রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১

সীমিত পরিসরে চালু ইন্টারনেট  

যাযাদি রিপোর্ট
  ২৪ জুলাই ২০২৪, ১১:০২
-ফাইল ছবি

টানা প্রায় ৫ দিন বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা সীমিত পরিসরে চালু করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাবে ব্যাংকিংসহ অন্য ওয়েবসাইট। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন সেবা ব্যবহারে সীমিত করা হয়েছে।

তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, গত সোমবার থেকেই সীমিত পরিসরে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু চেষ্টা চলছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে স্বল্পপরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। তবে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবাইকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এর আগে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্র জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট কিছু সাইট বন্ধ রেখে ইন্টারনেট সেবা চালু রাখা যায় কিনা তা পরীক্ষামূলকভাবে দেখা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার রাত থেকে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হতে পারে। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালুর বিষয়ে কোনো কথা জানা যায়নি। সে হিসেবে আজ থেকে সব ধরনের অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু হতে পারে।

কদর বেড়েছে পত্রিকা ও টেলিভিশনের!

সীমিত পরিসরে ইন্টারনেট সেবা চালু হলেও গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। ফলে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ভিত্তিক সব ধরনের সেবা, অ্যাপস ও ওয়েবসাইট বিশেষ করে অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেসবুক ও ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সাইট ব্যবহার করা যায়নি। বন্ধ ছিল ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেঞ্জারের মতো ব্যক্তিগত অ্যাপসগুলোও।

তাই চাইলে আগের মতো তথ্য-আদান প্রদান বা কোনো খবর জানতে পারছিল না সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতি চলমান ঘটনাপ্রবাহ ও সংবাদ তথ্য প্রাপ্তির নির্ভরযোগ্য উৎস হয়ে ওঠে পত্রিকা ও সাটেলাইটভিত্তিক টেলিভিশন। জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরেই সারাদেশে হকারের কাছে পত্রিকা খুঁজছেন সাধারণ মানুষ। সড়কের পাশে দেওয়ালে লাগানো পত্রিকা পড়তে দেখা গেছে ভিড়। অন্যদিকে যেসব বাসাবাড়ি ও দোকানে টিভি রয়েছে সেখানেও নিয়মিত খবর দেখছেন অনেকেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ২০ বছরে এই প্রথম এত দীর্ঘসময় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ ছিল। ফলে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ ও তথ্য পেতে পত্রিকা ও টিভির ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে। অন্যদিকে তথ্য আদান-প্রদানের সব উৎস বন্ধ থাকায় ইন্টারেনেট পূর্ব যুগের মতো করে সংবাদ সংগ্রহ করে পত্রিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে সারাদেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে সংবাদ শুনে কাগজে লিখে তারপর কম্পিউটারের টাইপ করে ছাপা হচ্ছে মফস্বলের খবর। একইভাবে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে কর্মরত রিপোর্টাররা বিভিন্ন ঘটনা হাতে লিখে বা মোবাইলে রেকর্ড করে অফিসে এসে তা টাইপ করছে। ছবির ক্ষেত্রেও তা কেবল নিজস্ব ফটোগ্রাফার নির্ভর।

এদিকে কখন ইন্টারনেট চালু হবে তা জানার জন্য পাঠক সংবাদপত্রের অফিসে ফোন দিয়েছেন এবং সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করেন। তবে এ সময় পত্রিকাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ হওয়ায় তাদের চাহিদা কিছুটা পূরণ হয়েছে। তাই অনেকেই প্রতিদিনের পত্রিকা কিনছেন এবং রাজধানীর বিভিন্ন দেওয়ালে টাঙানো পত্রিকার ওপর নজর রাখেন।

এ প্রসঙ্গে রাইজিং বিডির সাংবাদিক মামুন খান বলেন, ‘আমরা এখন ঘরবন্দি। নিউজ পোর্টাল বন্ধ থাকায় অনেকটা পত্রিকা ও টেলিভিশন রিপোর্টের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যেহেতু আমি নিউজপোর্টালের রিপোর্টার তাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমার কোনো কাজ নেই।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, ‘সব বন্ধ, কোনো খবর পাচ্ছি না। যার কারণে আমি প্রতিদিন পত্রিকা পড়তে বাধ্য হচ্ছি, কি আর করা। কিছু তো খবর পাওয়া যাচ্ছে পত্রিকায়।’

মূলত কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। যার অন্যতম ছিল মহাখালীর খাজা টাওয়ারের ইন্টারনেটের ডাটা সেন্টার। যার ফলে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। জানা গেছে, খাজা টাওয়ার থেকেই মোট চাহিদার ২০ শতাংশ ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হয়। মূলত চলমান সহিংসতা ঘিরে সব ধরনের গুজব বন্ধে সরকার ইন্টারনেট সেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

বর্তমানে প্রায় সব মানুষের হাতেই রয়েছে স্মার্টফোন, রয়েছে ইন্টারনেট সংযোগ; ঘরে ঘরে ওয়াইফাই সংযোগ। প্রতি মুহূর্তেই মানুষ সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউভে সক্রিয় থাকেন। এসব সেবা এখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে এসব বন্ধ থাকায় অস্বস্তিতে সময় কাটছে তাদের। বারবার নিজের স্মার্টফোন ওপেন করে দেখছেন ইন্টারনেট সংযোগ আসছে কিনা। কখন আসবে এ অপেক্ষায় তাদের সময় যেন কাটছে না।

যাযাদি/ এস

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে