শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

তারকা দু্যতিতে তৌসিফ

যেসব শিল্পী অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন আমি নিজেও কোনোদিন তাদের সঙ্গে কাজ করব না। কারণ তাদের প্রতি সে সম্মানের জায়গাটা তারা রাখেনি। কারণ, সমাজের সবচেয়ে সেনসেটিভ মানুষ হিসেবে আমরা সেসব বিষয় মনে রাখি এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা থেকে বিরত থাকি। আমরা কাজে ফিরে আবারো আগের মতো পরিবেশটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। আমাদের এখন কাজে ফেরা দরকার।
মাতিয়ার রাফায়েল
  ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
তৌসিফ

সাম্প্রতিক সময়ে অভিনয়ে যারা ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের অন্যতম তৌসিফ মাহবুব। টিভি নাটক, ওটিটি বা টিভিসিতে সমানতালে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। কাজে থাকা তৌসিফ অল্পসময়ের মধ্যেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন তার অভিনয় দিয়ে। এই মেধাবী অভিনেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমান সক্রিয়। বলতে গেলে এখন তিনি ছোটপর্দায় একচেটিয়া কাজ করে চলেছেন। সমসাময়িক সময়ের অন্যসব ব্যস্ত অভিনেতাদের প্রায় সবাই যেখানে ওটিটির দিকে ঝুঁকছেন সেখানে তৌসিফ ছোটপর্দায় প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু তাই বলে তার এই কাজের সবই করছেন নিজের চোখ-কান বন্ধ করে তাও নয়। আশপাশের চারপাশে কোথায় কী ঘটছে না ঘটছে তারও খোঁজখবর রাখেন এই দেশ সচেতন অভিনেতা। দেশের মানুষের বৃহত্তর অংশ কী চায় বা না চায় সেটার ভালো-মন্দ বুঝেও সচেতন থাকেন এই অভিনেতা।

তাই তো শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনের পক্ষে শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন তৌসিফ। নিজেও ছিলেন মেধাবী ছাত্র, পড়াশোনা করেছেন বুয়েটে। তাই তার সেই জায়গা থেকেই থেকেছেন মেধার পক্ষে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে। শেষপর্যন্ত সেই আন্দোলন এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতেও সোচ্চার ছিলেন তৌসিফ। কথা বলেছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে, জানিয়েছেন প্রতিবাদ। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতিতে বন্যার্তদের পাশে বাড়িয়ে দিয়েছেন সহযোগিতার হাত। অনুদান দেওয়ার পাশাপাশি সশরীরে বন্যার্ত এলাকায় গিয়ে গ্রামবাসীকে রান্না করে খাবার দিয়ে এসেছেন।

তারপরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় অভিনয়শিল্পী সংঘের যারা একটি নির্দিষ্ট শাসন কাঠামোর পক্ষে অবস্থান নিয়ে অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন, তাদের সবাইকে পুরো জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগের দাবিসহ সংঘ সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন যেসব অভিনয়শিল্পীদের একাংশ তাদের অন্যতম তৌসিফ মাহবুব।

শুধু তাই নয়, সে সময় অভিনয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোন কোন ব্যক্তি স্বৈরাচার হাসিনাকে টিকিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন তার তালিকাও করে রেখেছেন অভিনয় শিল্পী তৌসিফ মাহবুব।

তৌসিফ মাহবুব বলেন, 'যেসব শিল্পীর অশিল্পীসুলভ আচরণের কথা বলা হচ্ছে তাদের অনেকেই তো গা-ঢাকা দিয়েছেন। আমরা সবাই চিনি তারা কারা, আমি নিজেও তাদের লিস্ট করে রেখেছি। আমি নিজেও কোনোদিন তাদের সঙ্গে কাজ করব না।'

তাদের সঙ্গে কাজ না করার কারণ হিসেবে এই অভিনেতা বলেন, 'কারণ তাদের প্রতি সে সম্মানের জায়গাটা তারা রাখেননি। আমরা সেসব বিষয় মনে রাখি এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা থেকে বিরত থাকি। আমরা কাজে ফিরে আবারো আগের মতো পরিবেশটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। আমাদের এখন কাজে ফেরা দরকার।'

এরই মধ্যে একটি ওটিটির কাজ শেষ করেছেন তৌসিফ মাহবুব। আলফা আই স্টুডিওস'র প্রযোজনায় এটি পরিচালনা করছেন ভিকি জাহেদ। অভিনেতার সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন সাদিয়া আয়মান। এ ছাড়া শিগগিরই অংশ নেবেন নাটকের শুটিংয়ে।

বর্তমানে তৌসিফের নাটকের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবেই অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকছে। গত কয়েক বছর ধরে এটাকে যেন তিনি এক প্রকার নিয়মে দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। এত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি অঙ্গীকার করেছেন যেসব অশিল্পীসুলভ অভিনেতা-অভিনেত্রী আছে তাদের সঙ্গে তিনি কোনো কাজ করবেন না। এতে তার অভিনয়ের সংখ্যা কমে গেলে যাক, তাতে তার কোনো আফসোস নেই, তবুও অশিল্পীসুলভদের সঙ্গে তিনি নেই আর।

তৌসিফ মাহবুবের এই প্রতিজ্ঞা থেকে বোঝা যায়, একজন অভিনেতা হিসেবে শিল্পীরও সামাজিক দায়বদ্ধতা আছে। যেসব শিল্পী সরকারের অবৈধ কাজের অংশীদার তারা আসলে শিল্পী নয়- বড় জোর অভিনেতা-অভিনেত্রী। তৌসিফ মাহবুবের মধ্যে সেই শিল্পী মন আছে বলেই মানুষের বৃহত্তর দাবির পক্ষে থেকেছেন।

অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তৌসিফ এমন যে চরিত্র যেমন তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান। অভিনয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য তাকে রোমান্টিক চরিত্রে এমনিতেই মানিয়ে যায়। কেয়া পায়েল থেকে শুরু করে তানজিন তিশা, অভিনেত্রীদের বিপরীতে বেশ মানায়। রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে তার 'লুক'র মধ্যে এক ধরনের নির্দোষতার ছাপও রয়েছে। জুটি হিসেবে কখনো কেয়া পায়েল কখনো তানজিন তিশা কখনো তাসনিয়া ফারিণ যে-ই আসুক সবার সঙ্গেই তাকে বেশ মানিয়ে যায়।

নিজেকে প্রমাণের বেশ ভালো ক্ষুধাই আছে তৌসিফ মাহবুবের। সেই যে ২০১৩ সালে করা 'অল টাইম দৌড়ের ওপর' দিয়ে শুরু করেছিলেন তৌসিফ সেই দৌড় এখনো অব্যাহত রেখেছেন। কোনো বিরতি নেই। এ ব্যাপারে নিজেই বলেন, 'সবকিছুরই একটা সীমা নির্ধারিত থাকে যে, কখন কোনটা শেষ হবে। আমি এখনো কোনো সীমা নির্ধারণ করিনি। সীমার পরেও যদি কিছু থাকে আমি সে পর্যন্ত যেতে চাই।' তার মানে অভিনয়ে প্রতি বেশ ভালোই ক্ষুধা আছে তৌসিফ মাহবুবের।

এই ক্ষুধা আছে বলেই দেখা যায় বিভিন্ন পর্ব বা দিবস উপলক্ষে যখন নাটক খুব বেশি হয় সেখানে যেন তিনি 'অল টাইম দৌড়ের ওপর'ই থাকেন। সেটা দুই ঈদেই হোক আর ভালোবাসা দিবসেই হোক। এখানে ডজনের কম অভিনয় করতে তাকে কাছে সময়ে খুব কমই দেখা গেছে। ২০২১ সালের এক ঈদে তো সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত অভিনয় করে রেকর্ড গড়েছেন তৌসিফ। সে বছর আবার সস্ত্রীক জারাসহ করোনায় আক্রান্তও হয়েছিলেন তিনি। সে জন্য তার ১৯টি নাটক আটকেও যায়। পরে নেগেটিভ হয়ে শুটিংয়ে ফিরেন। মূলত সে বছর থেকেই তৌসিফের নিজেকে প্রমাণের শুরু। নয়ত এর আগে মোশাররফ করিম-চঞ্চল চৌধুরী বা অপূর্ব-নিশোদের তারকা দু্যতির ছায়ায় প্রায় ঢাকাই পড়ে থাকতেন তিনি। এ নিয়ে তার একটা আক্ষেপও হয়ত ছিল। এখন তাকে প্রতি মাসেই যেরকম ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাতে নিশ্চয় এতদিনে তার সেই আক্ষেপ ঘুচেও গেছে।

অথচ এক সময়ে তার অনুযোগ ছিল, সিন্ডিকেটের কারণে তিনি ঈদে বা ভালোবাসা দিবসগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম অভিনয়ের সুযোগ পান। ছোটপর্দায় হোক আর বড়পর্দাতেই হোক এই অভিযোগটি বহুল চর্চিত একটা বিষয়। সে যা-ই হোক, এখন তৌসিফ মাহবুব যে ছোটপর্দার শীর্ষ তারকায় উত্তীর্ণ হতে চলেছেন- এ নিয়ে হয়ত এখন কারোরই দ্বিমত নেই। এক সময়ে যে অভিনেতা তারকা অভিনেতাদের ছায়ায় আড়াল হয়ে থাকতেন- এখন সময় এসেছে তার ছায়াতেই নতুনদের আড়াল হয়ে থাকার।

তাই তো নিজেই যারা এ সময়ে অশিল্পীসুলভ আচরণ দিয়ে নিজেদের প্রকৃত চরিত্র প্রকাশ করে দিয়েছেন তাদের প্রতি প্রত্যাখ্যানের ভাষাটিও অত্যন্ত দৃঢ় দেখায়। তাদের সামনের কাতারে থেকেই ঘোষণা দিচ্ছেন কাজে ফেরারও। ব্যস্ত শিল্পী আবার ব্যস্ততায় ফিরে আসতে চান। বলেন, 'যেসব শিল্পী অশিল্পীসুলভ আচরণ করেছেন আমি নিজেও কোনোদিন তাদের সঙ্গে কাজ করব না। কারণ তাদের প্রতি সে সম্মানের জায়গাটা তারা রাখেনি। কারণ, সমাজের সবচেয়ে সেনসেটিভ মানুষ হিসেবে আমরা সেসব বিষয় মনে রাখি এবং তাদের সঙ্গে কাজ করা থেকে বিরত থাকি। আমরা কাজে ফিরে আবারো আগের মতো পরিবেশটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। আমাদের এখন কাজে ফেরা দরকার।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে