সুসময়ে মেহজাবীন
সুন্দরী অন্বেষণের প্রতিযোগিতা লাক্স সুপারস্টার-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে শোবিজে পা রাখেন মেহজাবীন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত 'তুমি থাকো সিন্ধুপারে'। এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর তিনি একে একে কাজ করেন 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই', 'কল সেন্টার', 'মেয়ে শুধু তোমার জন্য', 'আজও ভালোবাসি মনে মনে', 'হাসো আন লিমিটেড'সহ বেশ কিছু নাটকে।
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ্ রাকিব
টিভি পর্দায় বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল অভিনেত্রী মেহজাবীন। প্রথম সারির সব অভিনেতার সঙ্গে চুটিয়ে কাজ, আর দর্শকদের তুমুল ভালোবাসায় তিনি পেয়েছেন তারকাখ্যাতি। ছোট পর্দার বড় তারকা তিনি। সুন্দরী অন্বেষণের প্রতিযোগিতা লাক্স সুপারস্টার-এর চ্যাম্পিয়ন হয়ে শোবিজে পা রাখেন মেহজাবীন। তার অভিনীত প্রথম নাটক ছিল ইফতেখার আহমেদ ফাহমি পরিচালিত 'তুমি থাকো সিন্ধুপারে'। এ নাটকে তার বিপরীতে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ। এরপর তিনি একে একে কাজ করেন 'মাঝে মাঝে তব দেখা পাই', 'কল সেন্টার', 'মেয়ে শুধু তোমার জন্য', 'আজও ভালোবাসি মনে মনে', 'হাসো আন লিমিটেড'সহ বেশ কিছু নাটকে। মেহজাবীন সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পান মিজানুর রহমান আরিয়ান পরিচালিত 'বড় ছেলে' নাটকে অভিনয় করার পর। এই নাটক পুরো দেশজুড়ে আলোড়ন তৈরি করে। সেই সুবাদে মেহজাবীন ও অপূর্ব হয়ে ওঠেন টিভি দুনিয়ার ক্রেজ। তারপরও গত দুই বছর ধরে টিভি নাটকে অভিনয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। টিভি নাটক না করার এক প্রকার ঘোষণা দিয়েই এই লাক্সকন্যা বলেছিলেন, 'টিভি নাটকের গল্প ও চরিত্র প্রায় একই ধরনের। এ কারণে টিভি নাটকে কাজ করতে এক ধরনের একঘেয়েমি চলে এসেছে। বরং এখন ওটিটিতে ভালো ভালো কন্টেন্ট ও ব্যতিক্রমী চরিত্র থাকছে। সেগুলোতে কাজ করার যেমন অবাধ সুযোগ থাকছে, তেমনি এসব চরিত্রে কাজ করতেও ভালো লাগছে। দর্শকও এসব সিরিজগুলো বেশ সানন্দে উপভোগ করছেন। তারপরও মাঝে মধ্যে টিভি নাটকে ধরা দেন এ অভিনেত্রী।
বর্তমানে মেহাজাবীন ব্যস্ত রয়েছেন ওটিটি ও তার চলচ্চিত্র 'সাবা'কে ঘিরে। বিশ্বখ্যাত টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে এবার দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে লাল-সবুজের পতাকা এঁকে দিলেন তিনি। বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের লাল ব্যানারে সবুজ শাড়িতে মেহজাবীন যেন আস্ত একটা বাংলাদেশ! মাকসুদ হোসেন পরিচালিত এবং মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত 'সাবা' ২৯তম বুসান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের 'অ্যা উইন্ডো অন এশিয়ান সিনেমা' বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে। গত ৪ অক্টোবর স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে সিজিভি সেন্টাম সিটি থ্রি-তে 'সাবা'র প্রদর্শনী হয়। এরপর গত ৬ অক্টোবর স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় বিকাল ৫টা ৩০ মিনিট) লট্টে সিনেমা সেন্টাম সিটি সেভেনে আবারও দেখানো হয় ছবিটি। সেখানেও মিলেছে মুহুর্মুহু করতালি। উপস্থিত দর্শকদের সামনে এদিন ছবিটি সম্পর্কে নির্মাতা-অভিনেত্রী কথা বলেছেন প্রাণ খুলে।
সবশেষে ৯ অক্টোবর দুপুর ২টায় লট্টে সিনেমা সেন্টাম সিটি এইটে দর্শকরা আরেকবার উপভোগ করেন 'সাবা'। বুসানে অংশ নিয়ে মেহজাবীন চৌধুরী কতটা মুগ্ধ, সেটির প্রতিচ্ছবি মিলেছে তার সোশ্যাল হ্যান্ডেলের মাধ্যমে। মিস চৌধুরী বলেন, 'আমাদের সিনেমা এখানে প্রদর্শন করতে পারা অনেক বড় সম্মানের বিষয়। ছবিটি দেখে এখানকার মানুষের প্রতিক্রিয়ায় আমি মুগ্ধ।'
২০২২ সালে বুসানের এশিয়ান প্রজেক্ট মার্কেটে স্থান পায় 'সাবা'। ৪৯তম টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের ডিসকোভারি প্রোগ্রামে নির্বাচিত হয় ছবিটি। টরন্টোর স্কটিয়াব্যাংকে গত ৭ সেপ্টেম্বরের ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়। এর আগেই সাংবাদিকদের জন্য ছিল একটি প্রদর্শনী। একই ভেনু্যতে ৯ সেপ্টেম্বর ও ১৪ সেপ্টেম্বর এই সিনেমার আরও দুটি টিকিট প্রদর্শনী হয়েছে। 'সাবা'য় নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। সিনেমাটির সহ-প্রযোজক তিনি। ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের গল্পটিতে দেখা যায়, ২৫ বছর বয়সি সাবা ঢাকায় মাকে নিয়ে থাকে। তার মা শিরিন একটি দুর্ঘটনার পর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। সংসারের হাল ধরতে চাকরি করে সাবা। এদিকে শিরিন হার্ট অ্যাটাক করলে তার চিকিৎসার ব্যয় মেটানো সাবার জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। মায়ের অস্ত্রোপচারের জন্য টাকা কীভাবে জোগাড় করবে সেসব ভেবে দিশেহারা হয়ে যায় সাবা। এর মধ্যে মেয়েটির জীবনে আশার আলো হয়ে আসে অঙ্কুর।
পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক মায়ের প্রতি মেয়ের যত্নশীল এই চরিত্রটি ছিল মেহজাবীনের কাছে আবেগের নাম। অভিনয়ের সময়েও যেমন তিনি আবেগাপস্নম্নত হয়েছেন, তেমন সিনেমাটি দেখেও অনেক দর্শকের সঙ্গে কেঁদেছেন। যে কারণে তার চরিত্রকে অনেক সাহসী হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন এই অভিনেত্রী। মেহজাবীন বলেন, 'সিনেমাটির জন্য অনেক রিহার্সাল করেছি। কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। এটা একই সঙ্গে আমার পরিচালকের শাশুড়ির কথা, চিত্রনাট্যকারের মায়ের গল্প। যে কারণে অনেক গভীরভাবে চরিত্র সম্পর্ককে আলোচনা করতে পেরেছি।' ১২ বছর ধরে আমি বিভিন্ন রকম নাটকের চরিত্রে অভিনয় করেছি। কিন্তু আমি এই সময়ে কখনোই সিনেমার গল্প পছন্দ করিনি। আমি সব সময়ই অপেক্ষা করেছি এ রকম একটি চরিত্রের জন্য, যে চরিত্রটি ভার বহন করে। যেটা হবে একেবারেই আলাদা। যে চরিত্রে দর্শক আগে আমাকে দেখেননি, সেটাই বলবেন দর্শক। পরে পরিচালক মাকসুদের প্রস্তাব ও সিনেমাটি নিয়ে আত্মবিশ্বাস আমাকে আকৃষ্ট করেছে।'