বিবিসির চোখে যে ৫ কারণে জিততে পারেন ট্রাম্প
প্রকাশ | ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হচ্ছে আজ মঙ্গলবার। হোয়াইট হাউসে কে যাবেন, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ধারণা এখনও করা যাচ্ছে না। জাতীয় পর্যায়ের জরিপ ও নির্বাচনের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলো নিয়ে করা জরিপে কারও তেমন এগিয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। দুই জরিপে দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমালা হ্যারিসের লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
প্রধান এই দুই প্রার্থীর একজন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি যে ৫ কারণে জয়ী হতে পারেন, তা তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। যমুনা টেলিভিশন অনলাইনের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই কারণগুলো।
ট্রাম্প ক্ষমতায় নেই:
এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের জন্য প্রধান ইস্যু অর্থনীতি। বেকারত্বের হার কম আর পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন চললেও বেশির ভাগ আমেরিকান নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য নিয়ে ধুঁকছেন। মার্কিনিরা বলছেন, প্রতিদিন তাদেরকে উচ্চ দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে লড়াই করতে হচ্ছে।
করোনা মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রে গত শতকের সত্তরের দশকের পর সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। যেটি ট্রাম্পকে এগিয়ে রাখছে। মূল্যস্ফীতিকে অস্ত্র করে বর্তমান ডেমোক্র্যাট প্রশাসনকে তুলাধোনা করছেন তিনি। এতে করে ট্রাম্পের সামনে ভোটারদের এই প্রশ্ন ছুড়ে দেয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে যে, ‘চার বছর আগে আমি যখন ক্ষমতায় ছিলাম, তার চেয়ে কি তোমরা এখন ভালো আছো?’
শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশে নির্বাচনে উচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়ে উঠেছে একটি ফল নির্ধারক বিষয়। এ কারণে অনেক দেশে সরকার বদল হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদেরও একটি বড় অংশও পরিবর্তনের জন্য মরিয়া।
বিভিন্ন জনমত জরিপে দেখা গেছে, এক–চতুর্থাংশ আমেরিকান মনে করেন, অর্থনীতি যে পথে চলছে, তা নিয়ে তারা সন্তুষ্ট। অর্থাৎ বেশির ভাগ আমেরিকান অর্থনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট নন। এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উন্নয়ন হয়েছে সেটি মনে করেন মাত্র ৩২ শতাংশ মার্কিনি। বিপরীতে ৬২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক মনে করেন দেশটির অর্থনীতির খারাপ হয়েছে।
অন্যদিকে, দুই–তৃতীয়াংশ আমেরিকান অর্থনীতির ভবিষ্যৎ ভালো দেখছেন না। কমলা হ্যারিস অবশ্য পরিবর্তনের কথা বলে আসছেন। তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ায় তিনি অজনপ্রিয় হয়ে ওঠা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের থেকে দূরত্ব রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন। দেশটির ২৬ শতাংশ মানুষ বর্তমান পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট। তবে ৭২ শতাংশ নাগরিকই দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অসন্তুষ্ট।
খারাপ সংবাদে তার কিছু যায় আসে না:
গত নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে পরাজয় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নানা বিতর্কে জড়ান ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের উসকানিতে তার সমর্থকরা ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালান। এ ঘটনায় একাধিক ফৌজদারি মামলা হয় তার বিরুদ্ধে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হন তিনি। এরপরও তার প্রতি সমর্থন কখনও ৪০ শতাংশের নিচে নামেনি।
ডেমোক্র্যাট ও যেসব রক্ষণশীল কখনও ট্রাম্পকে ক্ষমতায় দেখতে চান না, তাদের মতে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য নন। কিন্তু ট্রাম্প যে বারবার বলে এসেছেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, এর সঙ্গে বেশির ভাগ রিপাবলিকান একমত পোষণ করেন। ট্রাম্পকে এখন সেসব সিদ্ধান্তহীন ভোটারের ভোট আদায় করতে হবে, যাদের তার সম্পর্কে এখনো কোনো একটি নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিই হয়নি।
অভিবাসী নিয়ে কঠোর অবস্থান:
অর্থনীতি ছাড়াও মার্কিন নির্বাচনে আবেগতাড়িত কোনো একটি বিষয় ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডেমোক্র্যাটদের আশা, এটা হবে গর্ভপাত। তবে ট্রাম্প অভিবাসনের ওপরই বাজি ধরেছেন।
বাইডেনের শাসনামলে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের চেষ্টা রেকর্ড সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে। এর প্রভাব পড়েছে সীমান্তবর্তী ছাড়া দূরের অঙ্গরাজ্যগুলোতেও। বিভিন্ন জনমত জরিপ বলছে, অভিবাসন ও অভিবাসী সংকট সমাধানে কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্পের ওপরই আস্থা বেশির ভাগ আমেরিকানের। এ ছাড়া বিগত নির্বাচনগুলোর চেয়ে লাতিনোদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
ডিগ্রি নেই, এমন মানুষ বেশি:
ট্রাম্প ভোট চাইছেন উপেক্ষিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে। এসব জনগোষ্ঠীই যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটা পরিবর্তন এনেছেন। তারা ইউনিয়ন ওয়ার্কার্সদের মতো দীর্ঘদিনের ডেমোক্র্যাট শিবিরকে রিপাবলিকান শিবিরে পরিণত করেছেন। তা ছাড়া ট্রাম্প কর ও শুল্ক কমিয়ে আমেরিকান শিল্পের সুরক্ষা দেয়ার কথা বলছেন। ট্রাম্প যদি সুইং স্টেটস বা দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যগুলোর গ্রামীণ এলাকা ও শহরতলির ভোটারদের ভোট দিতে যদি উৎসাহী করতে পারেন, তাহলে মধ্যপন্থী ও ডিগ্রিধারী ভোটারদের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকাটা পূরণ করতে পারবেন।
অস্থির বিশ্বে ‘স্ট্রং ম্যান’ ভাবমূর্তি:
ট্রাম্পের সমালোচকরা মনে করেন, স্বৈরশাসকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর চেষ্টা করার মধ্য দিয়ে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করেছেন। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট অবশ্য মনে করেন, তাকে নিয়ে যে আগে থেকে কিছু অনুমান করা যায়, এটা তার দুর্বলতা নয়, বরং শক্তি। একই সঙ্গে ট্রাম্প এই কথা ফলাও করে প্রচার করেন যে, তিনি যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন বিশ্বে বড় কোনো যুদ্ধ বাধেনি।
যুক্তরাষ্ট্র যে ইউক্রেন ও ইসরায়েলকে শত শতকোটি ডলারের অর্থসহায়তা ও অস্ত্র দিচ্ছে, এ নিয়ে অনেক আমেরিকান ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, বাইডেনের শাসনামলে পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র দুর্বল হয়ে গেছে। ভোটারদের একটা বড় অংশ মনে করেন, কমলা হ্যারিসের চেয়ে ট্রাম্প শক্তিশালী নেতা। বিশেষ করে- সেসব পুরুষ ভোটার, যাদের জো রোগ্যানের এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কাছে টানার চেষ্টা করেছেন ট্রাম্প।
যাযাদি/ এস