ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে মিসাইল হামলার অনুমতি দিলেন বাইডেন

প্রকাশ | ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১১

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একজন মার্কিন কর্মকর্তা সিবিএস নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

এই সিদ্ধান্তের ফলে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটনের নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি কয়েক মাস ধরে এটিএসিএমএস নামক এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আহŸান জানিয়ে আসছিলেন, যাতে কিয়েভ তার নিজ সীমান্তের বাইরে হামলা করতে পারে।  

রোববার এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে জেলেনস্কি বলেন, 'এ ধরনের বিষয় ঘোষণা দিয়ে হয় না। ক্ষেপণাস্ত্র নিজেরাই নিজেদের উপস্থিতি জানান দেবে।'

এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে এ ধরনের পদক্ষেপের ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, এটি ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক জোট ন্যাটোর 'সরাসরি অংশগ্রহণ' হিসেবে গণ্য হবে। 

তবে রোববার পর্যন্ত পুতিন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। যদিও ক্রেমলিনের অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা একে গুরুতর উত্তেজনা বৃদ্ধি বলে আখ্যা দিয়েছেন।  

রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামূলক কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াশিংটনের এই সিদ্ধান্ত এসেছে। আগস্টে কিয়েভ ওই অঞ্চলে ঝটিকা আক্রমণ করে।  

বাইডেন প্রশাসন কার্যত ইউক্রেনকে জানিয়ে দিল যে, তারা বর্তমানে রাশিয়ার যে ছোট অংশ দখল করে রেখেছে, তা ধরে রাখার প্রচেষ্টাকে সহায়তা দেবে। দখলকৃত এ অঞ্চল ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য ইউক্রেনের শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।  

কিয়েভভিত্তিক ইউক্রেনীয় সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন সেন্টারের চেয়ারম্যান সের্হি কুজান বিবিসিকে বলেন, বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত দেশটির জন্য 'অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ'।

'যুদ্ধের গতিপথ বদলাবে না, তবে এ সিদ্ধান্ত আমাদের বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করবে,' বলেন তিনি।

এটিএসিএমএস মিসাইল প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব পারি দিয়ে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টকে জানিয়েছেন, রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সৈন্যদের ইউক্রেনে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাইডেন এটিএসিএমএস ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  

কুজান বলেন, রুশ ও কোরীয় সেনারা মিলিত হামলায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুরস্ক অঞ্চল থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যখন হামলার পরিকল্পনা করছে, সেই সময়ই এই সিদ্ধান্ত এল। এই আক্রমণ কয়েক দিনের মধ্যেই আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

ইউক্রেন এর আগে জানিয়েছিল, কুরস্কে প্রায় ১১ হাজার উত্তর কোরীয় সেনা রয়েছে।

বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকেও ইউক্রেনকে রাশিয়ার অভ্যন্তরে স্টর্ম শ্যাডো মিসাইল ব্যবহারের অনুমতি দিতে সক্ষম করবে।  

বাইডেনের এই সিদ্ধান্তের পর এখন ব্রিটেন ও ফ্রান্সও রাশিয়ার অভ্যন্তরে দূরপাল্লার স্টর্ম শ্যাডো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারে ইউক্রেনকে।  তবে এখনও পর্যন্ত যুক্তরাজ্য বা ফ্রান্স বাইডেনের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় কোনো মন্তব্য করেনি।  

গত মাসে জেলেনস্কি নিশ্চিত করেছিলেন, ইউক্রেন প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া দূরপাল্লার মিসাইল ব্যবহার করে রাশিয়ার পূর্ব অংশে হামলা চালিয়েছে।  

মাসের পর মাস ধরে ইউক্রেনের সেনারা রুশ বাহিনীকে পূর্ব দোনেৎস্ক অঞ্চল থেকে পিছু হটানোর জন্য লড়াই করছে। এ অঞ্চলে রাশিয়া ধীরে ধীরে পোকরভস্ক শহরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শহরটি ইউক্রেনীয় বাহিনীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র।  

এদিকে মস্কো ইউক্রেনে ড্রোন হামলার সংখ্যাও অনেক বাড়িয়েছে। অক্টোবরে মস্কো রেকর্ড ২ হাজারের বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারা। 

শনিবার রাতে রাশিয়া কয়েক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমন্বিত আক্রমণ চালায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। জেলেনস্কি জানান, হামলায় প্রায় ১২০টি মিসাইল ও ৯০টি ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।

ইউক্রেন দিরঘদিনি ধরে বলে আসছিল, মিত্ররা তাদেরকে আত্মরক্ষার জন্য কার্যকর হওয়ার মতো পর্যাপ্ত সহায়তা দিচ্ছে না।

এদিকে জো বাইডেন জানুয়ারিতে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ইউক্রেনে আরও সাহায্য ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছেন। তবে তার উত্তরসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা বন্ধ বা ধীর করতে পারেন।  

ইউক্রেনে সামরিক সহায়তা প্রদানকে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের ওপর বোঝা বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প। তিনি এই যুদ্ধে ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

ইউক্রেনে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র। জার্মান গবেষণা সংস্থা কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমি জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ওয়াশিংটন ইউক্রেনে প্রায় ৫৫.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও সরঞ্জাম পাঠিয়েছে অথবা পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

যাযাদি/ এসএম