ক্যারিয়ারের তিন দশক পেরিয়ে আমিন খান
প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মাসুম বিলস্নাহ্ রাকিব
এক সময়ের ব্যস্ত চিত্রনায়ক আমিন খান। অভিনয় জীবনে অসংখ্য ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। নিজের মেধা ও অভিনয় দক্ষতা দিয়ে পেয়েছিলেন তারকাখ্যাতি। ঢাকায় সিনেমার সবচেয়ে ভদ্র তারকা হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয় আমিন খানকে। আবার তার নামের পাশে অভিযোগ আছে প্রচুর অশ্লীল সিনেমায় অভিনয় করার। বর্তমানে বড় পর্দায় নিয়মিত নন আমিন খান। এই অভিনেতা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের তিন দশকেরও বেশি সময় অর্থাৎ ৩১ বছর পূর্ণ করেছেন। ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত 'সনি কথাচিত্র' প্রযোজিত 'অবুঝ দুটি মন' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হয়।
এর আগে ১৯৯০ সালে 'নতুন মুখের সন্ধানে' আমিন খানেরই চাচা (প্রয়াত) আবু হাসান খানের অনুপ্রেরণায় এই প্রতিযোগিতায় নিজের নাম লেখান। ১৯৯২ সালের ২৪ ডিসেম্বর আমিন খানেরই জন্মদিনে তার প্রথম চলচ্চিত্রের শুটিং শুরু হয়েছিল। শেষ হয় ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই। ১৯৯৩ সালের ১ অক্টোবর সারাদেশের ৮০টি সিনেমা হলে 'অবুঝ দুটি মন' মুক্তি পেয়েছিল। অবুঝ দুটি মন মুক্তির আগেই আমিন খান বাদল খন্দকারের 'দুনিয়ার বাদশা' চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন। তার তৃতীয় চলচ্চিত্র এফ আই মানিকের 'বীর সন্তান'। প্রথম চলচ্চিত্রে তার নায়িকা ছিল চাঁদনী।
আমিন খানের প্রথম চলচ্চিত্রের 'স্বর্গ হতে এই জগতে তুমি এসেছো আমি এসেছি' গানটি সে সময় দারুণ জনপ্রিয়তা লাভ করে। মৌসুমীর বিপরীতে প্রথম আমিন খান 'আম্মাজান' চলচ্চিত্রে, শাবনূরের বিপরীতে দীলিপ সোমের 'হৃদয় আমার', পপির বিপরীতে একই পরিচালকের 'তোমার জন্য ভালোবাসা' এবং পূর্ণিমার বিপরীতে বাদশা ভাইর 'কালস্নু মামা' চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তাদের সঙ্গে আরও বহু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। আমিন খান অভিনীত আলোচিত চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে 'তোমার আমার প্রেম', 'ঠেকাও মাস্তান', 'মুখোমুখি', 'ফুল নেবো না অশ্রম্ন নেবো', 'হৃদয়ের বন্ধন', 'বিপজ্জনক', 'টোকাই থেকে হিরো', 'মরণ কামড়', 'চাকরের প্রেম', 'বিরোধী দল', 'আজ গায়ে হলুদ' ইত্যাদি।
চলচ্চিত্রে অভিনয়ের দীর্ঘ এই পথচলা প্রসঙ্গে আমিন খান বলেন, 'শুরুতেই মহান আলস্নাহর কাছে অসীম কৃতজ্ঞতা, আমার বাবা-মায়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা, কারণ তাদের কারণে এই সুন্দর পৃথিবীতে আসা। আমার চাচা আবু হাসান খানের প্রতিও বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ, কারণ তিনি আমাকে নতুন মুখের সন্ধানে নাম দেওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞ মোহাম্মদ হোসেন ভাইয়ের প্রতি, কারণ তিনি তার প্রযোজনা সংস্থা থেকে আমাকে নিয়ে প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে বাদল খন্দকার, এফ আই মানিক, মনতাজুর রহমান আকবরসহ আরও অনেকেই আমাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। সব পরিচালক, প্রযোজক, আমার সহশিল্পী, সিনেমাটোগ্রাফারসহ সংবাদমাধ্যম ও দর্শকের প্রতি আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।'
তবে ২০১০ সালের পর আর সেভাবে পর্দায় দেখা যায়নি আমিন খানকে। বর্তমানে ব্যস্ত চাকরি আর পরিবার নিয়ে। কিন্তু রুপালি পর্দার ছায়া আজও তাকে তাড়া করে বেড়ায়। এ প্রসঙ্গে আমির খান বলেন, সিনেমার জীবনটা খুব মিস করি। ওটাই আমাকে নতুন জন্ম দিয়েছে। নায়ক আমিন খান হয়েই বাঁচতে ইচ্ছে করে। কিন্তু এমন কি হয়েছিল যে, সিনেমাজগত থেকে একেবারে দূরে চলে গেলেন? জানা গেছে, সিনেমা জগতের নোংরা পলিটিক্সের কারণেই তাকে দূরে সরে যেতে হয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে আমিন খান বলেন, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমিও অনেক নোংরা পলিটিক্সের শিকার হয়েছি। মনোবল শক্ত ছিল, পরিবার পাশে ছিল, তাই হয়ত আত্মহত্যা করিনি। আমার মতো করে লড়ে গেছি। নিজের জায়গা করে নিয়েছি।
সিনেমায় নিয়মিত না দেখা গেলেও মাঝেমধ্যে বিজ্ঞাপনের কাজ করেন এ অভিনেতা। সম্প্রতি একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন এ অভিনেতা। যার শুটিং হয়েছে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা নদীর তীরবর্তী চর মাদ্রাজ ইউনিয়নে। বিজ্ঞাপনটির গল্পও লিখেছেন অভিনেতা। জানা গেছে, অ্যাকশন বিজ্ঞাপনের সঙ্গে তুলে আনা হয়েছে স্থানীয় মনোরম ও নৈসর্গিক সৌন্দর্য। এ বিজ্ঞাপন প্রসঙ্গে আমিন খান বলেন, 'দারুণ এক্সাইটমেন্টে ভরপুর কিছু গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে বিজ্ঞাপন কার্যক্রম। আমাদের প্রত্যাশা দর্শকরা বিজ্ঞাপনটির মাধ্যমে বিনোদন পাবেন। তাদের মনের খোরাক জোগাবে ওয়ালটনের এই ক্রিয়েটিভ কার্যক্রম।'
আমিন খান আবারও বড় পর্দায় ফিরতে চান। বরাবরই বলে আসছেন ভালো গল্প পেলে সিনেমায় নিয়মিত হবেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছর তার কাছে ভালো গল্প আসেনি, এ কারণে সিনেমাপ্রেমী দর্শকের কাছেও দীর্ঘদিন অনুপস্থিত হ্যান্ডসাম এই তারকা।
১৯৯৮ সালের ১৫ মার্চ আমিন খান বিয়ে করেন সঙ্গী সিগ্ধা খানকে। স্ত্রীর অবদান তার জীবনে 'উলেস্নখযোগ্য', বলেন এই অভিনেতা। স্নিগ্ধা খান স্বামী আমিন খানকে সব সময়ই তার মানসিক অবস্থা শান্ত রেখে তাকে সঠিকভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন। মাত্র তিন মাসের প্রেমের বিয়ে আমিন খান ও স্নিগ্ধার। কম সময়ের প্রেমের বিয়ে বলেই বিয়ের পরবর্তী জীবনটাই সবচেয়ে বেশি উপভোগ করছেন আমিন খান।