সৌদি আরবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হজ এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর আগে কখন এত মানুষ এক সঙ্গে হজ করেন নি। করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এবার বিভিন্ন দেশে থেকে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি হজে অংশগ্রহণ করেছেন। ‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক...।’ ২০ লাখের বেশি মুসলিমের মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত।
পাপমুক্তি আর আত্মশুদ্ধির আকুল বাসনায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ এই পবিত্র হজ পালন করেন। আজ মঙ্গলবার ফজরের সালাতের পরেই মিনা থেকে দলে দলে হাজিগণ যান আরাফাত ময়দানে।
সফেদ-শুভ্র দুই খণ্ড কাপড়ের এহরাম পরিহিত হাজিরা সেখানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত থাকবেন। আরাফাত ময়দানের মসজিদে নামিরায় জোহরের নামাজের আগে খুতবা দিবেন করবেন মসজিদুল হারামের খতিব এই খুতবা বাংলাসহ বিশ্বের ২০ টি ভাষায় অনুবাদ করে শোনানো হবে। খুতবা শেষে জোহর ও আসরের ওয়াক্তের মাঝামাঝি সময়ে হাজিরা জামাতের সঙ্গে কছর নামাজ আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে আল্লাহ তাআলার জিকির-আসকার ও ইবাদতে মশগুল থাকবেন।
এর আগে, রোববার রাত থেকে মিনায় মুসল্লিদের উপস্থিতির মধ্য দিয়ে এই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এদিন মক্কায় জোহরের নামাজ পড়ে কেউ হেঁটে, কেউ গাড়িতে চড়ে মিনায় আসেন। হজের অংশ হিসেবে মুসল্লিরা মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা, মক্কায় পাঁচ দিন অবস্থান করবেন। মিনায় অবস্থান নেওয়ার আগে রোববার বিকালে মক্কায় কাবাঘর তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন মুসল্লিরা।
সোমবার সারা দিন ও সারা রাত মিনায় অবস্থানের মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। সেখানে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল ছিলেন। সেখানে ফজরসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পর তারা যাবেন মিনা থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানের দিকে। আরাফাতে যাওয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে মুসল্লিরা হেঁটে, হুইলচেয়ারে, বাসে- যে যেভাবে পারেন পৌঁছাবেন। সবার শরীর সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকবে। তাদের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান।
১০ জিলহজ সূর্যাস্তের পর হাজিরা মাগরিবের নামাজ আদায় না করেই আরাফাতের ময়দান থেকে রওনা দেবেন মুজদালিফার দিকে। সেখানে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন তারা। এখানে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিযাপন করবেন।
তারপর মিনার জামারায় (প্রতীকী) শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য পাথর সংগ্রহ করবেন। এরপর ফজরের নামাজ শেষে হাজিরা আবার ফিরবেন মিনায়। পরদিন সকালে জামারাতে পাথর নিক্ষেপ ও পশু কোরবানির পর পুরুষরা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম ত্যাগ করবেন। পবিত্র কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করে হজের পূর্ণ আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন হাজিরা।
এবার হজে রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি : এদিকে, করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে এবার রেকর্ড সংখ্যক মুসল্লি হজ পালন করবেন বলে জানিয়েছে সৌদি আরবের হজ ও উমরাহ সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন মুসল্লি হজ পালন করতে গেছেন।
সৌদি আরব যে তথ্য দিয়েছে তাতে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ পৌঁছেছেন স্থলবন্দর দিয়ে। ছয় হাজারের বেশি মানুষ গেছেন সমুদ্রবন্দর দিয়ে, বাকিরা বিমানে।
এর আগে, করোনার সময় সীমিতভাবে হজ হয়েছিল। ২০২০ ও ২০২১ সালে বাইরের দেশ থেকে কাউকে হজ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। ২০২২ সালে কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করা হয়। ১০ লাখ মানুষকে হজ পালনের অনুমতি দেওয়া হয়। এবার হজ হচ্ছে একেবারে স্বাভাবিক সময়ের মতো।
যাযাদি/ এস