বাংলাদেশের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনা তার মিত্র দেশ ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী হাসিনার যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সম্ভবত তিনি অদূর ভবিষ্যতে ভারতেই থাকতে বাধ্য হবেন।
কেননা শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, তার মায়ের আপাতত ভারত ত্যাগের কোনো ইচ্ছা নেই। এটা মনে হচ্ছে যে, হাসিনা তার দীর্ঘ স্বৈরতান্ত্রিক শ্বাসন টিকিয়ে রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিবিল্পবের কৌশল নিচ্ছেন। ২৭ আগস্ট এশিয়া টাইমস ‘হাসিনা’স লাস্ট স্টান্ড লিনস অন ইন্ডিয়া অ্যান্ড প্রো-হিন্দু মিসইনফরমেশন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এবং তার হিন্দুত্ববাদী সমর্থকদের সাথে জড়িত বলেই মনে হচ্ছে।
ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে রাশিয়া ও বেলরুশের মতো একটি পৃষ্ঠপোষকতাপূর্ণ সম্পর্কে রূপান্তর করেছে।
২০১৮ সালের নির্বাচনেও হাসিনার আওয়ামী লীগ নিজেদের নিয়ন্ত্রীত নির্বাচনের মাধ্যমে আরেকটি ভোটে জয় লাভ করে। হাসিনার এমন আচরণে তখন উত্তর কোরিয়ার কথা স্মরণ হয়। প্রায় ৯৫ শতাংশ আসনে নিজেদের ক্ষমতা পোক্ত করেছিলেন হাসিনা। সরকারি আমলা এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষালম্বন করায় আওয়ামী লীগের ওই বিজয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নজিরবীহিন প্রতারণামূলক নির্বাচন ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
নির্বাচনে জালিয়াতি করার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিন্দার ঝড় উঠলেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারই প্রথম হাসিনাকে অভিনন্দন জানায়। গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রদান করার মাধ্যমে তার শাসনকে শক্তিশালী করেছিল।
ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, সেই সময়ে ঘটে যাওয়া নির্লজ্জ ভোট কারচুপি সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন ছিল ভারত। ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে পশ্চিমারা হাসিনাকে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যাপক চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু দিল্লি বরাবরের মতোই হাসিনার পক্ষেই কাজ করতে থাকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনে সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া প্রশমিত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে ভারত। এর মাধ্যমে দিল্লি সরাসরি আরেকটি ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচনকে এগিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।
২০২২ সালে আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের সম্পর্কের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে মোমেন। তিনি সেসময় বলেছিলেন, তিনি আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় আনতে ভারতকে অনুরোধ করেছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার এক বিবৃতিতে বলেছেন, দিল্লি আছে আমরাও আছি (তিনি দিল্লির সমর্থনের দিকে ইঙ্গত করেছিলেন)। এছাড়া তিনি এ বিষয়টিও নিশ্চিত করেন যে আওয়ামী লীগের আধিপত্যের প্রতি সাংবিধানিক যে কোনো হুমকি প্রতিরোধে ভারত তাদের আশ্বস্ত করেছে।
সম্প্রতি হাসিনার ছেলে জয় বলেছেন, আগামী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপ দেবে ভারত। কেননা হাসিনার আকস্মিকভাবে ক্ষমতা থেকে ছিটকে পড়ায় ভারতীয় আধিপত্যবাদী রাজনীতি বড় একটি ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর কয়েক দিন বাংলাদেশ কার্যক্ষম সরকারহীন হয়ে পরে এবং বেশ কিছু নৈরাজ্যের সৃষ্টি হয়।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় কার্যালয় এবং থানাগুলোকে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন এবং চাঁদাবাজীর আখড়ায় পরিণত করেছিল। যাতে বছরের পর বছর অন্যায় এবং জুলুমের শিকার হওয় জনগোষ্ঠীর ভেতর এসব স্থানের ওপর আক্রোশ তৈরি হয়েছিল। এ বিষয়টিই জনতাকে থানা এবং কার্যালয়ের ওপর সহিংস হতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সহিংসতায় তারা শতাধিক থানা ও দলীয় কার্যালয় জ্বালিয়ে দেন।
শেখ হাসিনা দিল্লির একজন কট্টর সমর্থক যা এখন আনুগত্যের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। মূলত এ কারণেই ভারত ও বাংলাদেশ তাদের জনগণের দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তবে এ ক্ষেত্রে একটি ভালো বিষয় হচ্ছে, ভারতে এমন কণ্ঠস্বরও আছে যারা এ বিষয়গুলো স্বীকার করে এবং বাংলাদেশি জনগণের সাথে দৃঢ়ভাবে সংহতি প্রকাশ করে। অস্থির পরিস্থিতির এড়াতে আরও ভারসাম্যপূর্ণ এবং নীতিগত পদ্ধতির আহ্বান জানায় তারা।
যাযাদি/ এস