৫০ বছরেরও বেশি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। সৌন্দর্য ও অভিনয়শৈলীতে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন তিনি। ১৯৬৭ সালে তরুণ মজুমদারের 'বালিকা বধূ'র হাত ধরেই বাংলা সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেত্রী। শেষ তাকে দেখা গিয়েছে 'পিকু' সিনেমায়। টলিউড থেকে বলিউডে কাজ করে দর্শকদের মনে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন অভিনেত্রী। কাজ করেছেন উত্তম কুমার থেকে শুরু করে অমিতাভ বচ্চনের নায়িকা হিসেবে। বালিকা বধূ (১৯৬৭) ছাড়াও তার প্রধান নায়িকা হিসেবে বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে পরিণীতা (১৯৬৯), অনিন্দিতা (১৯৭২), আনন্দ আশ্রম (১৯৭৭), ওগো বধূ সুন্দরী (১৯৮১), প্রার্থনা (১৯৮৪), শতরূপা (১৯৮৯), কড়ি দিয়ে কিনলাম (১৯৮৯), ও বিধিলিপি (১৯৯১)।
তিনি বিনোদ মেহরার সঙ্গে অনুরাগ, উসপার, রাফতার, উমর কায়েদ, মাজাক, জিন্দেগি এবং দো ঝুটসহ ১০টি চলচ্চিত্রে জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি অমিতাভ বচ্চন এবং বাসু চ্যাটার্জির সঙ্গে ২টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে তার বাংলা চলচ্চিত্র একটি অগো বধূ সুন্দরী। রাজেশ খান্নার সঙ্গে তার চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে ভোলা ভালা, প্রেম বন্ধন এবং ঘর পরিবার। তিনি সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে অঙ্গুর, দাসি এবং ইতনি সি বাত'সহ অনেক সিনেমায় কাজ করেছেন।
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম অবিভক্ত বাংলার বিক্রমপুরের এক বাঙালি ব্রাহ্মণ পরিবারে। তার বাবা প্রান্তেষ চট্টোপাধ্যায় ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এবং তার দাদা ছিলেন একজন বিচারক। তার আসল নাম ইন্দিরা এবং মৌসুমী তার পর্দা নাম। তিনি ১৯৭০-এর দশকে হিন্দি চলচ্চিত্রে সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন। তিনি ২০১৯ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগদান করেছিলেন; তিনি আগে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য ছিলেন।
\হসদ্য দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেত্রী মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়। 'চলচ্চিত্র শিল্পে অসামান্য অবদান'-এর জন্য এই অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন অভিনেত্রী। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন বলিউডের অনেক তারকা। ২০১৫ সালে ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট পুরস্কার পান তিনি। দীর্ঘ বিরতির পর ২০০৬ সালে তনুজা চন্দ্রের জিন্দাগি রকসের মাধ্যমে সিনেমায় প্রত্যাবর্তন করেন তিনি।
কেবল সৌন্দর্যে নন, অভিনয় দক্ষতায় মুগ্ধ করেছেন লাখ লাখ মানুষকে। বালিকা বধূ'র নায়িকা এক সময় জানিয়েছিলেন, তিনি যত বেশি কাজ করতে পারতেন, তা করেননি যৌবনে। কারণ, পেশাজীবনের চেয়ে নিজের ব্যক্তিজীবনকে অনেক গুরুত্ব দিয়েছিলেন মৌসুমী। অভিনেত্রী হিসেবে নিজের ১০০ শতাংশ দেননি বলেই দাবি তার।
বাস্তবেও খুব দ্রম্নত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অভিনেত্রী। ঠিক তিনি নন, তার পরিবারের ইচ্ছেতেই এমনটা ঘটেছিল। হেমন্ত কুমারের পরিবার মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়ের পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিল। তিনি প্রথম থেকেই স্থির করেছিলেন মৌসুমীকে তাদের পরিবারের বৌ করবেন। তবে এত আগে বিয়ে স্থির হয়নি। মৌসুমীর পরিবারের গুরুজন ক্যানসারের শেষ পর্যায় ছিলেন। তিনিই হেমন্ত কুমারকে প্রশ্ন করেছিলেন, মৌসুমীর বিয়ে কি তিনি দেখে যেতে পারবেন না। উত্তরে হেমন্ত কুমার বলেছিলেন, নয় কেন? হেমন্ত কুমারের ছেলে জয়ন্ত মুখার্জির সঙ্গে তার বাগদান হয়। এরপরই মৌসুমী চট্ট্যোপাধ্যায়ের বিয়ের সানাই বাজে। তখন তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। তখন পরীক্ষা ছিল মৌসুমীর। তিনি স্থির করেন আর পড়বেন না। কারণ তখন তার ঝুলিতে একের পর এক ছবি। মাত্র ১৭ বছর বয়সে মা হয়েছিলেন মৌসুমী। তবে কীসের হতাশা? এক সাক্ষাৎকারে মৌসুমী বলেছিলেন, একটা সময় আমায় হতাশা গ্রাস করে।
\হমৌসুমীর কথায়, সবকিছু আমি ভীষণ সহজে পেয়ে যাচ্ছিলাম। মীনা কুমারীর মতো মদ্যপান করে পড়ে থাকতে ইচ্ছে করত। মাত্র ১৭ বছরে সন্তান, পরিবার, নিজের মার্সিডিজ, গোল্ডেন জুবলি ছবি, সবটাই পাচ্ছিলাম। এরপর তিনি খোলসা করে বলেন, 'কেউ যদি এত সহজে সবটা পেয়ে যায়, তবে হতাশা তো গ্রাস করবেই। সেই খিদে, সেই আনন্দটাই তো থাকে না'। মৌসুমী তখন যাতেই হাত দিচ্ছিলেন, তাতেই সোনা। একের পর এক ছবি ছিল তার ঝুলিতে। চুটিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। তাই পরীক্ষাটাও আর তার দেওয়া হয়নি। তবে বলিউডে কাটিয়েছেন সোনালি অধ্যায়।