এতে ফুটপাতের পাশের রাস্তায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকে মনিরুলের নিথর দেহ। মৃতদেহ থেকে আনুমানিক ২০ গজ দূরে ফুটপাতে বসে কাওসার মোবাইল ফোনে গান শুনছিলেন, ‘আমি তো মরে যাব, চলে যাব....রেখে যাব সবই।’

এদিকে মনিরুল হক হত্যায় অভিযুক্ত কাওসার মানসিকভাবে অসুস্থ বলে মন্তব্য করেছেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, সহকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা কনস্টেবল কাওসার যে মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন, সেটি পুলিশ বিভাগ জানতো। চিকিৎসার পর একজন চিকিৎসক কাওসারের রোগমুক্তির সনদ দিলে তাকে দায়িত্বে ফেরানো হয়। 

মঙ্গলবার রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ অডিটোরিয়ামে হাইওয়ে পুলিশের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে আইজিপি বলেন, কাওসারের অসুস্থতার বিষয়টি আমরা জানতাম। একজন ডাক্তার তাকে সার্টিফিকেট দিলে তাকে ডিউটিতে নেওয়া হয়। এখন এ বিষয়গুলোয় আমাদের আরও সতর্কতার প্রয়োজন কি না, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।

যাযাদি/ এস