তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে রোমে দ্বিতীয় দফায় বৈঠকে বসতে যাচ্ছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ওমানের মধ্যস্থতায় পরোক্ষভাবে এই আলোচনা করবেন।
আরাকচি তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে জানান, তিনি আলোচনার দ্বিতীয় দফায় অংশ নিতে রোম পৌঁছেছেন। শুক্রবার মস্কোতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি বাস্তববাদী হয়, তাহলে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, আমি শুধু চাই ইরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র না পায়। তাদের এটা থাকতে পারবে না।
আমি চাই ইরান হোক চমৎকার, সমৃদ্ধ এবং দুর্দান্ত। এক সপ্তাহ আগে মাসকাটে অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনাকে উভয় পক্ষই গঠনমূলক বলে উল্লেখ করেছে।
তবে কিছু ইরানি কর্মকর্তার মন্তব্যে শিগগিরই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া যেতে পারে বলে ধারণা তৈরি হলেও, তেহরান দ্রæত চুক্তির প্রত্যাশা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এ সপ্তাহে বলেন, তিনি ‘অত্যধিক আশাবাদী নন, আবার নিরাশও নন।’ ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সালে ইরান এবং ছয় শক্তিধর দেশের মধ্যে হওয়া ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে তেহরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউজে ফিরে আসার পর আবারও ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল চালু করেছেন তিনি। ওয়াশিংটন চায়, ইরান যেন উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন বন্ধ করে।
কারণ তারা মনে করে পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। তেহরান সবসময় বলেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।
যদি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়, তারা কিছু সীমাবদ্ধতা নিয়ে আলোচনা করতে রাজি। তবে তারা চায় এমন দৃঢ় গ্যারান্টি যেন যুক্তরাষ্ট্র আর কখনও চুক্তি থেকে সরে না আসে, যেমনটি ট্রাম্প ২০১৮ সালে করেছিলেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র ইরানি কর্মকর্তা তেহরানের আলোচনার অবস্থান ব্যাখ্যা করেন। জানান, ইরানের লাল রেখাগুলো হচ্ছে- ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সেন্ট্রিফিউজগুলো কখনোই অপসারণ করবে না, সম্পূর্ণরূপে সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করবে না, অথবা ইউরেনিয়ামের মজুদ ২০১৫ সালের চুক্তির চেয়ে কমাবে না।
এছাড়া প্রতিরক্ষা সক্ষমতা যেমন: ক্ষেপণাস্ত্র-নিয়েও আলোচনা করতে রাজি নয় ইরান। যদিও তেহরান ও ওয়াশিংটন উভয়েই বলছে তারা ক‚টনীতি চালিয়ে যেতে চায়। তবুও দুই পক্ষের মধ্যে এখনও বিস্তর ফারাক রয়ে গেছে, যা গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে।
উইটকফ ও আরাকচি প্রথম দফা আলোচনার শেষে সংক্ষিপ্তভাবে কথা বলেন। তবে ২০১৫ সালের পর থেকে দুই দেশের কর্মকর্তারা সরাসরি কোনো আলোচনা করেননি। ইরান বলেছে, রোমের আলোচনাও ওমানি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
ইরানের ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির পক্ষভুক্ত ছিল রাশিয়া। দেশটি বলেছে, তারা ‘ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উপকারী হতে পারে এমন বিষয়ে সহায়তা, মধ্যস্থতা করতে এবং যে কোনও ইতিবাচক ভ‚মিকা রাখতে প্রস্তুত।’
যাযাদি/আর