পবিত্র রমজান মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি তাদের চ্যালেঞ্জিং পেশার ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।
প্রথম সারির চিকিৎসক ডা. করিশ্মা ওয়াহাবের মতে এই মাসটি প্রায়শই চলার পথে ইফতার সেরে নেয়া এবং একইসঙ্গে জীবন-মরণ পরিস্থিতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
পবিত্র রমজান মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি তাদের চ্যালেঞ্জিং পেশার ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। প্রথম সারির চিকিৎসক ডা. করিশ্মা ওয়াহাবের মতে এই মাসটি প্রায়শই চলার পথে ইফতার সেরে নেয়া এবং একইসঙ্গে জীবন-মরণ পরিস্থিতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ডা. করিশ্মার অন্যতম স্মরণীয় ইফতার ছিল সেদিন, যেদিন তিনি শারজাহর অ্যাস্টার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং রাত ১১টায় রোজা ভাঙেন।
ঠিক ইফতারের আগমুহূর্তে, জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে দুই সন্তানের এক মা জরুরি বিভাগে ভর্তি হন।
‘রোগীটিকে ইফতারের ঠিক আগে হাসপাতালে আনা হয়। তার জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ (একটপিক প্রেগনেন্সি) হয়েছিল এবং তা ফেটে গিয়েছিল,’তিনি স্মরণ করেন। ‘আমরা দ্রুত তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা তার জীবন বাঁচাতে সক্ষম হই। আমি সেদিন রাত ১১টায় ইফতার করেছিলাম, কিন্তু একজন মা এবং একটি পরিবারকে রক্ষা করতে পারার আনন্দ সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল।’ খবর গালফ নিউজের।
জরুরি পরিস্থিতি ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য জরুরি অবস্থা সামাল দেয়া একটি দৈনন্দিন ব্যাপার, যার ফলে সময় মতো ইফতার খাওয়া অনেক সময় সম্ভবপর হয় না।
দুবাইয়ে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জারি রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ এলহাসান ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে তিনি গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অপারেশন থিয়েটারে কাটিয়েছেন।
‘কখনও কখনও জটিল অস্ত্রোপচার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে। আবার কখনও জরুরি কেস চলে আসে,’ তিনি বলেন। ’এই রমজানে এক বৃদ্ধা পড়ে যান এবং তার নিতম্ব ভেঙে যায়। আমরা বিকেল ৫টায় অপারেশন শুরু করি এবং শেষ করতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বেজে যায়।’
‘আমার দায়িত্ব হলো অপারেশন থিয়েটারে শেষ সেলাই সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত, ব্যান্ডেজ লাগানো পর্যন্ত এবং রোগীকে সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা,’ তিনি যোগ করেন।
রাত ১০-১১টায় ইফতার করতে বাধ্য হন ডা. করিশ্মা ওয়াহাব, ডা. এলহাসান (মাঝে) এবং নার্স কারিনা সুরিবেন।ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র রমজান মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের স্বাস্থ্যকর্মীরা ধর্মীয় বিধিবিধান পালনের পাশাপাশি তাদের চ্যালেঞ্জিং পেশার ভারসাম্য রক্ষা করতে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। প্রথম সারির চিকিৎসক ডা. করিশ্মা ওয়াহাবের মতে এই মাসটি প্রায়শই চলার পথে ইফতার সেরে নেয়া এবং একইসঙ্গে জীবন-মরণ পরিস্থিতি সামলানোর চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়।
ডা. করিশ্মার অন্যতম স্মরণীয় ইফতার ছিল সেদিন, যেদিন তিনি শারজাহর অ্যাস্টার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন এবং রাত ১১টায় রোজা ভাঙেন। ঠিক ইফতারের আগমুহূর্তে, জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে দুই সন্তানের এক মা জরুরি বিভাগে ভর্তি হন।
‘রোগীটিকে ইফতারের ঠিক আগে হাসপাতালে আনা হয়। তার জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ (একটপিক প্রেগনেন্সি) হয়েছিল এবং তা ফেটে গিয়েছিল,’তিনি স্মরণ করেন। ‘আমরা দ্রুত তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাই এবং সফলভাবে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করি। সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আমরা তার জীবন বাঁচাতে সক্ষম হই। আমি সেদিন রাত ১১টায় ইফতার করেছিলাম, কিন্তু একজন মা এবং একটি পরিবারকে রক্ষা করতে পারার আনন্দ সবকিছুর ঊর্ধ্বে ছিল।’ খবর গালফ নিউজের।
জরুরি পরিস্থিতি ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জ: স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য জরুরি অবস্থা সামাল দেয়া একটি দৈনন্দিন ব্যাপার, যার ফলে সময় মতো ইফতার খাওয়া অনেক সময় সম্ভবপর হয় না। দুবাইয়ে অর্থোপেডিক ও ট্রমা সার্জারি রেসিডেন্ট ডা. মোহাম্মদ এলহাসান ব্যাখ্যা করেন, কীভাবে তিনি গত সপ্তাহে টানা তিন দিন অপারেশন থিয়েটারে কাটিয়েছেন।
আরও পড়ুন : লাস ভেগাসের ঝলমলে আলোর নিচে হাজারো মানুষের মানবেতর জীবন, নেপথ্যে কী
‘কখনও কখনও জটিল অস্ত্রোপচার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় ধরে চলে। আবার কখনও জরুরি কেস চলে আসে,’ তিনি বলেন। ’এই রমজানে এক বৃদ্ধা পড়ে যান এবং তার নিতম্ব ভেঙে যায়। আমরা বিকেল ৫টায় অপারেশন শুরু করি এবং শেষ করতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা বেজে যায়।’ যেহেতু অস্ত্রোপচার জটিল ছিল তাই ডা. এলহাসানকে সার্জন চলে যাওয়ার পরও অপারেশন থিয়েটারে থাকতে হয়েছিল। ’আমার দায়িত্ব হলো অপারেশন থিয়েটারে শেষ সেলাই সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত, ব্যান্ডেজ লাগানো পর্যন্ত এবং রোগীকে সম্পূর্ণভাবে স্থিতিশীল করা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা,’ তিনি যোগ করেন।
‘আমি অবশেষে রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হই। দ্রুত এক ঢোক পানি পান করে রোজা ভাঙি, কারণ তখন অন্য কিছু খাওয়ার সুযোগ ছিল না,’ তিনি যোগ করেন।
এরপর রোগীর স্থিতিশীল অবস্থা নিশ্চিত করে তিনি হাসপাতাল ছাড়েন এবং বাসায় ফেরার পথে রাত ১০টায় একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে ইফতার খেয়ে নেন।
রোগীর সেবাকে অগ্রাধিকার: আমিরাতের নার্স রাহাফ আহমেদ আলদাহমানি, যিনি মেডকেয়ার হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন, তার জন্য রমজানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো শিফটের মধ্যে খাওয়ার সময় বের করা। ’আমি সব সময় সঠিকভাবে বিরতি নিতে পারি না, ফলে অনেক সময় তাড়াহুড়ো করে খেতে হয় এবং তা থেকে অস্বাস্থ্যকর খাবারের অভ্যাস তৈরি হয়,’ তিনি বলেন। ’পানি কম খাওয়ার ফলে ডিহাইড্রেশনও একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয় এই রমজানে, কারণ জরুরি সেবার মাঝে কখনো কখনো পানি পান করতেও ভুলে যাই। পাশাপাশি, রোগীদের প্রাপ্য সেবা থেকে নিজের খাওয়ার সময় বের করে নেয়ার মধ্যে এক ধরনের অপরাধবোধও কাজ করে।’
তবে এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও রাহাফ সর্বোচ্চ যত্ন দিয়ে রোগীদের সেবা দিতে অঙ্গীকারবদ্ধ। ’একবার এক রোগী নিয়মিত চেকআপের জন্য আসেন। পরীক্ষা করার সময় আমি তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু লক্ষণ লক্ষ্য করি, যা প্রথমে রোজার কারণে স্বাভাবিক মনে হলেও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের পর বুঝতে পারি এটি একটি গুরুতর অবস্থা, যা বিলম্ব করলে প্রাণঘাতী হতে পারত।’
তার শিফটের পর, রাহাফ পানি পান করে এবং সুষম সেহরির দিকে মনোযোগ দেন। ’আমি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিই, নামাজ পড়ি, যা আমাকে মানসিকভাবে প্রশান্ত রাখে,' তিনি বলেন। 'আমার মেয়ের সঙ্গে ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো আমাকে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা পরের দিনের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নিতে সহায়ক।’
ভারসাম্য বজায় রাখা : আবুধাবির মেডিওর হাসপাতালের শিশু বিভাগের নার্স কারিনা সুরিবেন মনে করেন, রমজানে ভারসাম্য বজায় রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’যখন কোনো রোগীর উচ্চমাত্রার জ্বর বা অক্সিজেনের মাত্রা কমে যায় এবং চিকিৎসক জরুরি কক্ষে স্থানান্তরের নির্দেশ দেন, তখন আমাদের জন্য রোগীর সেবাকেই অগ্রাধিকার দিতে হয়, এমনকি ইফতারের সময় হলেও,’ তিনি বলেন।
কারিনা বিভিন্ন ধরনের জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। ’রোজা রাখা একজন রোগী রক্ত পরীক্ষার পর জটিলতায় পড়েছেন, কেউ উচ্চ জ্বরের কারণে খিঁচুনিতে আক্রান্ত হন, কেউ উচ্চ রক্তচাপ বা হার্ট অ্যাটাকের কারণে সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছেন, এমনকি রোজা রাখা একজন গর্ভবতী নারীও এসেছেন—আমি অনেক কিছু দেখেছি।’
‘এই ধরনের পরিস্থিতিতে দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাদের অন্যান্য সব কিছু একপাশে সরিয়ে রেখে সম্পূর্ণ মনোযোগ রোগীর যত্নে নিবদ্ধ করতে বাধ্য করে,’ তিনি বলেন।