শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চরিত্রে দেব

মাসুম বিলস্নাহ রাকিব
  ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর চরিত্রে দেব

বাণিজ্যিক সিনেমার রোমান্টিক হিরোখ্যাত ওপার বাংলার দেব গত কয়েক বছরে সে জায়গা থেকে অনেকটা সরে এসে গল্পনির্ভর ছবিতে ঝুঁকছেন। যদিও 'আই লাভ ইউ', 'মন মানে না', 'পরাণ যায় জ্বলিয়া রে', 'পাগলু'র মতো সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। তবে ক্যারিয়ারে যত সময় পেরিয়েছে ততই আস্তে-ধীরে নিজেকে ভেঙে নিয়েছেন। এখন একের পর এক গল্পনির্ভর সিনেমায় কাজ করে যাচ্ছেন এ অভিনেতা। এবার দিতে যাচ্ছেন একটা বড়সড় নতুন চমক। শোনা যাচ্ছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চরিত্রে দেখা যেতে পারে দেবকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, সিনেমাটির পরিচালকের আসনে থাকতে পারেন নির্মাতা অরুণ রায়। এই নির্মাতার ফ্রেমে বরাবর দেশপ্রেমের গল্প ফুটে উঠেছে। অবিভক্ত ভারতের প্রথম চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অন্যতম হীরালাল সেনকে নিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন 'হীরালাল'। এরপর সেই অভিনেতা কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েই '৮/১২ বিনয় বাদল দীনেশ' তৈরি করেছেন। তারপর দেবকে নিয়ে করলেন 'বাঘা যতীন'। অরুণের ঝুলিতে রয়েছে 'চোলাই'-এর মতো রাজনৈতিক ছবিও। এর মাঝেই গুঞ্জন, তিনি এবার বিদ্যাসাগরের জীবন কাহিনী পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে চলেছেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, দেব কি নিজেই মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন নাকি তিনি এই সিনেমার একজন প্রযোজক মাত্র? এর আগেও দেবকে অরুণ রায়ের ফ্রেমে 'বাঘা যতীন' হিসেবে দেখা গেছে। তার সঙ্গে অভিনেতার দারুণ সুসম্পর্কও। আর সেই পরিচালকই যখন বিদ্যাসাগরকে নিয়ে ছবি তৈরি করতে চলেছেন, তখন দেবের নামটাই প্রথমে উঠে এসেছে স্বাভাবিকভাবেই।

পরিচালক অরুণ বলছেন, দেবের চেহারার সঙ্গে মিলে গেলেই তবে তিনি বিদ্যাসাগরের চরিত্রে অভিনয় করবেন। আবার এ-ও শোনা যাচ্ছে যে, অভিনয়ের পাশাপাশি দেবের প্রযোজনা সংস্থার ব্যানারেই এই সিনেমা তৈরি হবে। যদিও আপাতত সবটাই জল্পনা স্তরে, তবে অরুণ রায় কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট করে উড়িয়েও দেননি। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষের দিকেই ছবির শুটিং শুরু হবে।

এ দিকে ভোটের ময়দানে ব্যস্ত আছেন নায়ক দেব। এবারের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল কেন্দ্র থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তিনি। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্র থেকেই বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সাংসদ হয়েছিলেন। আপাতত ছবির কাজ থেকে কিছুটা বিরতি নিয়ে ভোটের ময়দানে সময় দিচ্ছেন এ অভিনেতা। রুপালি পর্দা থেকে সোজা রাজনীতির রুক্ষ আঙিনায়। রোদে পুড়ে দিনভর চালাচ্ছেন ভোটের প্রচার। কথা বলছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গেও।

ঘাটাল মাস্টার পস্ন্যানসহ একগুচ্ছ কাজ নিয়ে এবারেও ভোটের ময়দানে লড়ছেন এ নায়ক। বিরোধী দলের প্রার্থীদের নিয়ে টেনশন নেই, বরং আছে ঘাটালের মানুষের অগাধ ভালোবাসা। এই মন্ত্রেই রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করেই প্রচার সারছেন দেব।

লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণার ফাঁকে সম্প্রতি তার ছবি 'প্রধান'-এর সাফল্য উদ?যাপনের অনুষ্ঠানেও হাসিমুখে হাজির হয়ে ছিলেন নায়ক দেব। অনুষ্ঠানে এ অভিনেতাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, দেবের সাফল্যের নেপথ্যে রহস্য কী? এমন প্রশ্নের জবাবে নায়ক হেসে বলেন, 'বলা খুব কঠিন। সিনেমা প্রতিদিন নতুন কিছু শেখায়। তাই সিনেমাকে কোনো ফর্মুলাতে বেঁধে ফেলা যায় না।' তিনি আরও বলেন, 'সৎ প্রচেষ্টা থেকে ছবিটা করেছি। মধ্যপন্থা অবলম্বন করিনি। তাই আজ মনে হচ্ছে, কখনো কখনো মানুষের কাজ অনেক কিছু প্রমাণ করে দেয়।' দেব বলেন, 'আগে কলকাতা এবং গঙ্গার ও পাড়ের দর্শককে একজোট করার লড়াই ছিল। এখনও সেটা বাংলা ছবি এবং বাংলা ছবির দর্শককে এক করার লড়াই।'

তিনি আরও বলেন, 'চ্যালেঞ্জ নিতে আমার ভালো লাগে। গত বছর ব্যোমকেশ বা 'বাঘা যতীন'-এর ক্ষেত্রেও আমি সেটাই চেষ্টা করেছিলাম। একই জিনিস করতে গেলে আমার মধ্যেও একঘেয়েমি চলে আসবে।' 'আমি প্রযোজনায় আসার পর অনেকেই আমার পিঠে ছুরি মেরেছিল। তাই নতুন কারও যন্ত্রণাটা আমি বুঝি। আমি আমার ছোটদের সেই একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে দিতে চাই না।'

রাজনীতির মাঠে নেমে নির্বাচনী প্রচার নিয়ে অভিনেতা বলেন, 'রাস্তায় অগণিত মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন। অভিযোগও করছেন অনেকে। কোথাও আমি দেরিতে পৌঁছলে ওদের দেখে নিজেরই খারাপ লাছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমাকে দেখার পর মানুষের মুখে হাসি দেখে এগিয়ে চলার শক্তি পাচ্ছি।'

নির্বাচনী প্রচারের সময় দুর্ঘটনার শিকারও হয়েছেন এ অভিনেতা। জানা যায়, নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে মালদা গিয়েছিলেন। সেখান থেকে প্রচারণা সেরে দেবের হেলিকপ্টারটি মালদা হেলিপ্যাড থেকে উড়ার প্রস্তুতি নেয়। উড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই হেলিকপ্টারে আগুন লাগে। পরিস্থিতি সামাল দিতে দ্রম্নত পাইলট হেলিকপ্টারটিকে মালদহ হেলিপ্যাডেই জরুরি অবতরণ করান। আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় কোনো জানমালের ক্ষতি হয়নি। দেবও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে দেব ভারতীয় গণমাধ্যমকে বলেন, খুব বেশি বলা যাবে না। মানুষের ভালোবাসায় ও আশীর্বাদে বেঁচে গেছি। মৃতু্যকে কাছ থেকে দেখলাম। এখন ভালো আছি। মানুষ সঙ্গে আছে। কারোর প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। পাইলটরা নিজের মতো করে সেরা চেষ্টা করেছে।

দেব আরও বলেন, মেশিন কারোর হাতে থাকে না। মাঝ আকাশে ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। দুর্ঘটনা কারোর হাতে থাকে না। আমরা এখনো বেঁচে আছি। সেটা শুধু সেরা পাইলটদের জন্য। একটা সময় মনে হয়েছিল আর বাঁচব না। তবে পাইলটদের দক্ষতায় ফিরে এসেছি। ভালো আছি, বেঁচে আছি। বাবা-মার আশীর্বাদে, ঠাকুরের আশীর্বাদে, বাংলার মানুষের আশীর্বাদে বেঁচে গেছি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে