ট্রাম্পের শুল্ক কৌশল যদি সফলও হয় তবুও এটি আমেরিকানদের জীবনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে আসবে। ট্রাম্প নিজেও স্বীকার করেছেন যদি পরবর্তী বছরগুলোতে শুল্ক ২০, ৩০ বা ৫০ শতাংশ হয়, তাহলে মার্কিন জনগণকে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধির সম্মুখীন হতে হবে।
হোয়াইট হাউসে ১০০ দিন পার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরইমধ্যে তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে ৪১ শতাংশে। আর অর্থনীতি পুণরুদ্ধারে তার নেয়া পদক্ষেপে আস্থা আছে মাত্র ৩৯ শতাংশ নাগরিকের।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ৭০ বছরে প্রথম কোনো প্রেসিডেন্টের জনপ্রিয়তা ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে এত কমে গেছে। মূল্যস্ফীতি মোকাবেলা ও শুল্ক নীতির কারণে তার জনসমর্থন কমছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর সিএনএন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরে এমন এক অর্থনীতির হাল ধরেছিলেন ট্রাম্প যা একসময় বিশ্বের জন্য ঈর্ষার কারণ ছিল।
তবে তা এখন সংকটের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের নীতি ও পদক্ষেপগুলোয় বিপদে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নিরাপত্তা। যা নাগরিকদের মধ্যে আতঙ্ক ও অস্বস্তি সৃষ্টি করেছে।
ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছে অধিকাংশ ভোটার। সিএনএনের বিশ্লেষণ অবলম্বনে।
উচ্চ জীবনযাত্রা ব্যয় থেকে মুক্তি ও ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি বিশেষ করে মহামারী-আগের অর্থনীতি ফিরে পাওয়ার আশা থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ট্রাম্পকে ক্ষমতায়ণ করেছিল মার্কিনীরা। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইচ্ছাকৃতভাবে এমন নীতি গ্রহণ করেছেন, যা দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। সেইসঙ্গে বাজারে পণ্যের সংকট সৃষ্টি করতে পারে। যে কারণে বড় বড় কোম্পানি ও ছোট ব্যবসাগুলো বিশৃঙ্খলা ও মন্দার আশংকায় রয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অর্থনীতি পুনর্গঠনের জন্য তিনি একটি মৌলিক উদ্যোগ নিচ্ছেন। ‘সুন্দর’ শুল্কের মাধ্যমে ১৯ শতকের স্বর্ণযুগ পুনরুদ্ধার করে বাণিজ্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করাই তার লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যকে বিদেশী বাজারে প্রবেশ ও ছোট দেশগুলোকে একক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার স্বার্থে বাধ্য করতেই বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি তার।
এরইমধ্যে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশাল অস্থিতিশীলতা তৈরি করেছে। মার্কিন শেয়ার বাজারে ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়ে গেছে, বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট কমাচ্ছে, শীর্ষ কোম্পানিগুলি তাদের বার্ষিক পূর্বাভাস বদলে দিয়েছে সেইসঙ্গে কিছু খুচরা বিক্রেতারা চীনে তৈরি পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। আরোপিত শুল্কের ফলে চীন ও আমেরিকার মধ্যে একটি অর্থনৈতিক যুদ্ধ চলছে, অনেক দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি থমকে গেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত এই নীতি মার্কিনীদের উচ্চ জীবনযাত্রার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এই পরিণতি নিয়ে উদ্বিগ্ন আমেরিকানরা।
ট্রাম্প প্রশাসন অবশ্য দাবি করছে যে, এটি একটি সুপরিকল্পিত কৌশল। যা শীঘ্রই বাণিজ্য চুক্তি ও বিশ্ব বাজারের সম্প্রসারণ আনবে। তবে, জীবনযাত্রা ও আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখে ট্রাম্পের পরিকল্পনা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন বিশ্লেষকরা।
যাযাদি/ এম