বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

নারকেলের গায়ে মানুষের মুখাবয়ব খোদাই, আসল ঘটনা কী?

যাযাদি ডেস্ক
  ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১৬:৪৫
ছবি: সংগৃহীত

আমাদের চারপাশে লুকিয়ে আছে নানা রহস্য। কোনো কোনো রহস্যকে অনেক জটিল মনে হয়। আবার কোনো কোনো রহস্য এতটাই সরল যে, সেটি আমাদের চোখেই পড়ে না। যেমন এই নারকেলের কথাই ধরা যাক। ভাবছেন, নারকেলের আবার কীসের রহস্য?

চলুন, জেনে নেয়া যাক.................

নারকেল খুবই জনপ্রিয় একটি ফল। বিশেষ করে এশিয়া মহাদেশ এবং সমুদ্র উপকূল কিংবা দ্বীপগুলোতে নারকেল গাছ দেখা যায় সবচেয়ে বেশি। নারকেল গাছ এমন একটি গাছ, যার প্রায় প্রতিটি অংশই ব্যবহারযোগ্য। কচি নারকেল অর্থাৎ, ডাবের পানি অত্যন্ত সুস্বাদু এবং তৃষ্ণা নিবারণকারী পানীয়।

পরিপক্ব নারকেলের ভেতরে থাকা মাংসল অংশ বা শাঁস খাবার হিসেবে ব্যবহার হয়। এ শাঁস থেকে পাওয়া রসকে বলা হয় নারকেলের দুধ, যা রান্নায় ব্যবহৃত হয়। শাঁস শুকিয়ে তা থেকে তৈরি করা হয় নারকেল তেল। নারকেলের তেল সুপ্রাচীনকাল থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে।

এরপর আসে নারকেলের শক্ত খোলস। এরও ব্যবহার আছে নানাবিধ। প্লাস্টিকের বোতাম তৈরির আগে নারকেলের এই খোলস থেকেই বোতাম তৈরি করা হতো। এছাড়া গ্রামাঞ্চলে এর খোলস দিয়ে তৈরি করা হয় রান্নার উপকরণ।

নারকেলের তো অনেক ‘প্রশংসা’ করা হলো। এবার মূল আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক।

নারকেল সকলের কাছে সুপরিচিত এবং প্রায় প্রত্যেকে নারকেলের শক্ত খোলসের সাথে পরিচিত। প্রতিবার নারকেলের এই খোলস দেখার সময় এর একপাশে তিনটি ডট বা খানিকটা গোলাকার চিহ্ন দেখা যায়। ব্যাপারটা অনেকেই দেখেছেন। তিনটির কমও নয়, আবার বেশিও নয়। মজার ব্যাপার হলো, এই তিনটি ডট দেখে মনে হয় কোনো দুঃখী মানুষের মুখের চিহ্ন।

কখনো কি মনে প্রশ্ন জাগেনি যে, নারকেলের গায়ে মানবমুখের আদলে তিনটি চিহ্নের সৃষ্টি হলো কেন বা কীভাবে? নারকেলের এই তিনটি চিহ্ন নিয়ে প্রচলিত কয়েকটি উপকথা।

নারকেলের মানবমুখের অবয়বের ক্ষেত্রে প্রসিদ্ধ একটি উপকথা পাওয়া মানাহিকি দ্বীপের কিংবদন্তীতে। কুক দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত এ অঞ্চলের অধিবাসীদের বলা হত মাওরি এবং এদের শরীরের বর্ণ ছিল তামাটে। তো মানাহিকি কিংবা মাওরি কিংবদন্তিতে নারকেলের উৎপত্তি বিষয়ক এক করুণ কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে।

হিনা সাধারণত সন্ধ্যায় স্নানের উদ্দেশ্যে যেত হ্রদে। কোনো এক সন্ধ্যায় স্নানকালে সে হ্রদের পানিতে দেখা পায় টুনা নামক এক সুদর্শন যুবকের। চোখে চোখে তাদের মধ্যে ভালোবাসার বিনিময় হয়ে যায়। নিস্তব্ধ সন্ধ্যায় সমুদ্রের মাতাল হাওয়া আর স্রোতের মনোরম পরিবেশে তাদের মধ্যে মনের দেয়া-নেয়া হয়ে যায়। তারা একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়।

সেদিন মাউই টুনার শিরশ্ছেদ করে। টুনার কথামতো হিনা তার মাথা নিয়ে পুঁতে রাখে এবং চোখের জলে সিক্ত করে। সেখানে জন্ম হয় নারকেল গাছের। আর প্রতিটি নারকেলে থেকে যায় টুনার দুঃখী মুখের অবয়ব এবং ছোবড়ার আকারে চুল। মাওরিদের বিশ্বাস, এভাবেই নারকেল এবং এর চোখ-মুখের সৃষ্টি হয়।

বৈজ্ঞানিকভাবে নারকেলের তিনটি বিশেষ চিহ্নের কোনো সঠিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কেবল হাইপোথিসিসের উপর নির্ভর করতে হবে আমাদের। তবে এখানেও দুটি মতবাদ আছে। একটি বিবর্তনকে নির্দেশ করে, অপর মতবাদটি নারকেলের ফুলের গর্ভপত্রের উপর ভিত্তি করে দেয়া হয়েছে।

নারকেলকে পাম গোত্রের সহোদর বলা চলে। বিবর্তনিক বা অভিব্যক্তিক মতবাদ অনুসারে, কোনো এক সময় নিষেকজনিত কারণে তিনটি পাম ফল একটি খোলসের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে যায়। বিষয়টা মানুষ কিংবা অন্যান্য প্রাণীর জোড়া সন্তান জন্মদানের মতো। এই তিনটি পাম ফলের তিনটি চিহ্নই একসাথে থেকে যায় এবং নারকেলের জন্ম হয়। কিন্তু এই মতবাদের দ্বারা এটি জানা যায় না যে, কেন দুটি চিহ্ন সংকীর্ণ এবং একটি চিহ্ন পরিপূর্ণ হয়েছে।

অপর মতবাদ অনুসারে, নারকেলের তিনটি চিহ্নের জন্য দায়ী এর ফুলের তিনটি গর্ভপত্র। নারকেলের এই তিনটি চিহ্ন আসলে নিষেক ছিদ্র। কিন্তু এই তিনটি ছিদ্রে মধ্যে কেবল একটি ছিদ্রই নিষেকযোগ্য এবং বাকি দুটি বন্ধ্যা। ফলে একটি ছিদ্র দিয়ে নিষেক হয় এবং এটি সম্পূর্ণ গোলাকার ছিদ্র হিসেবে দেখা যায়। বাকি দুটিতে নিষেক না হওয়ার দরুন সংকীর্ণ হয়ে যায়।

সাধারণ অনেক জিনিসের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে নানা রহস্য। নারকেল এবং এর তিনটি চিহ্ন প্রায় সকলেই দেখেছেন, কিন্তু কেন এগুলো সৃষ্টি হয়েছে বা কীভাবে হয়েছে, হয়তো জানতেন না অনেকেই। অথবা জানতেন না নারকেলের এই তিন ছিদ্র নিয়ে রয়েছে নানা উপকথাও। সত্যিই, পৃথিবী রহস্যময়!

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে