চলতি বছরের গোড়ার দিকে এক জন প্রেমিক ভাড়া করেন মিন। তার জন্য হাজার হাজার ডলার খরচও করে ফেলেছেন তিনি।
কেউ পেশাগত জীবন নিয়েই ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে চান, চান না কোনও বাঁধন। কেউ আবার ব্যক্তিগত কারণেই বিয়ে করতে চান না। কিন্তু পরিবারের সকল সদস্যকে আলাদা ভাবে এই বিষয়গুলি বোঝানো নাকি ঝক্কির ব্যাপার। তাই ‘বেশি ঝামেলা না করে’ হাজার হাজার ডলার খরচ করে প্রেমিক ভাড়া করে ফেললেন তরুণী।
উত্তর ভিয়েতনামের নাম ডিং প্রদেশের বাসিন্দা মিন থু। তাঁর বয়স ৩০ বছর। কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে পাঁচ বছর কোনও সম্পর্কে জড়াননি তিনি।
তবে মিনের বাবা-মায়ের চিন্তা ভিন্ন। তাঁদের দু’জনের বয়স বাড়ছে। মিন এখনও একা রয়েছেন। বুড়ো বয়সে তাঁর দেখাশোনা কে করবেন তা নিয়ে সব সময় চিন্তায় ডুবে থাকেন মিনের বাবা-মা। কিন্তু মেয়ের মনে যে কাউকেই ধরে না। অবশেষে তাঁরা বেছে নেন অন্য পথ।
নতুন বছরে মিন তাঁর বাড়ি যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। তখনই তরুণীর বাবা-মা বেঁধে দেন শর্ত। মেয়েকে ধমক দিয়ে তাঁরা বলেন, ‘‘আগে প্রেমিক জোটাও। বাড়িতে নিয়ে এসে আমাদের সঙ্গে আলাপ করাও। বিয়ে যদি করতে রাজি থাকো তা হলেই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে। না হলে নতুন বছরে আর বাড়ি আসতে হবে না।’’
তবে বিয়ে করবেন না তা মনস্থির করে ফেলেছিলেন মিন। অন্য দিকে, এই কারণে বাবা-মায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়ে যাক তা-ও চাইছিলেন না তিনি। দুই দিক বজায় রাখতে তাই প্রেমিক ভাড়া করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে এক জন প্রেমিক ভাড়া করেন মিন। তার জন্য হাজার হাজার ডলার খরচও করে ফেলেছেন। ভিয়েতনামে প্রেমিক ভাড়া করার প্রচলন রয়েছে। তবে তার জন্য পালন করতে হয় বিশেষ শর্ত।
কী কী আছে শর্তের সেই তালিকায়? ভাড়া করা প্রেমিকের সঙ্গে মানসিক ভাবে জড়িয়ে পড়া যাবে না। রাখা যাবে না কোনও রকম শারীরিক সম্পর্ক। শুধুমাত্র পরিবারের সামনে তরুণীর প্রেমিক সেজে থাকতে পারবেন সেই তরুণ।
মিন জানান যে, তাঁর ভাড়া করা প্রেমিক তাঁর চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। পেশায় নির্মাণশিল্পী। রান্নাবান্না করতে পারেন দুর্দান্ত। এমনকি ওয়াইন টেস্টিংয়ের জন্য প্রশিক্ষণও নিয়েছেন।
মিন জানান, পরিবারের সঙ্গে যেন তাঁর দূরত্ব না বাড়ে, তাই ভাড়া করা প্রেমিককেই আসল প্রেমিক হিসাবে পরিচয় করিয়ে দেন বাবা-মায়ের সঙ্গে। মিনের ব্যক্তিগত কিছু কথাও সেই তরুণকে আগে থেকে জানিয়ে রেখেছিলেন তিনি। মিনের বাবা-মাও সেই তরুণকে দেখে আশ্বস্ত হন। এখন নাকি বিয়ের জন্য মেয়েকে চাপ দেওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
ভিয়েতনামের বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সি খান গক। জীবনে কোনও দিনও কোনও সম্পর্কে জড়াননি তিনি। কেরিয়ার নিয়ে ব্যস্ত তিনি। অথচ বাড়ি থেকে ক্রমাগত বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতে থাকে খানকে। তাই তিনিও সেই সমস্যা থেকে বাঁচতে প্রেমিক ভাড়া করেন যিনি খানের চেয়ে চার বছরের ছোট। খান যে কোনও সম্পর্কে রয়েছেন তা দেখেই আপাতত খুশি খানের পরিবার।
২৫ বছরের তরুণ হুই তুয়ান গত এক বছর ধরে প্রেমিক সেজেই অর্থ উপার্জন করেন। হানোইয়ের বাসিন্দা তিনি। তুয়ান জানান, প্রতি মাসে কমপক্ষে তিন থেকে চার জন তরুণীর নকল প্রেমিক সেজে ঘুরতে হয় তাঁকে।
নকল প্রেমিক সাজার কাজও খুব একটা সরল ছিল না তুয়ানের কাছে। তার জন্য তুয়ানকে শিখতে হয়েছে রান্নাবান্না, ভাল ভাবে ছবি তোলাও শিখতে হয়েছে। নিয়মিত শরীরচর্চার জন্য জিমে যান তিনি। এমনকি, তরুণীদের মন ভোলানোর জন্য গান গাওয়াও রপ্ত করতে হয়েছে তাঁকে।
তুয়ান জানান, কোনও তরুণীর সঙ্গে কফি ডেট অথবা কেনাকাটা করার জন্যও নকল প্রেমিক সেজেছেন তিনি। তবে সে ক্ষেত্রে তুয়ানের সময় বাঁধা। দু’ঘণ্টার বেশি সময় সেই তরুণীর সঙ্গে কাটাবেন না তিনি। এমনকি, দু’ঘণ্টা নকল প্রেমিক সেজে থাকার জন্য ৮০০ টাকা থেকে ১৭০০ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তুয়ান।
তুয়ান আরও জানান যে, তরুণীর পরিবারের সঙ্গে নকল প্রেমিক হিসাবে দেখা করতে গেলে অবশ্য বেশি পারিশ্রমিক আদায় করেন তিনি। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় মুদ্রায় কমপক্ষে ৩ হাজার টাকা আয় করেন তুয়ান।
ভিয়েতনামের অ্যাকাডেমি অফ জার্নালিজ়ম অ্যান্ড কমিউনিকেশনের এক গবেষক গুয়েন থান গা ভাড়াটে প্রেমিক প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে, তরুণীরা কোনও অচেনা তরুণকে প্রেমিক হিসাবে ভাড়া করার পর যদি কোনও বিপদে পড়েন তা হলে বিশেষ কোনও আইনি সাহায্য পাবেন না। ফলে তরুণীদের এই বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।
সব ছবি: প্রতীকী।
যাযাদি/এসএস