রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নতুন আশায় তিশা

মাতিয়ার রাফায়েল
  ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
নতুন আশায় তিশা

দেশীয় শোবিজের শীর্ষস্থানীয় মডেল অভিনেত্রীদের অন্যতম নুসরাত ইমরোজ তিশা। ক্যারিয়ারের দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দুর্দান্ত সমানতালে টিভি নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপন ও সিনেমায় কাজ করেছেন। ১৯৯৫ সালে নতুন কুঁড়ি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান পাওয়া তিশার মিডিয়া জগতে পদার্পণ টেলিভিশনের মাধ্যমেই। শিশুশিল্পী হিসেবে মূলত গান করতেন। ১৯৯৭ সালে অনন্ত হীরার 'সাতপেড়ে কাব্য' নামে একটি নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে শখের বশে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পদার্পণ করেন। ১৯৯৮ সালে 'সাত প্রহরের কাব্য' নাটক দিয়ে তিশার টেলিভিশন পর্দায় অভিষেক হয়। নাটকটি রচনা করেন অনন্ত হীরা এবং পরিচালনা করেন আহসান হাবীব।

নতুন কুঁড়ির চ্যাম্পিয়ন সেই তিশা এখন বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। অভিনয় দিয়ে অর্জন করেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। টিভি নাটকের মাধ্যমে অভিনয় জীবন শুরু হলেও ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিশা। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নাট্য ও চলচ্চিত্র জগতের সব শ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।

২০০৩ সাল থেকে অভিনয় ও মডেলিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তিশা এঞ্জেল ফোর নামের একটি ব্যান্ড দলও গঠন করেছিলেন। আর সেই থেকে আলোকিত করে রেখেছেন আমাদের শোবিজ অঙ্গন। অভিনয়ের পাশাপাশি ক্লিন ইমেজের কারণে বেশিরভাগ সময় আলোচনায় থাকেন এই তারকা।

এবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছিল দেশের শিল্পী সমাজের একাংশ। কেউ রাজপথে কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলেছেন শিক্ষার্থীদের পক্ষে। অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও ছিলেন এই দলে। রাজপথে না নামলেও ফেসবুকে সরব ছিলেন। এরপর ছাত্রদের বিজয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত এবং আগামী দিনের জন্য আশাবাদী তিশা। এ ব্যপারে নিজ অনুসারীদের সঙ্গে একটি ভিডিও ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। সেখানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কথা বলতে দেখা গেছে সমন্বয়কদের। অভিনেত্রী লিখেছেন, ইনশাআলস্নাহ আমরা সবাই একসঙ্গে আমাদের স্বাধীন দেশকে নতুন করে গড়ে তুলব।

তিশার চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় স্বামী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর হাত ধরে। ২০০৯ সালে ফারুকীর পরিচালনায় 'থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার' সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিমের বিপরীতে অভিনয় করে প্রথম সিনেমাতেই শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে অর্জন করেন 'মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার'।

এরপর তিশার হাতে এসেছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। ২০১৬ সালে অনন্য মামুন পরিচালিত 'অস্তিত্ব' সিনেমাটির জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে এই পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। এরপর ২০১৯ সালে 'হালদা' সিনেমার জন্য আরও একটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিশা।

তিশা যখন তার ক্যারিয়ারের ঠিক মধ্যগগনে তখন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ১১ বছর পর কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। স্বামী সংসারের পাশাপাশি যোগ হয়েছে সন্তান। এ জন্য কমে গেছে তার কাজের পরিধি। সাংসারিক কাজ থেকে যতটুকু সময় বের করতে পারেন সেটুকুতে চেষ্টা করেন অভিনয়ের জন্য।

২৫ বছর ধরে নির্মাণের সঙ্গে জড়িত আছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। আর অভিনয়ের পরিচিত নাম নুশরাত ইমরোজ তিশা। এই তারকা জুটি দুজনেই নিজ নিজ কাজে সফল। সেই ধারাবাহিকতায় 'অটোবায়োগ্রাফি' সিনেমায় মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-নুসরাত ইমরোজ তিশাকে এক সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গেল। যে সিনেমাটির জন্য তারা একসঙ্গে চিত্রনাট্য লেখার কাজও করছেন।

'শনিবার বিকেল' ফারুকীর কাছে ছিল এক আর্তনাদের নাম। সেই বিলাপকে চিৎকারে পরিণত করেছে ওটিটি কন্টেন্ট 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি'। এর পরতে পরতে ফারুকী বুকের ভেতর জমে থাকা অনেক না-বলা কথা নিংড়ে দিয়েছেন। স্বাধীনভাবে গল্প বলার জন্য কতটা আকুল হয়ে আছেন তিনি, ক্যামেরার সামনে ও পেছনে তার সেই অসহায়ত্ব আর দাবি একইসঙ্গে ভেসে বেড়িয়েছে। বিগত সরকারের সময়ে 'শনিবার বিকেল' দেশে মুক্তি দিতে না পারাটাই হয়ত ফারুকীকে তাতিয়ে দিয়েছে। সেই মনস্তাপ আর যাতনা থেকে তিনি বানিয়ে ফেললেন জীবনের অন্যতম সেরা কাজ 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি'।

'মিনিস্ট্রি অব লাভ' প্রজেক্টের জন্য বানানো চরকি অরিজিনাল ফিল্ম 'অটোবায়োগ্রাফি' সিনেমায় কাজ করা প্রসঙ্গে অভিনেত্রী তিশার ভাষ্য, 'এই সিনেমার স্ক্রিপ্টসহ আরও অন্যান্য কাজের সঙ্গে আমি সরাসরি জড়িত। সুতরাং, এই কাজটি নিয়ে আলাদা একটা অনুভূতি কাজ করছে মনে।'

নামেই বোঝা গেছে, গল্পে তার ও নুসরাত ইমরোজ তিশার বাস্তব জীবনের প্রতিফলন রয়েছে। ছবিটির প্রধান দুই চরিত্র ফারহান ও তিথি মূলত তারাই। তবে কিছু মনোবেদনার কথা বলতে ফিকশনের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। যেমন ফারহানের জেলে যাওয়ার দৃশ্যটি। কারণ বাস্তবে ফারুকীর এমন কোনো ঘটনার কথা জানা যায় না। 'শনিবার বিকেল' উত্তর আমেরিকার প্রেক্ষাগৃহে ও ভারতের ওটিটি পস্ন্যাটফর্মে এলেও নিজের দেশে দেখাতে না পারার অতৃপ্তি বয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাকে। 'সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি' মূলত ফারুকী ও তিশার ব্যক্তিজীবনের প্রেমপত্র এবং একমাত্র কন্যাসন্তান ইলহামের প্রতি তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। ছবিটিকে বলা যায় এই দম্পতির প্রেমের গল্প, তাদের দর্শনের গল্প। সন্তানের জন্য বাবা-মা কত ত্যাগ ও সহনশীলতা দেখাতে পারেন, তাতে নমুনা দেখিয়েছেন।

তিশা জানান, হাতের নতুন কাজের তেমন ব্যস্ততা না থাকলেও সংসার ও সন্তানকে নিয়ে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন তিনি। ফারুকী কোনো কাজে তিশা থাকবেন না তা কী হয়? কিন্তু সাংসারিক ব্যস্ততার জন্যই ফারুকীর লাস্ট ডিফেন্ডারস অব মনোগামি ওয়েবফিল্মটিতে তাকে দেখা যায়নি। এখন সাংসারিক কাজের ফাঁকে টুকটাক কমার্শিয়াল কাজ করছেন। তিশা জানান, নতুন একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত হলেন তিনি। হারপিকের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে যুক্ত হয়েছেন এ জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তার আগে নারকেল তেলের নতুন ব্র্যান্ড কলম্বোর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুই দশকের বেশি সময় ধরে পেশাদার অভিনয়ের যুক্ত তিশার সমসাময়িক অনেকেই নিয়মিত অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের একদল অভিনয়শিল্পী এখন নিয়মিত কাজ করছেন। নতুনদের বিষয়ে তিশা বলেন, এখন তো আসলে সবার কাজ টুকটাক চোখে পড়ে। নতুন অনেক পরিচালক ও শিল্পী এসেছেন, নতুন সব কনসেপ্টে কাজ হচ্ছে। কিছু কাজ ভালো কিছু কাজ খারাপ হচ্ছে, সেটা অবশ্য আগেও ছিল। ভালো-মন্দ কাজ মিলিয়েই এই অঙ্গন। ওটিটিতে অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে আমরা ভালো কাজ পাব। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ কিন্তু ঠিকই আছে। তিশা বলেন, 'সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে চাইলেও এখন আর দূরে থাকা সম্ভব নয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। বিভিন্ন মুহূর্তের খবর তাদের সঙ্গে শেয়ার হচ্ছে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে