বুড়ো হাড়ের ভেলকিতে অমিতাভ বচ্চন

প্রকাশ | ২৯ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

মাসুম বিলস্নাহ্‌ রাকিব
কিংবদন্তি অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন। ১৯৭০-এর প্রথম দিকে তিনি বলিউড চলচ্চিত্র জগতে 'রাগী যুবক' হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে ওঠেন। অমিতাভের পুত্র অভিনেতা অভিষেক বচ্চন, এই জন্য অমিতাভ 'বিগ বি' বা বড় বচ্চন নামেও পরিচিত। অমিতাভ বচ্চনকে ভারতীয় চলচ্চিত্র তথা বিশ্ব চলচ্চিত্রের অন্যতম সেরা ও প্রভাবশালী অভিনেতা হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকে ভারতীয় চলচ্চিত্রে তার একচ্ছত্র আধিপত্যের জন্য ফরাসি চলচ্চিত্র সমালোচক ও পরিচালক ফ্রঁসোয়া ত্রম্নফো তাকে 'একক-ব্যক্তি চলচ্চিত্র শিল্প' বলে অভিহিত করেন। এ অভিনেতার কাছে বয়সটা যেন একটা সংখ্যা মাত্র। ৮১ বছর বয়সেও নিরন্তর কাজ করে চলেছেন অমিতাভ বচ্চন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে 'কল্কি ২৮৯৮' ছবিটি। এ ছাড়াও শুরু হয়েছে 'কৌন বনেগা ক্রোড়পতি'র ১৬তম সিজন। চলচ্চিত্র থেকে রিয়্যালিটি শো সর্বত্র স্বমহিমায় বিরাজমান ৮১ বছরের 'তরুণ'। বলিউডের 'শাহেনশাহ'র এই কর্মক্ষমতার বিষয়ে অনেকেই কৌতূহলী। অনেকে আবার উদ্বিগ্ন তার স্বাস্থ্য নিয়ে। কিন্তু কেন বাড়িতে শুয়ে বসে আরাম করে দিন কাটানোর বদলে নিরলস পরিশ্রম করছেন অভিনেতা! কিসের তাগিদে? অমিতাভকে এই বয়সে কাজ করা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন করা হলে জবাব দেন তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, আমাকে সেটে দেখলে কেবল এই প্রশ্নই করতে থাকেন সবাই। আমি কেন কাজ করছি, কী কারণ? আমার কাছে কোনো উত্তর নেই। কেবল মনে হয়, এটা আরও একটা নতুন কাজের সুযোগ। আপনাদের স্বাধীনতা রয়েছে নিজেদের ভাবার, আমি কেন কাজ করছি। আবার আমারও স্বাধীনতা রয়েছে আমার কাজ করে যাওয়ার। আমি আমার কাজ করে যাব। যদি আপনাদের সমস্যা থাকে আপনারা নিজেদের কাজ খুঁজে নিন। এতে করে বুঝা যাচ্ছে মৃতু্যর আগ পর্যন্ত তিনি অভিনয় করেই যাবেন। ৭০ দশকের জনপ্রিয় ও বিখ্যাত হিন্দি সিনেমা 'শোলে'। এ সিনেমায় নাকি শুধু পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন। ছবির দৃশ্যগুলি দেখলেই নাকি তা বোঝা যায়। জয়-বীরুর বন্ধুত্ব, বাসন্তির প্রাণোচ্ছলতা ও গাব্বারের ভয়াবহতা- সব মিলিয়ে হিন্দি চলচ্চিত্র জগতে ' শোলে' একটি ছাপ রেখে যায়। ১৯৭৫ সালে রমেশ সিপ্পীর পরিচালনায় এবং তার বাবা জি পি সিপ্পীর প্রযোজনায় মুক্তি পায় এই অ্যাকশন চলচ্চিত্রটি। কাহিনী অনুসারে, দুই সাধারণ অপরাধী বীরু ও জয়, যাদের চরিত্রে ছিলেন প্রয়াত অভিনেতা ধর্মেন্দ্র ও বলিউড শাহেনশা অমিতাভ বচ্চন। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ ঠাকুর বলদেব সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা সঞ্জীব কুমার, নিষ্ঠুর ডাকাত গাব্বার সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আমজাদ খান। এদিকে বাসন্তীর চরিত্রে ছিলেন হেমা মালিনী এবং রাধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চনের স্ত্রী জয়া বচ্চন। চলচ্চিত্রটিতে বাসন্তি ও রাধা চরিত্র ছিল বীরু ও জয়ের প্রণয়ী রূপে। তবে এই ছবি নিয়ে সমালোচনারও শেষ নেই। কারণ এই ছবিতে ধর্মেন্দ্র এবং হেমার প্রেমকাহিনীর ওপরেই জোর দেওয়া হয়েছিল। এদিকে চলচ্চিত্রটির অপর দৃশ্যে অমিতাভ এবং জয়ার প্রেমের রসায়ন গড়ে উঠলেও চরিত্রগুলো মূল ধারার ছিল না। এছাড়াও ছবিতে অমিতাভকে একা দৃশ্যে খুব কম অভিনয় করতে দেখা গেছে। তাই বলিউড শাহেনশা অমিতাভের অভিনয়কে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি এমনটি ইঙ্গিত দিতে চেয়েছে বলিউডের কিছু সূত্র। প্রশ্ন ওঠে অমিতাভের পারিশ্রমিক পাওয়া নিয়েও। অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন এই সিনেমায় সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন। কিন্তু না, সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন পুলিশ ঠাকুর বলদেব সিং- অর্থাৎ সঞ্জীব কুমার। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, 'শোলে' ছবিতে অধিকাংশ দৃশ্যে অন্যান্য তারকার সঙ্গে অভিনয় করতে দেখা গেছে অমিতাভকে। এরপরও তার পারিশ্রমিক অনেক বেশি ছিল না। এই সিনেমায় অভিনয় করে ধর্মেন্দ্রর চেয়েও কম পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন অমিতাভ। এমনকি মালিনীর চেয়েও নাকি তার কম পারিশ্রমিক ছিল বলে শোনা গিয়েছিল। অমিতাভ লাখের ঘরে আয় করলেও ধর্মেন্দ্রের তুলনায় তার পারিশ্রমিকের ব্যবধান অনেকটাই কম ছিল। সঞ্জীব কুমার অমিতাভের চেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন। বলিউডের গোপন সূত্রের খবর, 'শোলে' ছবিতে অভিনয় করে এক লাখ টাকা আয় করেন বলিউড শাহেনশা। তবে অমিতাভের চেয়ে মাত্র ২৫ হাজার টাকা কম পান হেমা। এই অভিনেত্রী আয় করেছিলেন ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়াও গাব্বার সিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করে ৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পান আমজাদ খান। অভিনেত্রী জয়া বচ্চন পেয়েছিলেন ৩৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক। তবে 'শোলে' ছবিতে অভিনয় করে সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সঞ্জীব। 'শোলে' ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে স্বীকৃত ও ইতিহাসে একটি মাইলফলক। ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট প্রকাশিত সর্বকালের 'শীর্ষ দশটি ভারতীয় চলচ্চিত্র' তালিকাতে এটি প্রথম স্থান পায়। ২০০৫ সালে ৫০তম ফিল্মফেয়ার পুরস্কারে চলচ্চিত্রটিই '৫০ বছরের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র' হিসেবে স্বীকৃত পায়।