যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বা এসিএর মতে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের মধ্যে অন্তত ৪টি স্বল্প পাল্লার ও ২টি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে।
এ ছাড়া, ৭ হাজার কিলোমিটার পাল্লার একটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রসহ আরও কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির কাজ চলমান।
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা অনুষদের ধারণা, পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে প্রায় ১০০-১২০টি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে যেগুলো স্থল ও আকাশ পথে ব্যবহার করা সম্ভব।
তবে ফেডারেশন অব আমেরিকান সায়েন্টিস্টের সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের কাছে মোট ১৬৫ পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ আছে।
প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে এর পার্থক্য খুব একটা বেশি নয়। ইতোমধ্যে ভারত ২টি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে।
এ ছাড়াও, তাদের কাছে একটি মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র আছে। এসিএর তথ্য অনুসারে এর পাল্লা ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।
সম্প্রতি ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান দুদেশের সম্পর্কে আগুন লেগেছে আবার নতুন করে।
যে আগুনে জ্বলছে দুদেশ, ইতিমধ্যে সীমান্তে ভারত-পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নিচ্ছে পাল্টাপাল্টি সব কঠিন সিদ্ধান্ত। চিরশত্রু এই দুদেশের মধ্যে যুদ্ধের দামামা এখন বাজলো বলে।
যদি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লেগেই যায় সেক্ষেত্রে সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে? কার কাছেই বা কি পরিমাণ রসদ রয়েছে যুদ্ধে অংশ নেওয়ার?
আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের প্রকাশিত ২০২৫ সালের র্যাঙ্কিং অনুযায়ী পাকিস্তানের চেয়ে সামরিক শক্তিতে ঢের এগিয়ে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির ভারত।
সামরিক শক্তিমত্তায় ভারতের বর্তমান অবস্থান বিশ্বে ৪ নম্বরে। আর পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থান ১২ তম। যদিও এই র্যাঙ্কিংই সব শক্তিমত্তার প্রমাণ দেয় না। কারণ, এর বাইরেও কৌশলগত কিছু বিষয় রয়েছে।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের তথ্যমতে, বর্তমানে ভারতের হাতে রয়েছে ২০১ টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক।
এর পাশাপাশি এক লাখ ৪৮ হাজার ৫৯৪টি বিভিন্ন ধরনের সামরিক যান, ১০০টি স্বচালিত আর্টিলারি এবং ২৬৪টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম এমএলআরএস রয়েছে ভারতের ভান্ডারে।
পক্ষান্তরে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে ৬২৭ টি যুদ্ধ ট্যাঙ্ক যা সংখ্যায় ভারতের চেয়ে তিনগুনেরও বেশি। এর সাথে আরও রয়েছে ১৭ হাজার ৫১৬টি সামরিক গাড়ি, ৬৬২টি স্বচালিত আর্টিলারি এবং ৬০০টি মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম। সবকিছু মিলে স্থলভাগের যুদ্ধ সারঞ্জাম ভারতেরই বেশি। তবে, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেমের সংখ্যায় পাকিস্তান তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে ভারতের থেকে।
আকাশ পথের ক্ষেত্রেও পাকিস্তানের চেয়ে ভারত এগিয়ে রয়েছে। ভারতের কাছে যুদ্ধ বিমান রয়েছে ৫১৩টি আর পাকিস্তানের কাছে ৩২৮টি। যদিও ভারতের কাছে মোট এয়ারক্রাফটের পরিমাণ ২ হাজার ২২৯ টি আর পাকিস্তানের মাত্র ৩৯৯টি।
এছাড়াও ভারতের রয়েছে ৮৯৯টি হেলিকপ্টার এবং ৮০টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার। পক্ষান্তরে পাকিস্তানের ৩৭৩টি হেলিকপ্টারের সাথে ৫৭টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে।
এদিকে ভারতীয় নৌবাহিনীর বহরে রয়েছে ২৯৩টি ‘অ্যাসেট’। এর মধ্যে দুটি এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার, ১৩টি ডেস্ট্রয়ার, ১৪টি ফ্রিগেট, ১৮টি সাবমেরিন এবং ১৩৫টি প্যাট্রোলিং ভেসেল রয়েছে। আর পাকিস্তানের নৌবাহিনীর ‘অ্যাসেট’ সংখ্যা ১২১টি। তবে দেশটির কোনো এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার ও ডেস্ট্রয়ার নেই।
পাকিস্তানের নৌবহরে ৯টি ফ্রিগেট, আটটি সাবমেরিন ও ৬৯টি প্যাট্রোলিং ভেসেল রয়েছে। এই সংখ্যায় স্পষ্ট যে নৌ বহরের ক্ষেত্রেও ভারতের চেয়ে ঢের পিছিয়ে পাকিস্তান।
সামরিক শক্তিতে ভারত পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে থাকলেও পরমাণু শক্তিতে দুদেশ সমানে সমান।
বর্তমান বিশ্বে যে কোন যুদ্ধেরই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেয় সেদেশের পারমাণবিক শক্তির সক্ষমতা।
তাই ভারত-পাকিস্তান দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই হবে এটি বলাই যায়।