বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১

‘পরনির্ভর’ ‘আগ্রাসী’ নরেন্দ্র মোদি দাবি-দাওয়ার গ্যাঁড়াকলে

যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ জুন ২০২৪, ১২:২৬
নরেন্দ্র মোদি

গত ১০ বছরে দুই দফায় দিল্লির মসনদে থাকার সময় যা দেখতে হয়নি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে, এবার সেই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শক্তিক্ষয়ে দুর্বল হয়ে পড়া বিজেপি ব্যর্থ হয়েছে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে। তাই ‘পরনির্ভর’ নরেন্দ্র মোদিকে এবার ভরসা করতে হচ্ছে জোটসঙ্গীদের ওপর। আর সুযোগ পেয়েই এনডিএর শরিকরাও নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হয়েছেন দিল্লিতে। কেউ হতে চাচ্ছেন স্পিকার, কাউকে প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে উপ-প্রধানমন্ত্রীর, বেশ কয়েকটি দল থেকে মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য করার দাবি উঠেছে। সব মিলিয়ে নতুন নতুন সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে মোদিকে।

আর এইসব দাবি-দাওয়ার গ্যাঁড়াকলে পড়া ‘আগ্রাসী’ নরেন্দ্র মোদিকে এবার সামনে এগোতে হবে সবাইকে মানিয়ে নিয়ে। অনেক দাবিই মানা কঠিন হয়ে যাচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বের, তারপরও কাউকে ফেরাতে পারছেন না। বিশেষ করে অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নাইডু ও বিহারের নীতীশ কুমারকে কোনোভাবেই ছাড়ার উপায় নেই বিজেপির। কারণ তারা সরলেই বিজেপির টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকার গঠনের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। এসবের মধ্যে বুধবার বিকেলে দিল্লিতে বসেছে ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স বা এনডিএর বৈঠক। সেখানে জোট প্রধান নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও অংশ নিয়েছেন বিজেপির শীর্ষ ও শরিক দলগুলোর নেতারা। অবশেষে সবাই একমত হয়েছেন সরকার গঠনে। মোদিই তাদের প্রধানমন্ত্রী।

৪০০ আসন পাওয়ার ঘোষণা দিয়ে এবার ভোটের নামে মোদির নেতৃত্বে এনডিএ। কিন্তু গত তিনটি নির্বাচনের মধ্যে বিজেপি এবার সবচেয়ে খারাপ ফলাফল করেছে। ৫৪৩ আসনের মধ্যে এনডিএ পেয়েছে ২৯২ আসন, আর বিজেপি একা পেয়েছে ২৪০ আসন। কিন্তু ১০ বছর আগেও এই চিত্র ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ২৭২ এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৩০৩ আসন পায় বিজেপি একাই। ভারতে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ২৭২ আসন।

গত দুইবার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা সরকার গঠন করায় যে দাপট দেখিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, এবার আর তা হচ্ছে না। মোদি হয়ে পড়েছেন নির্ভরশীল। উত্তরপ্রদেশসহ বিজেপির বিভিন্ন ঘাটি হারিয়ে যাওয়ায় শরিকরা কতদিন পাশে থাকবে তা নিয়ে জল্পনা চলছে। এনডিএ শিবিরেও উৎকণ্ঠা ও আশঙ্কার চোরা স্রোত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিকে কৌশলী মন্তব্যে জল্পনা বাড়িয়েছেন চন্দ্রবাবু নাইডু। নীতীশের দাবি দাওয়া নিয়েও পরিষ্কার নয় বিজেপির শীর্ষ মহল। সবমিলিয়ে, শরিকনির্ভর মোদি সরকার তৃতীয় মেয়াদের মন্ত্রিসভার কেমন হবে তা নিয়ে এখনো সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

শঙ্কা আঁচ করতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদি নিজেও। তাই ভোটের ফল পেয়ে মঙ্গলবার রাতে মোদির আগাগোড়া ভাষণে বিজেপির থেকে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে এনডিএ। তিনি বার বার এটাই বোঝাতে চেয়েছেন, শরিকদের নিয়েই সরকার গড়বেন তিনি। সরকার গড়া নিয়ে নীতীশের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। প্রয়োজনে তাকে উপপ্রধানমন্ত্রী করার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু নীতীশ তার দল জেডিইউ থেকে আরো কয়েকজনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বানানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।

নীতীশের মতোই নাইডুকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু নাইডুকে মানানো কঠিন হতে পারে। কারণ ২০১৪ সালে মোদির ক্ষমতায় আসার অন্যতম কারিগর ছিলেন নাইডু। তখন এনডিএ জোটে থাকলেও পরে মোদির সঙ্গে রাজ্যের বরাদ্দ নিয়ে বনিবনা না হওয়া চার বছর পর জোট ছেড়ে বেরিয়ে যান তিনি।

ভোটের আগে নাইডুকে আবার ফেরানো হয় এনডিএ জোটে। কিন্তু এবার সুযোগ বুঝে নানান দাবি নিয়ে দিল্লি হাজির হয়েছেন নাইডু। যাওয়ার আগে অন্ধ্রপ্রদেশে সংবাদ সম্মেলনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করা নিয়ে রহস্যজনক মন্তব্য করায় জল্পনা আরো বেড়েছে।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো খবর দিয়েছে যে, চন্দ্রবাবু নাইডু লোকসভার স্পিকার হতে চান। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে চলছে দরকষাকষি। সঙ্গে রয়েছে নিজের রাজ্যের জন্য প্যাকেজ। নাইডুর আরও দাবি যে, তার দল টিডিপি থেকে কয়েকজনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেওয়া হোক।

শিবসেনা গোষ্ঠী একনাথ শিন্দে একজন পূর্ণমন্ত্রী এবং দুটি প্রতিমন্ত্রী দাবি করেছেন। চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বাধীন লোক জনশক্তি পার্টি (রাম বিলাস) একজন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রী পদের জন্য চাপ দিতে শুরু করেছেন। এছাড়া এইচএএম (এস) প্রধান জিতম রাম মাঞ্জি নতুন সরকারে মন্ত্রী হওয়ার জন্য দর হাঁকাচ্ছেন।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
X
Nagad

উপরে