সিন্ধুর পানি বন্ধ হলে যুদ্ধ হিসাবে দেখবে পাকিস্তান 

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৬

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলায় ২৬ পর্যটকের প্রাণহানির ঘটনায় পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি বাতিল ও দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করেছে ভারত। 

প্রতিক্রিয়ায় পানি বন্ধ করার যেকোনো প্রচেষ্টা যুদ্ধ ঘোষণা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় দেওয়া সব ভিসা বাতিল, ভারতের সঙ্গে প্রধান সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ এবং ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি স্থগিত করেছে দেশটি।

শিমলা চুক্তি-সহ ভারতের সঙ্গে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখা হতে পারে বলেও জানিয়েছে পাকিস্তান। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান।

১৯৭২ সালে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে শিমলা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী পরিস্থিতিতে এটি একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শান্তিচুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমেই জম্মু ও কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখা নির্ধারণ হয়েছিল। চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, জম্মু ও কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতির সময়ে যে দেশের বাহিনী যেখানে অবস্থান করছে, সেখানেই অবস্থান করবে। কোনও দেশই একতরফা ভাবে নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করবে না।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স বলছে, পাকিস্তান জানিয়েছে তারা ভারতের সঙ্গে সব ধরনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করে দিচ্ছে। ভারতকে তৃতীয় কোনও দেশে বাণিজ্যের জন্যও তারা নিজেদের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবে না। 

বস্তুত, বুধবার রাতেই ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সিন্ধু পানি  চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখছে ভারত। ভারতের এই সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে পাকিস্তান। 

রয়টার্স অনুসারে, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে নয়াদিল্লির সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ইসলামাবাদ।

প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের কার্যালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের নাগরিকদের জন্য পাকিস্তানের ভিসা প্রদান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলোর জন্য পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যে সব ধরনের বাণিজ্যিক লেনদেনও স্থগিত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, তারা ভারতের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেছে। পানি বন্ধ বা অন্যদিকে প্রবাহিত করার যেকোনো উদ্যোগকে ‘যুদ্ধের উসকানি’ হিসেবে বিবেচনা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলছে, এমন কিছু করা হলে ‘জাতীয় ক্ষমতার পূর্ণ শক্তি দিয়ে’ এর প্রতিক্রিয়া জানাবে তারা।

এরআগে বুধবার (২৩ এপ্রিল) পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৫ টি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ভারত। সিদ্ধান্তগুলো হলো সিন্ধু পানিচুক্তি বাতিল, পাকিস্তানের সঙ্গে আটারি সীমান্ত বন্ধ, পাকিস্তানে ভারতের হাইকমিশন থেকে কর্মী প্রত্যাহার, পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল ও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশটির নাগরিকদের ভারত ছাড়ার নির্দেশ।

এরপর বৃহষ্পতিবার একধাপ এগিয়ে ভারতের সাথে সমস্ত দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে এবং তাৎক্ষণিকভাবে ওয়াগাহ সীমান্ত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানালো পাকিস্তান।

এছাড়াও ইসলামাবাদের ঘোষণায় ‘বিনা ভিসা প্রকল্পের’ আওতায় ভারতীয় নাগরিকদের দেওয়া সব ভিসা স্থগিত করা হয়েছে। ইসলামাবাদে নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকদের সংখ্যা ৩০ জনে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে এবং ভারতীয় প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পাকিস্তান ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারত পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।