২০ বছর ধরে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহ

প্রকাশ | ১৭ মে ২০২৪, ১১:২৪

সোনাইমুড়ী (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
ছবি-যায়যায়দিন

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী  উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে কতিপয় কর্মকর্তা, কর্মচারী রোগীর মধ্যে খাবার বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে টানা ২০ বছর ধরে ঠিকাদারি করে আসছেন একই প্রতিষ্ঠান। এতে মানসম্মত খাবার সরবরাহ নিশ্চিত হচ্ছে না বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ দীর্ঘ বছরের। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি এধরনের অনিয়ম করে আসছে। ২০০৬ সালে নোয়াখালী সদর উপজেলার খান ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারী জহির খান সিন্ডিকেটের মাধ্যমেএই হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহের টেন্ডার নেন। পরে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তিকে সাথে নিয়ে খাদ্য সরবরাহের পাওনা টাকার দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলা দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে টেন্ডার প্রক্রীয়া বন্ধ করে রেখেছে চক্রটি। যার কারণে মামলা চলাকালিন অবস্থায় একই প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ২০ বছর থেকে এই হাসপাতালের রোগীদের নিম্নমানের  খাদ্য সরবরাহ করার অভিযোগ রয়েছে।

 নির্ধারিত পরিমাণের চাইতে কম এবং নিম্নমানের খাবার দেয়ার অভিযোগ করেছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। 

খাবারের এমন অনিয়মের কারণে চিকিৎসা নিতে আসা সোনাইমুড়ীর মাহোতোলা এলাকার শাহজাহান বলেন, প্রতিপক্ষের হামলায় আহত হয়ে গত দুই দিন থেকে ভর্তি  হাসপাতলে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের কারণে বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়। হাসপাতালে ১৪ নং বেডে ভর্তি আছেন ৬০ বছরের আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে যে খাবার দেওয়া হয় তা মুখে নেওয়া যায় না। এজন্য বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার খান। 

আরেক রোগীর নাম আবুল কালাম। বয়স ৭০ বছর। বুকে ব্যাথা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৬ নাম্বার বেডে। পরিক্ষা-নিরিক্ষার পর তার কিডনির সমস্যা ধরা পড়ে। সোমবার দুপুরে খাবার হিসেবে তাকে দেওয়া হয় লাউ, মুরগির মাংস। খেতে না পেরে পাশেই খাবার প্লেট রেখে দিয়েছেনে। 

জানা যায়, একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন খাবারে সরকারী ভাবে ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে নিম্নমানের  খাবার সরবরাহ করায় তা খেতে পারেন না অধিকাংশ রোগীরা। অনেকেই খাবার না খেয়ে ফেলেদেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতাল থেকে খাবার না নিয়ে বাড়ি থেকে এনে খান। দরপত্র অনুযায়ী একজন রোগীর সকালের জন্য প্রতিদিন রুটি, একটি কলা, একটি ডিম ও ২৫ গ্রাম চিনির জন্য মোট ৩৬ টাকা ২৫ পয়সা বরাদ্দ রয়েছে। দুপুরে ও রাতে চিকন চালের ভাত, কারফু বা রুই মাছ, খাশি বা ব্রয়লার মুরগির মাংস, মুগডাল, ফুলকপি, গোলআলু, শিম ও পটল সহ সর্বমোট ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাবার সরবরাহে মোটা চাল, নিম্ন মানের কলা, রুটি সরবরাহ করা হয়। অধিকাংশ রোগীরাই মোটা ভাত খেতে পারেন না।

সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আবুল খায়ের অভিযোগ করে জানান, এ হাসপাতালে প্রধান কর্মকর্তা,আরএমওর যোগসাজসে রোগীদের খাদ্য সরবরাহে অনিয়ম হচ্ছে।প্রতিদিন রোগীদের খাদ্য পরিমাপ করা হয় না। খাদ্যের মান যাচাইও করেন না। মাসে মাসে এসব কর্মকর্তাদের নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিয়েই ম্যানেজ করে রেখেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন। আর বাবুর্চি নিম্নমানের তৈল, মসলা দিয়েই রান্না করছে এসব খাদ্য। ঠিকাদার এখানে তেমন আসেন না। লোকজন দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করেন। 

সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাবুর্চি ওহিদুল আলম জানান, মাইজদি থেকে খান নামক একটি প্রতিষ্ঠান গত ২০ বছর থেকে রোগীদের খাবার সরবরাহ করে আসছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পাওনা টাকার দাবিতে একটি মামলা থাকায় টেন্ডার হচ্ছেনা। মামলা নিস্পত্তি করার জন্য কারো মাথা ব্যাথা নেই। দলীয় লোকজন ফায়েদা লুটতে একটি গ্রুপ টেন্ডার হতে দেয় না। তাকে যা দেওয়া হয় তা দিয়েই তিনি খাবার রান্না করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের খাদ্য সরবরাহকারী প্রষ্ঠিান খান গ্রুপের স্বত্বাধিকারী জহির খান জানান, রোগীদের সিডিউল মোতাবেক খাবার সরবরাহ করছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা তা তদারকি করছেন। বকেয়া পাওনা থাকায় আদালতে মামলা রয়েছে বিধায় টেন্ডার হচ্ছে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডাক্তার রিয়াজ উদ্দিন বলেন, খাদ্য সরবরাহের কোন অনিয়ম নেই। যদি কোন অভিযোগ পান তাহলে আমাদের জানান। তবে একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ২০ বছর ধরে খাদ্য সরবরাহ করছে এটা সত্য। 

নিম্ন মানের খাবার ও দীর্ঘদিন টেন্ডার প্রকৃয়া বন্ধ থাকার বিষয়ে প্রতিবেদকের কথা হয় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইসরাত জাহানের সাথে। তিনি মুঠোফোনে জানান, যে খাবার দেওয়া হয় তা নোয়াখালী জেলার অন্য সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ভালো। এখানে ওজন মেপে খাবার দেওয়া হয়। মামলা থাকায় টেন্ডার প্রকৃয়া বন্ধ রয়েছে। তবে কত বছর টেন্ডার হচ্ছে না তা স্পষ্ট করে জানাননি।

নোয়াখালী জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুম ইফতেখার বলেন, রোগীদের খাবার সরবরাহে অনিয়ম রয়েছে তা জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। 

যাযাদি/ এস