পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা কারাবন্দি ইমরান খানের মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ এবং সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী বাতিলের দাবিতে রাজধানী ইসলামাবাদে জড়ো হয়েছিলেন পিটিআইয়ের কয়েক লাখ নেতাকর্মী। তারা অবস্থান নিয়েছিলেন রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ডি-চকে।
এ কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে পিটিআই কর্মীদের। এতে হতাহত হয়েছে হাজারো নেতাকর্মী। এছাড়া নিহত হয়েছেন ৭জন।
অবশেষে বিক্ষোভ-আন্দোলন বন্ধের সিদ্ধান্ত নিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)। ইমরান-সমর্থকদের ইসলামাবাদ অভিযান ঘিরে গত কয়েক দিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল পাক রাজধানী শহর। তাদের জেলবন্দি নেতা ইমরানের অবিলম্বে মুক্তির দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবন পর্যন্ত বিক্ষোভ-অভিযানের ডাক দিয়েছিল পিটিআই।
গোলমাল এড়াতে সম্প্রতি ইসলামাবাদে যে কোনও ধরনের জমায়েত বন্ধের নির্দেশ দেয় শাহবাজ় শরিফের জোট সরকার। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দলে দলে পিটিআই সমর্থক ইসলামাবাদের উদ্দেশে রওনা হন।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষে মঙ্গলবার নিহত হয়েছেন ৬ পুলিশকর্মী। তার পরেই ইসলামাবাদ জুড়ে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ, চলে লাঠিচার্জও।
পুলিশের এক বিবৃতিতে বুধবার জানিয়েছে, গত দু’দিনে অন্তত সাড়ে চারশো পিটিআই সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও আন্দোলনকারীকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে এ দিন অভিযান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরানের দল।
এখন বিক্ষোভকারীরা ইসলামাবাদ থেকে পিছু হটায় পিটিআইয়ের শীর্ষ নেতৃত্ব ভীষণ চাপে পড়েছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। তাদের মতে, দলটির কোনো দাবি পূরণ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে পিটিআই কীভাবে সংগঠিত হবে, সেটা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাইঘাম খান আল-জাজিরাকে বলেন, এ বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ‘চূড়ান্ত ডাক’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল পিটিআই। এখন এভাবে বিক্ষোভ ধসে পড়া, দলটির রাজনৈতিক কৌশলের জন্য একটি বড় ধাক্কা।
পিটিআইয়ের দাবি, তাদের আটজন সমর্থক বিক্ষোভে নিহত হয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ দমাতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। সরকারের দাবি, বিক্ষোভকারী কেউ নিহত হননি।
পিটিআইয়ের পক্ষ থেকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের দাবি করা হলেও সরকার বারবার তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মুখপাত্র রানা ঈশান আফজাল বলেন, বিক্ষোভে পিটিআই সমর্থকেরা সশস্ত্র ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পুলিশের কাছে বুলেট ছিল। এরপরও তারা হতাহত হয়েছেন। এটা প্রমাণ করে যে পিটিআই সমর্থকেরা অস্ত্র নিয়ে এসেছিলেন।’
রানা আফজাল বলেন, এটা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ ছিল না। তারা (পিটিআই সমর্থকেরা) সহিংসতা করতে চেয়েছিলেন। মানুষের সহানুভূতি আদায়ের কৌশল হিসেবে তারা সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছিলেন।
ইসলামাবাদের রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক আহমেদ ইজাজ বলেন, বিক্ষোভস্থল থেকে হঠাৎ এভাবে বুশরা বিবি ও আলী আমিন গান্দাপুরের সরে আসার ঘটনা দলের মধ্যে বিভাজন আরও গভীর করবে।
আহমেদ ইজাজ বলেন, তারা (বুশরা ও গান্দাপুর) যেভাবে ডি-চক এলাকায় সমর্থকদের ফেলে চলে এসেছেন, তা এখন পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে দলের ক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, আনন্দবাজার
যাযাদি/ এম