ভারতের মণিপুরে সহিংসতা থামছে না, তীব্র হচ্ছে আন্দোলন

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪১

যাযাদি ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত

নতুন করে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি। গতকাল মঙ্গলবার জিরিবাম জেলার একটি দগ্ধ বাড়ি থেকে দুই পৌঢ়ের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। জিরিবাম জেলার বেশ কিছু এলাকায় গতকালও কারফিউ চলছে। গোটা জেলায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এদিকে আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মণিপুরের জিরিবামে সোমবার সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলির পর থেকে সেখানে তিন নারী এবং তিন শিশুসহ মোট ছয়জন নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয় সময় গতকাল মঙ্গলবার মণিপুর পুলিশ এই দাবি করেছে। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ওই গোলাগুলিতে ১০ জন নিহত হয়েছেন।

ইম্ফলে সাংবাদিক সম্মেলনে করে এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার মণিপুরের জিরিবামের যে এলাকায় গোলাগুলি  হয়েছিল সেখান থেকে মোট ১৩ জন নিখোঁজ হন।

পরে তাদের মধ্যে দুইজনের মরদেহ পাওয়া যায় এবং আরো পাঁচ জনের খোঁজ মিলেছে। তবে ছয়জন এখনও নিখোঁজ। তাদের সন্ধানে তল্লাশি শুরু হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘নিখোঁজ তিন নারী এবং তিন শিশুর সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী।

তবে সশস্ত্র ব্যক্তিরা গুলি চালালে পাল্টা গুলি চালাবে আসাম রাইফেলস, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), সিআরপিএফ।’

এর আগে, গত সোমবার জিরিবাম জেলায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ক্যাম্পে গুলিতে ১১ কুকি বিদ্রোহী নিহত হওয়ার পর রাতেই সেখানে অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়। সোমবার রাতে পার্শ্ববর্তী পশ্চিম ইম্ফল জেলায় সশস্ত্র কুকি জঙ্গিরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ উঠেছে 

পুলিশ জানিয়েছে, ক্যাম্পে কুকি বিদ্রোহীরা হামলা চালালে পাল্টা জবাব দেয় সিআরপিএফ। সিআরপিএফের দাবি, গুলিতে নিহত সবাই ১১ কুকি বিদ্রোহী।
এতে সিআরপিএফের এক জওয়ান মারাত্মক আহত হয়েছেন। সোমবার স্থানীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে কুকি বিদ্রোহীরা প্রথমে বড়বেকরা মহকুমা সদরের থানায় হামলা চালায়।

এর পরে কিছু বাড়িঘর ও দোকানে লুটপাট চালিয়ে জাকুরাডোর করংয়ের রাস্তায় সিআরপিএফের ওপর হামলা চালায়। এর পরেই শুরু হয় দুই পক্ষের গোলাগুলি। ওই ঘটনার পর পুরো এলাকা ঘিরে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। জারি করা হয় কারফিউ।

এদিকে ১১ জন ‘গ্রাম স্বেচ্ছাসেবক’-এর মৃত্যুতে জিরিবাম জেলার একাধিক জায়গায় বন্ধ ঘোষণা করেছে কুকি গোষ্ঠীগুলো। ওই সব এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। 

শনিবার রাতে এই জিরিবাম জেলারই জাইরাওন গ্রামে মেইতেই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাম্বাই টেঙ্গল এবং ইউএনএলএফের যৌথ হামলায় এক কুকি নারীর মৃত্যু হয়েছিল। গত রবিবার কুকি-জড়োদের যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফের সদস্যরা এক মেইতেই নারীকে খুন করে বলে অভিযোগ ওঠে। তার পরেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পূর্ব ইম্ফল জেলার থামনাপোকপি, সাবুংখোক এবং সানসাবিসহ বিভিন্ন এলাকা। একাধিক জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়। গত সোমবারও বিভিন্ন এলাকা থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি মণিপুরে মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পরিস্থিতি নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে মণিপুরের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে। বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালিয়ে প্রচুর গোলাবারুদ ও আগ্নেয়াস্ত্র বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ ও আধাসেনার যৌথ দল। এর মাঝে গত মাসের শুরুতেই মণিপুরে আরো ছয় মাসের জন্য বর্ধিত হয়েছে ‘সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন’ (‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ বা আফস্পা) এর মেয়াদ। ইম্ফল, বিষ্ণুপুর, জিরিবাম এবং লামফেলসহ ১৯টি থানা এলাকা ছাড়া গোটা রাজ্যেই এই আইনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে মণিপুরের উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে এখনো রাজনৈতিক চাপান-উতোর চলছেই। 

২০২৩ সালের মে মাস থেকে মণিপুরে যে জাতিগত হিংসা শুরু হয়েছে, তার জেরে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

যাযাদি/ এস