শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নারীর হিজাব, পুরুষের টাকনুর ওপর পোশাক পরার বিজ্ঞপ্তি

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০৮
আপডেট  : ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১৮:০৯

বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের মুসলিম নারী ও পুরুষ কর্মকর্তাদের ইসলাম ধর্মীয় বিধানমতো কাপড় পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম।

অফিস বিজ্ঞপ্তি জারি করে মি. রহিম তার প্রতিষ্ঠানের পুরুষ কর্মকর্তাদের পায়ের গোড়ালির ওপরে পোশাক পরার এবং নারী কর্মকর্তাদের হিজাবসহ গোড়ালির নিচে পর্যন্ত কাপড় পরিধানের নির্দেশ দিয়েছেন।

যদিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন অফিসে পোশাক পরিধান নিয়ে কোনো নির্দেশনা সরকার বা মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে দেওয়া হয়নি।

আর বিজ্ঞপ্তিটিও জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ওয়েবসাইটে না দিয়ে সরাসরি ওই অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের পাঠানো হয়েছে।

মুহাম্মদ আব্দুর রহিম বিবিসি বাংলাকে বলছেন তিনি তার অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচাতে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।

"দেখছেন সারা দেশে ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটছে। সবাই ঠিক মতো ধর্মীয় বিধান মানলে তো এমন অবস্থা হতো না। তাই আমি আমার অফিসের সবাইকে সে অনুযায়ী পোশাক পরিধান করতে বলেছি," বলছেন মি. রহিম।

কিন্তু একটি সরকারি অফিসে তিনি এ ধরণের ধর্মীয় ড্রেস কোড চালু করতে পারেন কি না - এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমি তো কোনো ড্রেস কোড চালু করিনি। শুধু সবাইকে বলেছি মুসলিমরা যেন তাদের ধর্ম অনুযায়ী পোশাক পরে অফিসে আসেন। ধর্মীয় অনুশাসন অনুযায়ী জীবন যাপন জরুরি বলেই মনে করি আমি।"

জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে এবং তাই অফিস কর্মকর্তা কর্মচারীদের পোশাক নিয়ে এ ধরণের নির্দেশ দেয়ার আগে মন্ত্রণালয় বা সরকারের অনুমতি নেয়া হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "না অনুমতি নেইনি। কারণ এটা তো আমি আমার ইন্সটিটিউটের জন্য দিয়েছি।"

মিস্টার রহিম ওই আদেশে কর্মকর্তা কর্মচারীদের অফিসের সময়ে মোবাইল ফোন সাইলেন্ট বা বন্ধ করে রাখারও নির্দেশনা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত বাংলাদেশের সরকারি অফিস (সিভিল) এর কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য সরকার কোনো ড্রেস কোড চালু করেনি। তবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের গরমের সময়ে হাফ শার্ট পরে অফিস করা ও এসি না চালানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করার কথা সরকারের উচ্চ মহল থেকে বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছিলো।

আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে এক সরকারি নির্দেশ জারি করা হয়েছিলো ২০১০ সালে। জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের কাজের তালিকায় শিক্ষা কার্যক্রমও আছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে তখন বলা হয়েছিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা বা ধর্মীয় পোশাক পরতে বাধ্য করা 'অসদাচরণ' বলে গণ্য করা হবে।

এর আগে একটি রিট মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের পক্ষ থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থলে মহিলাদের বোরকা পরতে বাধ্য না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পরিচালক মুহাম্মদ আব্দুর রহিম ইন্সটিটিউটে এ ধরণের অফিস আদেশ দেয়ার আগে মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান বিবিসি বাংলাকে বলেন মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

"জনস্বাস্থ্য পরিচালক যেটি করেছেন সেটি তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সরকারের বা মন্ত্রণালয় থেকে এমন কোনো নির্দেশনা নেই। এরপরেও কেন তিনি এটি করেছেন সেটি তিনিই বলতে পারবেন," মাইদুল ইসলাম প্রধান বিবিসি বাংলাকে বলেন।

বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট রোগ প্রতিরোধ বিষয়ে গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রকাশনাসহ নানা বিষয়ে কাজ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি চিকেন পক্স, কলেরা, টাইফয়েড সহ নানা ধরণের রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন করে থাকে। একই সঙ্গে তারা বায়োলজিক্যাল রি-এজেন্ট উৎপাদন ও বায়লজিক্যাল প্রডাক্টগুলোর মান নিয়ন্ত্রণ সহ এসব কাজের ফোকাল প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে