বোবায় ধরা কী, কেন হয়
প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ২০:৪৮
বোবায় ধরা (ইংরেজি: sleep paralysis) হচ্ছে এমন একটি অবস্থা যখন একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুম থেকে জেগে উঠার সময়ে শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যংগ নাড়াতে না পারার একটি অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যায়। অন্যভাবে, যখন কাউকে বোবায় ধরে, তখন সে তার শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গ নাড়াতে পারে না, অসাড়তা অনুভব করে।
চিকিৎসাশাস্ত্রের ভাষায় এই সমস্যাকে বলা হয় স্লিপ প্যারালাইসিস, বা ঘুমের মধ্যে পক্ষাঘাত। স্লিপ প্যারালাইসিস হলে একজন ব্যক্তি কিছু সময়ের জন্য কথা বলা বা নাড়াচাড়া করার শক্তি হারিয়ে ফেলেন।
এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে এক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তবে ওই সময়টায় রোগী ভীষণ ঘাবড়ে যান, ভয় পেয়ে যান।
ঘুমের দুটি ধাপ আছে—র্যাপিড আই মুভমেন্ট বা রেম এবং নন-রেম। রেম ঘুমের পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্কে স্বপ্ন দেখা শুরু হয় এবং এ সময় শরীরের পেশিগুলো কিছুটা নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। অনেকটা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীর মতো অসাড় হয়ে যায় হাত-পাসহ গোটা শরীর।
স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস হল গভীর ঘুম ও জাগরণের মাঝামাঝি একটি স্নায়ুজনিত সমস্যা। ঘুমের ওই পর্যায়টিকে বলা হয় র্যাপিড আই মুভমেন্ট-রেম। রেম হল ঘুমের এমন একটি পর্যায় যখন মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে এবং এই পর্যায়ে মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে।
কিন্তু সে সময় শরীরের আর কোন পেশী কোন কাজ করেনা। এ কারণে এসময় মস্তিষ্ক সচল থাকলেও শরীরকে অসাড় মনে হয়।
স্লিপ প্যারালাইসিস হওয়ার পেছনে কিছু কারণকে চিহ্নিত .........
- পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব বা ছেড়ে ছেড়ে ঘুম হওয়া। অসময়ে ঘুমানো। অনেক সময় কাজের সময় নির্দিষ্ট না হলে, অথবা দূরে কোথাও ভ্রমনে গেলে এমন ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
- মাদকাসক্ত হলে অথবা নিয়মিত ধূমপান ও মদপান করলে।
- পরিবারে কারও স্লিপ প্যারালাইসিস হয়ে থাকলে।
- সোশ্যাল অ্যাঙ্কজা
এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা সাধারণ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন.......
- রাতে অন্তত ৬ ঘণ্টা থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করা। এবং সেই ঘুম যেন গভীর হয়।
- প্রতিদিন রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার অভ্যাস করা। এমনকি ছুটির দিনগুলোতেও।
- ঘুমের জন্য শোবার ঘরটিতে আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। যেন সেই ঘরে কোলাহল না থাকে, ঘরটি অন্ধকার থাকে এবং তাপমাত্রা সহনীয় মাত্রায় থাকে, খুব বেশি না আবার কমও না। সম্ভব হলে ঘরে ল্যাভেন্ডারের সুগন্ধি ছিটিয়ে দেয়া যেতে পারে।
- ঘুমাতে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ভারী খাবার সেইসঙ্গে ধূমপান, মদ পান এবং ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা-কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত চার ঘণ্টা আগে ব্যায়াম করার চেষ্টা করা।
- ঘুমের সময় হাতের কাছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ অর্থাৎ ঘুমের বাঁধা হতে পারে এমন কোন বস্তু রাখা যাবেনা।
- দিনের বেলা দীর্ঘসময় ঘুম থেকে বিরত থাকতে হবে।
- স্লিপ প্যারালাইসিস হলে নিজের মনকে প্রবোধ দিতে হবে যে ভয়ের কিছু নেই, এই পরিস্থিতি সাময়িক, কিছুক্ষণ পর এমনই সব ঠিক হয়ে যাবে। এই সময়ে শরীর নাড়াচাড়া করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।