ঢালিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান প্রজন্মের নতুন ক্রাশ জাহারা মিতু। অভিনয়ের পাশাপাশি উপস্থাপিকা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭' সুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শোবিজ অঙ্গনে পদচারণা শুরু জাহারা মিতুর। ২০১৭ সালে 'মিস সুপারমডেল বাংলাদেশ' ও 'মিস কসমোপলিটন বাংলাদেশ' নামক দুটি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেরা সুন্দরীর মুকুট পরেন তিনি। ২০১৯ সালে শাকিব খানের বিপরীতে 'আগুন' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রে তার অভিষেক হলেও তার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা 'জয় বাংলা' ২০২২ সালে মুক্তি পায়।
অসম্ভব সুন্দরী এই নায়িকা উপস্থাপনা, বিচারক, নাটক ও সিনেমা, গান, কবিতা, গল্প, ফ্যাশনসহ বিনোদন জগতের প্রায় সব মাধ্যমে বিচরণ রয়েছে। এরপর তাকে দেখা গেছে আরেক ভূমিকায়। স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। অর্থাৎ ক্যারিয়ারের শুরুতেই দেশের শীর্ষ অভিনেতা শাকিব খান আর কলকাতার তারকা দেবের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করে সিনে ইন্ডাস্ট্রিতে একটা প্রবল ঝাঁকুনিই দিয়েছিলেন লাস্যময়ী অভিনেত্রী জাহারা মিতু।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভীষণ সরব এই নায়িকা। প্রায়ই নিজের ছবি কিংবা কবিতা পোস্ট করে নেটিজেনদের সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুণ্ন রাখেন। তার এসব কবিতা বা ছবি ভক্তদের নানা সময়ে দারুণভাবে আকৃষ্ট করে আসছে।
আজকের অভিনয় জগতে পা রাখার আগেই 'মিস ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ-২০১৭' সুন্দরী প্রতিযোগিতায় প্রথম রানারআপ হওয়ায় সবার কাছে আলোচিত ছিলেন জাহারা মিতু। এরপর নাটক, বিজ্ঞাপন, মডেলিং এবং ক্রীড়া উপস্থাপনা করে শোবিজের সবার নজর কাড়তে সক্ষম হন মিতু। সেই সুবাদে ক্যারিয়ারের শুরুতেই দুই দেশের শীর্ষ তারকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করায় তার সেই পরিচিতি আরও বেশি সমৃদ্ধ করে তুলবে সেটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে নির্মাতাদের কাছেও আগ্রহের শীর্ষে থাকলেও জাহারা মিতু ছবির স্ক্রিপ্ট পছন্দের ব্যাপারে খুব সাবধানী। সাবধানী বলেই মুক্তিযুদ্ধের ওপর সিনেমা থেকে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। সেই ছবিতে জননন্দিত অভিনেতার আসাদুজ্জামান নূরও ছিলেন। তিনিও পরে নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন। এতেই বোঝা যায়, মিতু কতটা সাবধানী। নতুন সিনেমা বলতে নতুন করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তারিক মুহম্মদ হাসানের 'জার্সি নম্বার-১৬' এবং 'দ্য ডল-ডেথ অব লিভিং লিজেন্ড' নামক একটি সিনেমায়। এই ছবিতে তার বিপরীতে আছেন জিয়াউল রোশান।
মুক্তির অপেক্ষায় থাকা এবং মালিকানা আরশাদ আদনানের কাছে হস্তান্তর হওয়া 'আগুন' সিনেমায় অভিনয় করে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও তার প্রথম ছবি মুক্তির আগেই কলকাতা সুপারস্টার দেবের বিপরীতে অভিনয় করেছেন 'কমান্ডো' সিনেমায়। জাহারা মিতুর দুর্ভাগ্য তার বেশিরভাগ সিনেমাই দীর্ঘদিন ধরে মুক্তি পাচ্ছে না।
অভিনয় করেছেন কাজী হায়াতের মতো মেগা ডিরেক্টরের সঙ্গে। প্রথম মুক্তি পাওয়া সিনেমা হিসেবে 'জয় বাংলা' ফ্লপ হলেও এ নিয়ে মোটেও ভেঙে পড়েননি মিতু। কেননা, ছবিটিতে তার অভিনয় দর্শকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। প্রথম সিনেমাটিই সুপার ফ্লপ-এ নিয়ে কি মিতু ভেঙে পড়েননি- এমন প্রশ্নের উত্তরে তখন মিতু বেশ সপ্রতিভার সঙ্গেই বলেন, 'আসলে আমরা বাংলাদেশের মানুষ দেশপ্রেমের কথা বলে যতই চিলস্নাই দেশপ্রেম বা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমা প্রেক্ষাগৃহে গেলে তখন কিন্তু কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না- সেটা আমি আগে থেকেই ভালো করে জানি। তাই প্রথম থেকেই প্রত্যাশা করিনি এটা কমার্শিয়াল সিনেমা হবে; দর্শক হুমড়ি খেয়ে পড়বে।
\হসিনেমাটি ফ্লপ হলেও যারাই আমার অভিনয় দেখেছেন সবাই কিন্তু প্রশংসা করেছেন। আমি যখন সিনেমাটিতে সাইন করি তখন তিনটি জিনিসকে প্রাধান্য দিই এক, কাজী হায়াতের নাম দুই, লেখক মুনতাসীর মামুনের নাম ও তিন জয়বাংলা স্স্নোগান।'
মিতু আরো বলেন, 'দেশ স্বাধীন হলেও দেশের অধিকাংশ মানুষেরই চিন্তাভাবনা স্বাধীন হয়নি।'
কাজের ক্ষেত্রেও কো-আর্টিস্টদের সঙ্গেও বেশ চমৎকারভাবে মানিয়ে যান। এ ব্যাপারে সহ-অভিনয় শিল্পীর সঙ্গে মানিয়ে নিতে কখনো অসুবিধা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমার একটা সুবিধা কি, আমি শীর্ষ নায়ক থেকে শুরু করে অনেক বড় বড় প্রোডাকশনের কাজ করেছি- তো, সেদিক থেকে আমাকে খুব লাকি বলতে পারেন। আমি কাজ করেছি বিগ বাজেট, মিড বাজেটের সিনেমায়। আসলে বিহেভিয়ার বা টিম ম্যানেজমেন্ট যা-ই বলেন, এটা ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। আমার দিক থেকে আমি কিন্তু খুব মিশুক এবং সবাইর সঙ্গেই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলি। টিমের সঙ্গে এতটাই মিশে যাই যে, তখন তারাও আমাকে তাদের ফ্যামিলি মেম্বার হিসেবে ভাবতে শুরু করেন। সেদিক থেকে অভিজ্ঞতা আমার খারাপ নয়। নয়ত কাজী হায়াত, শাহীন সুমনের মতো বড় নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করতে পারতাম না।'
সিনেমার জগতে দ্রম্নত নিজের পরিচয় ছড়িয়ে দিতে কমার্শিয়াল সিনেমার কোনো জুড়ি নেই। আবার শিল্পসম্মত জীবনঘনিষ্ঠ সিনেমা ব্যবসা সফল না হলেও এ ধরনের সিনেমায় অভিনয় করে বহু অভিনয় শিল্পী আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করে বেশ সমীহ আদায় করে নিচ্ছেন অনেকে। বড় বড় ফেস্টিভালেই বোঝা যায় তাদের আন্তর্জাতিক গুরুত্ব কত বেশি। এক্ষেত্রে জাহারা মিতু কোন ধরনের সিনেমায় বেশি আগ্রহী জানতে চাওয়া হলে লাস্যময়ী তারকা মিতু বলেন, 'আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে কমার্শিয়াল সিনেমা। গস্নামার আর গস্নামার; নাচে-গানে ভরপুর সিনেমাই আমাকে বেশি টানে। যে সিনেমায় দর্শক পরিপূর্ণ বিনোদন পাবে সে সিনেমাই আমাকে খুব বেশি টানে। যে যা-ই বলুক, আমি আমার মনমতো একশ পার্সেন্ট কমার্শিয়াল সিনেমাই চাই। আমার অনেক ক্ষুধা কমার্শিয়াল সিনেমায় অভিনয় করার। আমি আসলে একজন পুরাদস্তুর কমার্শিয়াল ম্যানেজার।'
এখন তো ছোটপর্দার জায়গা দখল করে নিয়েছে ওটিটি। কবে আবার এফডিসির জায়গাও দখল করে নেয় এই ওটিটি- তারও কোনো ঠিকঠিকানা নেই; এই ওটিটি মাধ্যমেও কি নিজের জায়গা করে নিতে ইচ্ছে হয় না? এমন প্রশ্নে জাহারা মিতু বলেন, 'অবশ্যই ওটিটি মাধ্যমেও কাজ করার আগ্রহ আছে আমার। শুধু ওটিটিই নয়, ছোট পর্দায়ও আমি কাজ করতে চাই। এটা যেমন গল্পের ওপর নির্ভর করে, সময়ের ওপরও নির্ভর করে। তবে দেখতে হবে কাজগুলো মানের দিক থেকে যেন ভালো হয়। আগেই আপনাকে বলেছি যে, আমি সংখ্যা নয় কাজের মানটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ, সংখ্যা আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে না কাজের মানই আমাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। আমি এমন চিন্তাই করি, যে কাজটি আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে।'
এই যে ঢাকাই সিনেমায় নিজে একটা জায়গা করে নিচ্ছেন- এটা ভাবতে কেমন লাগে? এমন প্রশ্নে মিতু বলেন, 'এটা ঠিক যে, আমি যখন স্পোর্টস উপস্থাপনা করতাম, তখন অনেকে আমাকে ইন্ডিয়ান মনে করত। তখন আমার পরিচিতি এতটা ছিল না; দর্শকও আমাকে চিনত না। তবে সিনেমায় আসার পর থেকে সবাই চেনে- এটা ভাবতে তো অবশ্য ভালো লাগে আমার। তবে এ নিয়ে আমার পা আর মাটিতেই পড়ে না এমন নই কিন্তু আমি।'
তার সৌন্দর্যের সঙ্গে অনেকেই চাঁদের সঙ্গে তুলনা করেন। এ ব্যাপারে জাহারা মিতু বলেন, 'আমি চাঁদের মতো নই বরং আমি সূর্যের তাপের মতো গরম।'