শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দেশে তিন কারণে সেরিব্রাল পালসি রোগ : ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৪ নভেম্বর ২০২০, ১৯:৩৫
আপডেট  : ১৪ নভেম্বর ২০২০, ২১:২৮

দারিদ্র্য, অশিক্ষা ও নারীর প্রতি অবহেলা এই তিন কারণে বাংলাদেশে সেরিব্রাল পালসি (মস্তিষ্কের অবশভাব) রোগের বিস্তৃতি বেশি বলে জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শনিবার দুপুরে ধানমণ্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে সেরিব্রাল পালসির সার্জিক্যাল চিকিৎসা সংক্রান্ত এক সেমিনারে তিনি এ তথ্য জানান।

ডা. জাফরুল্লাাহ চৌধুরী বলেন, ‘পুষ্টিহীনতা ও নারীদের সন্তান প্রসবের সময় পর্যাপ্ত অক্সিজেন না পাওয়া এই দুটি সমস্যার কারণে নবজাতকের সেরিব্রাল পালসি রোগ হতে পারে। তাই আমাদের প্রথম কাজ হবে এটি প্রতিরোধ করা। যদি রোগটি হয়ে যায় তাহলে সার্জিক্যাল অপারেশনে তা ভালো হয়। যার চিকিৎসা খুবই ব্যয়বহুল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই অপারেশনে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা খরচ নেয়। তবে আমরা (গণস্বাস্থ্যকেন্দ্র) ১ লাখ টাকায় এ চিকিৎসা দিচ্ছি।

সেমিনারের অন্য বক্তারা বলেন, ফেসিয়াল পালসির অর্থ হলো ফেসিয়াল নার্ভ প্যারালাইসিস (মুখ বেঁকে যায়, চোখ খোলা থাকে)। সেরিব্রাল পালসিও ওই রকম একটা রোগ। যেখানে মস্তিষ্কের কিছু কিছু অংশ নষ্ট হতে থাকে বা নষ্ট হয়ে যায়। সহজে সেরিব্রাল পালসি বলতে আংশিক ব্রেইন প্যারালাইসিস বোাঝায়।

সভায় চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, সাধারণত জন্মের পর পর নবজাতক ভালোভাবে নিশ্বাস নিতে না পারলে শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দেয়। এই অক্সিজেন স্বল্পতায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মস্তিষ্ক। দেশে প্রতি ১ হাজার বাচ্চার মধ্যে ৩ দশমিক ৫ জন বাচ্চা সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত হয়। যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি। এই রোগীদের অধিকাংশের খিঁচুনি হয়। যখন খিঁচুনি হয় তখন বাচ্চা নিশ্বাস নিতে পারে না। এভাবে বার বার খিঁচুনি হলে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়ে থাকে।

এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা হাবাগোবা হয়, হাঁটাচলা করতে পারে না, তাদের ঘাড় শক্ত হয় না, অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে না, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, শক্ত খাবার খেতে পারে না, রোগ যখন তীব্র হয় তখন বাচ্চা তরল খাবারও খেতে পারে না। অনেক বাচ্চা কথাও বলতে পারে না, অনেক রোগী চোখে দেখে না, অনেক রোগীর হাত-পা শক্ত হয়ে যায় এবং তারা নিজে নিজে চলাফেরা করতে পারে না।

সেরিব্রাল পালসির কারণ :

১. জন্মকালে ব্রেইনে অক্সিজেন স্বল্পতা

২. ব্রেইনে সংক্রমণ

৩. ২৮ সপ্তাহের পূর্বে বাচ্চার জন্মগ্রহণ

৪. জন্মের পর অল্প ওজন থাকা

৫. গর্ভাবস্থায় ভাইরাস সংক্রমণ

বাংলাদেশে উদ্ভাবিত অপারেশন পদ্ধতি :

এই অপারেশনের ক্ষেত্রে রোগীকে অজ্ঞান করে কানের এক পাশ থেকে অপর পাশ পর্যন্ত কেটে মাথার চামড়া পুরোটুকু কেটে মাথার খুলি উন্মুক্ত করা হয়। তারপর মাথার খুলির দুই পাশ কেটে নেওয়া হয়। এরপর মাথার খুলির প্লাস্টিক সার্জারি করে পুনরায় প্রতিস্থাপন করা হয়। মাথার খুলি যখন অপারেশন করা হয় তখন ব্রেইনের পর্দা বা আবরণ বা ডুরামিটার কেটে আর্টিফিশিয়াল পর্দা লাগিয়ে দেওয়া হয়। যাতে ব্রেইন বাড়ার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায়। পরবর্তীতে সবকিছু জায়গামতো প্রতিস্থাপন করে চামড়া সেলাই করে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, বিশ্বে প্রথম বাংলাদেশে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. ফরিদুল ইসলাম গত ১ নভেম্বর খুলি কেটে সফল অস্ত্রোপচার সম্পূর্ণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে