শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয়হীন ভিক্ষুকের দোয়া অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি
  ৩১ অক্টোবর ২০২০, ২০:৪০

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলায় পরিচয়হীন ভিক্ষুক আইয়ুব পাগলার মৃত্যুতে দোয়া কামনা করে হাজারো মানুষকে দাওয়াত করে খাওয়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পোস্টার ছাপিয়েছে স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছ পরিচিত আইয়ুব পাগলা। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাট-বাজার ও পথে-ঘাটে মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পেতে টাকা চাইতেন আইয়ুব। এসময় আইয়ুব বলতেন ‘একটা ট্যাকা দে, মুই ভাত খামো'। আইয়ুবকে যে যা দিতো তাতেই খুশি থাকতেন। তবে আইয়ুবের পরিচয় সম্পর্কে কিছুই জানতো না কেউ। কোথায় থেকে তিনি কিভাবে এলাকায় এসেছেন তাও জানা নেই কারো। কিন্তু হঠাৎ করে আইয়ুব গত ২০ সেপ্টোবর বিকেলে মারা যান। আইয়ুবের মৃত্যুর খবরে গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নের হাজারো মানুষ মর্মাহত হয়। পরে আইয়ুবকে উত্তরউল্ল্যা কেন্দ্রীয় গোরস্থানে দাফন করা হয়। আইয়ুবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কেউ কাফনের কাপড়, কেউ বাঁশ, কেউ আগরবাতি নিয়ে দাফনের জন্য এগিয়ে আসেন।

আইয়ুব সম্পর্কে সাঘাটার উল্ল্যাবাজার কলোনীর বাসিন্দা জিল্লুর রহমান বলেন, আইয়ুব পাগলা কারও ক্ষতি করতো না। ক্ষুধা লাগলে মানুষের কাছে খাবার চাইতো সবাই ওকে ভালোবাসতো। হঠাৎ মারা যাওয়ায় আমরা সবাই মর্মাহত।

এছাড়া আব্দুল মালেক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আইয়ুব পাগলাকে এতো মানুষ ভালোবাসতো কেউ বুঝতে পারেনি। তার মৃত্যুর পর এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে তার পাশে দাঁড়িয়েছে।

উল্লাবাজারের অপর বাসিন্দা কাফিল উদ্দিন বলেন, আইয়ুব পাগলার মজলিসে এসে আমরা অবাক। একজন পাগল ভিক্ষুক এতোটা জনপ্রিয় হয় আগে জানতাম না।

এদিকে, আইয়ুব এর মৃত্যুর পর মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে শোকবার্তার ব্যানার-পোস্টার বিভিন্ন স্থানে লাগানোর পাশাপাশি মানুষের ফেসবুকেও জায়গা করে নিয়েছে এই আইয়ুব পাগলা। আইয়ুব পাগলার জানাজার পর তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানের জন্য মজলিস করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের অর্থায়নে ৪০ দিন পরে (৩০ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে সাঘাটার ঐতিহ্যবাহী ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক পরিসরে ‘আইয়ুব-এর মজলিস’ সম্পন্ন হয়। মুসলিমদের পাশাপাশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনও ওই মজলিসে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে মুসলমাদের জন্য তিনটি গরু ও একটি খাসি এবং হিন্দুদের জন্য দুটি খাসি আলাদা রান্না করা হয়েছিল। এই মজলিসের উদ্ধোধন করেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে