ভুয়া কার্যাদেশে কোটি টাকা আত্মসাৎ, মূলহোতা গ্রেফতার

প্রকাশ | ০৮ জুলাই ২০২৪, ১৯:৩০ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪, ২০:০৮

শাহাদত হোসেন, বিশেষ প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্নসাৎ করা প্রতারকদের আরেক কৌশল।  কৌশলটি নতুন না হলেও এর ফাঁদে পড়েছে অনেক ভুক্তভোগী। আর সেই কৌশলটি কাজে লাগিয়ে   দিনের পর দিন প্রতারণা করে আসছিলেন প্রতারক সারোয়ার হাসান।

অবশেষে আত্মসাৎ মামলায় প্রতারক সারোয়ার হাসানকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিআইডি একটি দল অভিযান চালিয়ে মহাখালী থেকে তাকে গ্রেফতার করে।  বর্তমানে এ প্রতারকের বিরুদ্ধে  ৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। 

প্রথমে প্রতারক  সারোয়ার হাসান ভুয়া কার্যাদেশ তৈরী করে পণ্য সরবরাহকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।  ভুক্তভোগী ফাঁদে পা দিলে কাজের চুক্তি করতে নিয়ে আসার হতো নামীদামি রেস্টুরেন্টে। এরপর শত পদের খাবারে করা হতো আপ্যায়ন। পরে বিভিন্ন কৌশলে কাজের চুক্তির নামে সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে  নেয়া হত।  

সিআইডি সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, আসামী সারোয়ার হাসান প্রতারণামূলকভাবে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সেনা কল্যাণ সংস্থার ভুয়া ক্রয়াদেশ ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র সৃজন করে জহুরা অটোরাইস মিলস এর স্বত্বাধিকারী মোঃ আব্দুল হান্নানকে ২৪০০ টন চাল উৎপাদনের নির্দেশ প্রদান করে। 

উক্ত সৃজনকৃত ক্রয়াদেশ মোতাবেক গত ১৩/০৯/২০২১ হতে ০৪/১০/২০২১ পর্যন্ত মোঃ আব্দুল হান্নান এর নিকট থেকে চাল গ্রহণ করে আসামী সারোয়ার হাসান সেনা কল্যাণ সংস্থার লোগো সম্বলিত ব্যাগে সেনা কল্যাণ ট্রাস্ট এর ব্যানারে ভাড়াকৃত গাড়ীতে ২৪০০ টন চাল যার মূল্য অনুমান ১২,৩৩,৬৮,০০০/- টাকা  গ্রহণ করে। পরবর্তীতে উক্ত চাল সেনা কল্যাণ সংস্থায় সরবরাহ না করে আসামী মোঃ আব্দুর রশিদ এর স্বত্তাধীকারী প্রতিষ্ঠান “নুহা অটোরাইস মিলস” এবং ”মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সি” এর গুদামে সংরক্ষণ করে। আসামী আব্দুর রশিদ উক্ত চাল নিজের প্রতিষ্ঠান ”মেসার্স রশিদ রাইস এজেন্সি” এবং আসামী মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ”মেসার্স সালাম অটো রাইস মিল” এর মাধ্যমে ব্যাগ ও লোগো পরিবর্তন করে নিজেদের কোম্পানীর ব্যাগে বাজারজাত করে।  

মোঃ আব্দুল হান্নান বিষয়টি জানতে পেরে চালের খোঁজ নিয়ে আসামী মোঃ আঃ রশিদ এর স্বত্তাধিকারী নুহা অটো রাইস মিলের গোডাউন হতে ১৫,৪৭৫ বস্তা চাল এবং কুষ্টিয়ার সালাম অটো রাইস মিল হতে ৬৫০০ বস্তা চালসহ মোট ২১,৯৭৫ বস্তা চাল স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করতে পারলেও অবশিষ্ট ২২,০৮৫ বস্তা চাল বর্ণিত আসামীরা পরষ্পর যোগসাজসে প্রতারণামূলকভাবে বাজারে বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ ৪,৩৬,২৮,০০০/- টাকা আত্মসাৎ করে। 

উক্ত টাকা ফেরৎ প্রদানের জন্য আসামীরা মোঃ আব্দুল হান্নান এর সাথে চুক্তিপত্র সম্পাদন করে এবং উক্ত টাকার বিপরীতে আসামী সারোয়ার হাসান তার প্রতিষ্ঠান ”টোবেক্স গ্রæপ” নামীয় হিসাব নম্বরে ৪ কোটি টাকা উল্লেখ করে আব্দুল হান্নান এর প্রতিষ্ঠান ”মেসার্স জহুরা অটোরাইস মিলস” এর নামে ০৩টি চেক প্রদান করেন। পরবর্তীতে আব্দুল হান্নান উক্ত চেকগুলি নগদায়নের জন্য ব্যাংকে উপস্থাপন করলে উক্ত হিসাব নম্বরে পর্যাপ্ত তহবিল না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চেকগুলি ডিজঅনার করেন। আসামীরা উক্ত টাকা ফেরৎ না দিয়ে পরিবর্তন, রুপান্তর ও হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং এর অপরাধ করেছে। উক্ত আসামী একজন পেশাদার প্রতারক। 

তার প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের কারণে ব্যবসায়ী মহল ও সাধারণ মানুষ ব্যবসা বাণিজ্যের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে এবং বর্তমান অর্থ ব্যবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এছাড়াও উক্ত আসামী কোন লিমিটেড কোম্পানীর এমডি না হওয়া সত্বেও গ্রুপ অব লিঃ কোম্পানীর এমডি হিসেবে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃত আসামী বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে।

যাযাদি/ এম