দুর্নীতি-অনিয়মের আঁখড়া সোনাইমুড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
প্রকাশ | ৩০ অক্টোবর ২০২৪, ১৩:৫২
দুর্নীতি-অনিয়মের আঁখড়া নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্স।
জানা যায়, রোগীর রেজিস্ট্রারে ভুয়া নাম অর্ন্তভুক্ত করে খাবারের বিল উত্তোলন, হাসপাতালের বরাদ্ধকৃত ঔষধ আত্মসাৎ এবং বকশিসের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ নানাভাবে রোগীদের হয়রানি করা হয়।
অনেক রোগীর স্বজনরা প্রতিবেদকের কাছে এই অভিযোগ করেন।
জানা যায়, গত ২১ অক্টোবর দুপুরে প্রসব ব্যাথা নিয়ে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে আসেন ঘোষকামতা গ্রামের রিক্সাচালক শাহজাহানের স্ত্রী সীমা আক্তার (১৮)। কিন্ত সেখানে সুচিকিৎসা না পেয়ে পরে স্থানীয় নিউ নূরানী হাসপাতালে নরমালে সন্তান প্রসব করেন তিনি।
কিন্তু তিনি চিকিৎসা না পেলেও সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তিকৃত রোগীর তালিকায় (রেজিস্ট্রেশন নং- ৬০৪৫/৫) তার নাম অর্ন্তভূক্ত করে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসানপুরের অটোচালক সবুজ জানান, ১৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মিতু আক্তার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসব করেন। প্রসব পরবর্তী হাসপাতালের স্টাফরা তার কাছে ৩ হাজার টাকা বকশিস দাবি করলে তিনি ৫’শ টাকা দেন।
একই অভিযোগ করেন ধন্যপুরের আল-আমিন, তিনি জানান, ২৫ অক্টোবর দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করেন তার স্ত্রী আবিদা ইসলাম (২২)। হাসপাতালের ডেলিভারি বিভাগে তার স্ত্রীর রেজিস্ট্রেশন নং ৫৯৯৪/৬। কিন্ত বাচ্চা প্রসবের পর ডাক্তার-নার্সরা তার কাছে ৫ হাজার টাকা বকশিস দাবি করেন। পরে ৪ হাজার টাকায় ডাক্তার-নার্সদের সাথে বিষয়টি রফা করেন তিনি।
শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে খাবার সরবরাহকারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান ট্রেডার্সের সাথে যোগসাজশে ভুয়া রোগী দেখিয়ে অতিরিক্ত খাবারের বিল উত্তোলন ও টাকা আত্মসাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক স্টাফ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইসরাত জাহান যোগদানের পর হাসপাতালে ডেলিভারী বিভাগ চালু করেন। সরকারিভাবে রোগীদের জন্য বিনামূল্য ঔষধ প্রদানের নিয়ম থাকলেও তা-না করে বরং প্রেসক্রাইবকৃত ঔষধ কিনতে চুক্তিভিত্তিক স্থানীয় একটি ফার্মেসীতে পাঠানো হয় রোগী ও তার স্বজনদের।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহের টেন্ডার নেন খান ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী জহির খান। পরে তিনি নামমাত্র আদালতে একটি মামলা দায়ের করে গত ১৮ বছর টেন্ডার ছাড়াই হাসপাতালের রোগীদের নিন্মমানের খাবার সরবরাহ এবং বিল উত্তোলন করে চলেছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আর এম ও) ডা. রিয়াজ উদ্দিন জানান, হাসপাতালে ভুয়া রোগী ভর্তি দেখিয়ে অতিরিক্ত খাবারের বিল বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পাওয়া যায়নি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. ইসরাত জাহানকে। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি ছুটিতে রয়েছেন বলে হাসপাতালের স্টাফরা জানান।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, ইতোমধ্যেই এধরনের অভিযোগ পেয়েছি। সম্প্রতি হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে এব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যাযাদি/ এস