সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই নিজের পছন্দের সঙ্গীকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন প্রতীতি জয়িতা জামিল। বিয়ে নিয়ে একদিকে যেমন উচ্ছ্বাস কাজ করছে, তেমনি কিছু উদ্বেগও আছে তার মধ্যে।
“আমার নিয়মিত যে লাইফস্টাইল ছিল, সেখান থেকে একটু আলাদা লাইফস্টাইলে ঢুকতে হবে। তাছাড়া প্রতিদিনই পরিবারের বলছে, ‘বাসায় যা করো, ওইখানে করবে না’- এই যে বাইন্ডিংসগুলা, এগুলাতে একটু টেনশন থাকেই”, বলেন তিনি।
কেবল মিজ জয়িতা জামিলই না, বিয়ের আগ দিয়ে এমন সংশয়, উদ্বেগ কিংবা চাপ বোধ করেন প্রায় সবাই। আর এই বিষয়টিকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘কোল্ড ফিট’ বা ‘পা ঠান্ডা হয়ে আসা’।
‘কোল্ড ফিট’ কী?
‘কোল্ড ফিট’ মূলত একটি টার্ম, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সঙ্গীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হবার আগে অনিশ্চিয়তার অনুভূতিকে বোঝায়। মূলত প্রতীকী অর্থে এই টার্মটির ব্যবহার হয়ে থাকে।
সাইকোলজিস্ট হাসিবুল আজিম আকাশ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “কোল্ড ফিট তখনই হয়, যখন কোনো অজানা বিষয় নিয়ে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে”।
বিয়ের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি অনেক বেশি কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি পারবো কি না, আমার সাথে এমনটা হবে কিনা এমন চিন্তা থেকেই ভয়টা কাজ করে”।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক ক্লিনিক্যাল সাইকোলিজিস্ট জোসেলিন চার্নার্সের মতে, বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর মানুষ যে ভয়, সংশয় আর দুশ্চিন্তা কাজ করে তার একটি ‘আমব্রেলা টার্ম’ কোল্ড ফিট।
কোল্ড ফিট হলে সম্পর্কে দুইজন কতটা মানানসই হবে কিংবা সম্পর্কটির স্থায়িত্ব কতদিন হবে এমন সব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ কাজ করতে পারে।
মতবিরোধ, জীবনের ভিন্ন লক্ষ্য বা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আলাদা প্রত্যাশা নিয়ে উদ্বেগের মতো বিষয়গুলোও সিদ্ধান্তের ওপর অনিশ্চয়তার ছায়া ফেলতে পারে।
জার্নাল অফ ফ্যামিলি সাইকোলজিতে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়ের সাথে সাথে দাম্পত্য জীবনের সন্তুষ্টি কমতে থাকার সঙ্গে বিয়ের আগে থেকে থাকা সন্দেহের একটি সম্পর্ক রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই ধরনের সংশয় থাকা স্বাভাবিক হলেও এটি হয়তো সবসময় এড়িয়ে যাওয়ারও উপায় নেই।
কোল্ড ফিটের লক্ষণগুলো কী?
বিয়ের প্রস্তুতিসহ সব কিছু মিলিয়ে কখনও কখনও “প্রথম যে বিষয়টা আসে সেটা হলো বিয়ে করবো না”, বলছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মঞ্জুরুল ইকরাম।
এটি কোল্ড ফিটেরই একটি লক্ষণ। বিয়ের আগে কেউ কোল্ড ফিটে ভুগছেন কিনা তা বোঝার জন্য এমন আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে:
যেমন, ব্যক্তির তীব্র সংশয়ের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া।
অনেক সময় বিয়ের আগে ব্যক্তি নিজের এবং সঙ্গী- দুইজনের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয়ে ভোগেন, যে যাকে পছন্দ করেছেন সে মানুষটা তার জন্যে ঠিক কিনা কিংবা বিয়ের জন্য সময়টা সঠিক কিনা।
এমনকি বিয়েই করতে চাচ্ছেন কিনা – এমন অনুভূতিও কাজ করে। এছাড়াও সারা জীবনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবার বিষয়টি নিয়েও এক ধরনের সংশয়ও কাজ করে। কখনও কখনও বিয়ে ভাঙার মতো চিন্তাও মাথায় খেলা করে।
তবে সবার ক্ষেত্রে বিষয়গুলো যে খুব প্রকাশ্যে আসে, তেমনও না। অনেকের ক্ষেত্রে বিয়ের পরিকল্পনা ঘিরে তীব্র উদ্বেগে কাজ করে, কিন্তু সে নিজেই বুঝতে পারে না যে এটি ঘটছে কোল্ড ফিটের কারণে।
যেমন, বিয়েতে কোন রঙের পোশাক পরবেন কিংবা হানিমুনে কোথায় যাবেন – তা নিয়ে চিন্তা করতে করতে কেউ যদি কান্নায় ভেঙে পড়ে তবে তা হয়তো সব বিষয় নিয়ে তার আরও নিখুঁত হতে চাওয়ার কারণে না, বরং বিয়ে নিয়ে ভয়ের কারণেই হচ্ছে।
আর সবশেষে সঙ্গীর সঙ্গে অনবরত ঝগড়া হতে পারে এবং অন্যান্য ব্যবহারগত পরিবর্তনও আসতে পারে।
“স্ট্রেস বেসিক্যালি আমাদের দুজনকে নিয়েই, অন্য কিছু না। টেম্পার লুজ করার বিষয়টা ঘটছে, আগের চেয়ে একটু বেশি ফ্রিকুয়েন্ট এখন”, বলছিলেন মি. ইকরাম।
তার মতোই অনেকে বিয়ের আগে সঙ্গীর সঙ্গে বারবার মনোমালিন্যে জড়ান। বিয়ের আগে এই বিষয়গুলো একটু বেশিই ঘটে, কারণ কোল্ড ফিট।
সূত্র: বিবিসি
যাযাদি/ িএম