বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

যে কারণে হজে মারা যাওয়া হাজীদের লাশ দেশে পাঠানো হয় না

যাযাদি ডেস্ক
  ২০ জুন ২০২৪, ১২:০৬
আপডেট  : ২০ জুন ২০২৪, ১২:৪০
-ফাইল ছবি

বিশ্বের যে কোনো দেশের হাজী মারা গেলে তার লাশ নিজ দেশে পাঠানোর নিয়ম নাই। কয়েকদিন আগে এবারের পবিত্র হজ শেষ হয়েছে। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে এবারের হজ অনুষ্ঠিত হয়। যার ফলে অনেক হাজী ইন্তেকাল করেন। যাদের মধ্যে বাংলাদেশি হাজীও আছেন। মৃত্যুর পর হাজীদের কি করা হয় সে প্রশ্ন অনেকে মনে জাগতে পারে।

জানা যায়, প্রতিবছর হজ করতে গিয়ে তীব্র গরমে, ভিড়ে পদদলিত হয়ে, অসুস্থ হয়ে কিংবা সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা কারণে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে মারা যান। মারা যাওয়া হাজীদের কফিন দেশে আনা যাবে? নাকি সেখানেই দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করা হবে। লাশ সনাক্ত হবে কিভাবে ? মৃত্যু সনদ কাদের থেকে পাওয়া যাবে এমন নানা প্রশ্ন ওঠে।

এক্ষেত্রে সৌদি আরবের হজ সংক্রান্ত আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, কোনো ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তার লাশ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয় না। তার লাশ সৌদি আরবে দাফন করা হয়। হজে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়ার সময়ে প্রত্যেক হজযাত্রী হজে যাওয়া সংক্রান্ত আবেদনপত্র পূরণ ও স্বাক্ষর করে থাকেন। ওই আবেদনপত্রে তারা অঙ্গীকার করেন বা সম্মতি দেন, যদি সৌদি আরবের ভূমি বা আকাশে তার মৃত্যু হয় তবে সৌদি আরবে তাকে দাফন করা হবে। পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রহণ করা হবে না।

এক কথায়, মৃতের পরিবার হজযাত্রীর লাশ দেশে পাঠানো বা এই সংক্রান্ত কোন সুপারিশ সৌদি সরকারকে করতে পারবেন না। আর করলেও তা সৌদি সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।

সৌদি আরবে হজ করতে যাওয়া বাংলাদেশি হজযাত্রী তার থাকার জায়গা বা রাস্তায় দুর্ঘটনায় অথবা হাসপাতাল থেকে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে সেই সংবাদ সবার আগে সৌদিতে বাংলাদেশের হজ মিশনকে জানাতে হয়। আর হজ মিশনকে এই তথ্য জানিয়ে থাকেন মোনাজ্জেম বা মোয়াল্লেমরা। মোনাজ্জেম হলো হজ এজেন্সির পক্ষে দায়িত্বে থাকা গাইড। মোয়াল্লেম হলেন সৌদি আরবের গাইড। তার অধীনে একাধিক এজেন্সি থাকে।

অনেক সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বা সাধারণ মানুষও সরাসরি হজ মিশনকে এই তথ্য জানিয়ে থাকেন। নির্ভর করে ওই হজযাত্রী কোথায় মৃত্যুবরণ করেছে তার ওপর। সাধারণত হজযাত্রীর সাথে থাকা হাতের ব্যান্ড বা গলায় ঝোলানো আইডি থেকে তার নাম, বয়স, এজেন্সি, জাতীয়তা, সনাক্তকারী নম্বরসহ প্রাথমিক কিছু তথ্য পাওয়া যায়। বাংলাদেশের একটি নিবন্ধিত হজ এজেন্সির মোনাজ্জেম নাজমুস সাদাত এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এরপর হজ মিশন মৃতের ছবি ও প্রাথমিক তথ্যের সাথে তাদের কাছে থাকে তথ্য ও ছবি মিলিয়ে মৃতের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

আবার মৃত হজযাত্রীর সাথে যদি তার কোন আত্মীয়স্বজন বা কাছের কেউ থাকেন তারা লাশের পরিচয় শনাক্ত করে থাকেন। এরপর বিষয়টি মৃতের বাংলাদেশে থাকা পরিবার এবং সৌদি আরবের হজ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে হজ মিশন। সেইসাথে মৃতের এই তথ্য ওয়েবসাইটে আপডেট করা হয়।

মৃতের পরিবার যদি সৌদি আরবে এসে শেষবারের মতো তাদের স্বজনকে দেখতে চান, সেই সুযোগ থাকে না। তবে স্বজন যদি মক্কায় থাকেন তাহলে তিনি লাশ দেখার এবং জানাজায় অংশ নেয়ার সুযোগ পান।

বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ধর্ম তত্ত্ববিদ ড. ওলিউর রহমান খান জানিয়েছেন, মৃতের পরিচয় সনাক্ত না হলে তা পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য টানা ১৫ দিন লাশটি তাদের হিমঘরে রাখতে পারেন। পরিচয় সনাক্ত হওয়ার পর নিকটস্থ হাসপাতাল অথবা বাংলাদেশ হজ কার্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র থেকে সার্টিফাইড চিকিৎসকের সনদ বা ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হয়। মোয়াল্লেম অফিসও ছাড়পত্র দিয়ে থাকে।

সৌদি আরবে চলতি বছরের হজ পালন করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ২১ জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তাদের মধ্যে ১৮ হন পুরুষ এবং তিন জন নারী। যাদের বয়স ৪৮ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে। বাংলাদেশের হজ সম্পর্কিত সবশেষ বুলেটিন থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বুলেটিন অনুযায়ী মক্কায় মারা গেছেন ১৬ জন, মদিনায় চার জন এবং মিনায় এক জন হজযাত্রী মারা গেছেন। এর মধ্যে হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে ১৭ জন এবং পরে চারজন মারা যান।

মক্কায় হজ করতে গিয়ে বাংলাদেশিসহ ৯২২ জনেরও বেশি হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে সৌদি আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম। যাদের অর্ধেকেরও বেশি মিশরীয় নাগরিক।

একজন মুসলমানের কাছে মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত মক্কায় গিয়ে হজ করে নিজ দেশে আসা পরিমাণ সম্পদ থাকলে তার ওপর হজ ফরজ। হজ ফরজ হলে সঙ্গে সঙ্গে অর্থাৎ, যে বছর হজ ফরজ হয় সে বছরই আদায় করা ওয়াজিব।

যাযাদি/এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে