বৃহস্পতিবার, ০৪ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় অমানবিক নির্যাতন, মূল হোতা গ্রেফতার

যাযাদি ডেস্ক
  ০১ জুলাই ২০২৪, ২২:০১
ছবি-যায়যায়দিন

একটু ভালো জীবনযাপনের আশায়, পরিবারের সদস্যদের সুখে রাখতে ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ থেকে জীবিকার সন্ধানে পৃথিবীর উন্নত দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এদেশের বহু মানুষ। একটা সুন্দর জীবনের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানো এ সকল মানুষের অনেকেই মানব পাচারকারী দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে হয়েছে সর্বসান্ত ও নিঃস্ব।

এ সব দালাল চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য সিআইডি প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডি প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মোহাম্মদ আলী মিয়া বিপিএম, পিপিএম এর নির্দেশনায় গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় সিআইডির সফল অভিযানে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় আটকে অমানবিক নির্যাতন করে দেশের স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের প্রধান মোহাম্মদ মাহাবুব পাঠানকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে আটক করা হয়। মাহাবুব পাঠান দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে লিবিয়ার বেনগাজীর বাংলাদেশী কমিউনিটিকে নেতৃত্ব প্রদানের আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করছিলো।

চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আটক করত। এরপর তাদের আটক রেখে শারিরীক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে প্রেরণ করে মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপদজনক নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত।

গত ১৭ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব পাঠানের চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ সর্বমোট ১০৪ জন অভিবাসী ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন।

পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এর সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা এসব বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী মিলন বেপারী(২৩), পিং- সিরাজ বেপারী, গ্রাম- পাচক, থানা- নড়িয়া, জেলা- শরীয়তপুর মানবপাচারকারী চক্রটির বিরুদ্ধে নড়িয়া থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা হয়।

সিআইডির তদন্তে জানা যায়, চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভিকটিমদেরকে এমিরেটস বিমানে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর দুবাই হতে বিমানযোগে মিশর হয়ে লিবিয়ার বেনগাজী নিয়ে যায়। লিবিয়ার বেনগাজীতে মূলহোতা মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগিরা মাহাবুব পাঠান এর ক্যাম্পে তাদেরকে আটক রাখে এবং শারিরীক নির্যাতন করে। পরবর্তীতে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়।

গত ২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি বেগম আসামীদের দেওয়া ব্যাংক একাউন্ট দুই লক্ষ নিরানব্বই হাজার আটশত বিশ টাকা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে অবস্থান রত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ চার লক্ষ টাকা প্রদান করে। এরপর আসামী মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগিরা সুকৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমদের ইতালীতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলীতে এই চক্রের সক্রিয় সদস্য মনির এর ক্যাম্পে প্রেরণ করে, সেখানে বাদী ও ভিকটিমদের নিয়ে আটক করে দ্বিতীয় দফায় শারিরীক নির্যাতন করে টাকা দাবী করে।

এরপর গত ১২ মে ২০২১ বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি পুনরায় হেনা বেগম এর নিকট নগদ চার লক্ষ টাকা প্রদান করেন। এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে মিলন বেপারীর পরিবার মোট ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করেন। ১৫ দিন সেখানে আটকে নির্যাতন করে টাকা আদায়ের পর ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভাসা একটি প্লাস্টিক নৌকায় আরো কয়েকজনের সঙ্গে মিলনকে তুলে দেয়া হয়।

উক্ত অভিযুক্ত মোহাম্মদ মাহবুব পাঠান বিজ্ঞ আদালতে ফৌ: কা: বি: ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। মানব পাচারকারীদের দমন ও ভিকটিমদের রক্ষা করতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান।

এছাড়া সাধারণ মানুষকে এই ধরনের চক্র সম্পর্কে সচেতন থাকতে এবং কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে তাৎক্ষণিকভাবে সিআইডিকে জানাতে অনুরোধ করেছেন তিনি।

যাযাদি/ এম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে