বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২ কার্তিক ১৪৩১

লড়াকু বিদ্যা বালান

রেজাউল করিম খোকন
  ০৯ মে ২০২৪, ০০:০০
লড়াকু বিদ্যা বালান

সদ্যই মুক্তি পেয়েছে নতুন হিন্দি ছবি দো অউর দো পেয়ার। এখানে মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে বিদ্যা বালানকে। ছবিটি নিয়ে ইতোমধ্যেই এই ছবি চর্চা শুরু হয়ে গেছে দর্শকদের মধ্যে। এই ছবিতে দেখা যায় এক বিবাহিত জুটিকে, যেখানে বিদ্যা বালান এবং প্রতীক গান্ধীকে অভিনয় করতে দেখা গেছে। তারা একসঙ্গে থাকেন যেমন আর পাঁচটা বিবাহিত জুটি থাকেন। কিন্তু একসঙ্গে থাকার পরেও তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আর তারপরই দেখা যায় ওই জুটি আদতে পরকীয়ায় লিপ্ত। তারা দু'জনেই যেন একেবারে আদর্শ পরকীয়ার জুটি। কিন্তু গল্পের মোড় আচমকাই ঘুরে যায় যখন বিবাহিত জুটিটা আবারও একসঙ্গে ভালো সময় কাটাতে শুরু করে, একসঙ্গে ঘুমায়, নানা মুহূর্ত উদযাপন করতে শুরু করে। সবটা মিলিয়ে একটা তালগোল পাকানো পরিস্থিতি তৈরি হয়। তারপর কী হয় এই রোম্যান্টিক ছবিতে সেটা নিয়েই দো অউর দো পেয়ার ছবির গল্প। বিদ্যা বালান নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ছবির ট্রেলার শেয়ার করেছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামে এই ভিডিও পোস্ট করে লেখেন, 'তৈরি হয়ে যান। কারণ মজা এবং রোম্যান্সকে ডাবল করার সময় এসে গিয়েছে দো অউর দো পেয়ারের সঙ্গে।' এটি একটি কমেডিতে ভরপুর রোম্যান্টিক ছবি। ছবিটি দ্য লাভার্সের একটি অফিসিয়াল রূপান্তর। 'ডার্টি পিকচার' সিনেমায় বোল্ড সিল্ক স্মিতার চরিত্রে অভিনয় করে বিনোদন দুনিয়ায় ঝড় তুলেছিলেন বিদ্যা বালান। এরপর 'তুমহারে সুলু' ছবিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী গৃহিণীর রেডিও জকি হয়ে ওঠার গল্প বলেন এই বলিউড অভিনেত্রী। ভারতের বিখ্যাত গণিতবিদ শকুন্তলাকে নিয়ে নির্মিত বায়োপিকে দেখা গেছে বিদ্যা বালানকে। সিনেমায় নারীর বিভিন্ন রূপ তুলে ধরে দর্শক ও চিত্রসমালোচকদের ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন বিদ্যা। সম্প্রতি 'ভুল ভুলাইয়া' অভিনেত্রী বয়সে চলিস্নশের কোটা পূর্ণ করেছেন। চলিস্নশ বসন্ত পার করেও দুর্দান্ত যৌবনা বিদ্যা বলেন, বয়স মেয়েদের আরো আত্মবিশ্বাসী ও সুখী করে তোলে। একটি সাময়িকীকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিদ্যা বলেন, 'চলিস্নশের পরও মেয়েরা দুষ্টু ও আরো আবেদনময়ী হয়। সাধারণত আমাদের লাজুক হতে ও যৌনতা উপভোগ না করার শিক্ষা দেওয়া হয়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মেয়েরা আরো পরিপক্ব হয়, কারণ তখন সে কিছুর পরোয়া করে না। এটা বাড়তে থাকে। এটা আনন্দের। যখন কেউ কিছুর পরোয়া করবে না, তখনই মজার মাত্রা বাড়বে। আমার এক বন্ধু বলত, ৩৫ বছর পরই মেয়েরা অধিক উপভোগ করে। ব্যাখ্যা করে বলে, সে কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায় না। যে মেয়েটি আর কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায় না, তার সঙ্গে জমে বেশি। সে বলেছিল, 'পঁয়ত্রিশের পর মেয়েরা কোনো কিছুর পরোয়া করে না,' বলেন বিদ্যা। এরপর হেসে বিদ্যা বলেন, 'আমি বলি, চলিস্নশের পর মেয়েরা আরো বেশি পরোয়া করে না।' হিন্দি 'পিংক' ছবির তামিল রিমেকে অজিত কুমারের বিপরীতে দেখা যাবে এই অভিনেত্রীকে। আর এটাই বিদ্যার প্রথম তামিল ছবি। বিদ্যা বালান কেরিয়ার যখন শুরু করেছিলেন এর অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে ছিল। একটা সময়ের পর তার চেহারা বাড়তে থাকে। যা নিয়ে বলিউডে একাধিকবার কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। তাকে নিয়ে সিনে দুনিয়াতেও ট্রোল হয়েছে নিত্য। আজ সে সব অতীত। বর্তমানে চুটিয়ে কাজ করছেন অভিনেত্রী। বিদ্যা বালান বরাবরই বলিউডের অন্দরমহল নিয়ে স্পষ্ট মন্তব্য করতে দ্বিধাবোধ করেন না। যদিও কঙ্গনা রানাওয়াতের মতো বিতর্ক সৃষ্টি না করলেও, কাস্টিং কাউচ নিয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি একাধিকবার। যে কাস্টিং কাউচের শিকার হয়েছেন একাধিকবার অভিনেত্রী নিজেও। তথাকথিত অভিনেত্রীর যে সংজ্ঞা সাধারণ মানুষের মস্তিষ্কে গেঁথেছিল, তা হলো দেখতে সুন্দর, ফর্সা, সিস্নম, লম্বা, টিকালো নাক থাকা এক নারী প্রকৃত অভিনেত্রীর উদাহরণ। যদিও বিদ্যা বালান কেরিয়ার যখন শুরু করেছিলেন এর অধিকাংশ বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে ছিল। একটা সময়ের পর তাঁর চেহারা বাড়তে থাকে। যা নিয়ে বলিউডে একাধিকবার কটাক্ষের শিকার হতে হয়েছে অভিনেত্রীকে। তবে প্রথম থেকেই এই লড়াকু মানসিকতা তার ছিল না। যার ফলে, একটা সময় নিজেকেই নিজে ঘৃণা করতেন বিদ্যা বালান। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা দেখতে মোটেই তার পছন্দ হতো না। তিনি নিজেই নিজেকে বিচার করা শুরু করেছিলেন। যদিও এই মানসিক যন্ত্রণা খুব বেশিদিন ভোগ করতে হয়নি তাকে। একটা সময়ের পর তিনি প্রমাণ করেছিলেন এই চেহারা নিয়ে তিনি একাই একটি ছবিকে টেনে নিয়ে যেতে পারেন। তার ছবি চলার জন্য তথাকথিত কোনো হিরোর প্রয়োজন হয় না। আর এখন তিনি পস্নাস সাইজ নিয়ে বেজায় খুশি। সবাইকে একবাক্যে উপদেশ দিয়ে থাকেন, নিজের শরীর সুস্থ রাখাটা জরুরি। কেমন দেখতে লাগছে, শরীরের গঠন কেমন, তার থেকে অনেক বেশি প্রয়োজন ভেতর থেকে ভালো থাকা। যদি কেউ ভেতর থেকে সুস্থ থাকে তবে তিনি মোটা হন কিংবা রোগা কোনো কিছুতেই প্রভাব ফেলে না। কেবল মুখে নয়, নিজের কাজ দিয়ে এ সত্য প্রমাণ করে দিয়েছেন বিদ্যা বালান। একবার খোদ সালমান খানই তাকে কটাক্ষ করেছিলেন। তাকে নিয়ে সিনে দুনিয়াতেও ট্রোল হয়েছে নিত্য। আজ সে সব অতীত। বর্তমানে চুটিয়ে কাজ করছেন অভিনেত্রী। একের পর এক ছবি মুক্তি পাচ্ছে তার। আর বক্স অফিসে অন্যদের টেক্কা দিয়ে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। তার ছবিতে তিনি একাই একশ। ফলে এখন বিদ্যা বালান এক অনুপ্রেরণার নাম। বিশ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে বিদ্যা অনেক উলেস্নখযোগ্য ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকদের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন। পরিণীতা, লাগে রাহো মুন্না ভাই, গুরু, ভুল ভুলাইয়া, পা, ইশকিয়া, নো ওয়ান কিলড জেসিকা, দ্য ডার্টি পিকচার, কাহানি, ঘনচক্কর, শাদি কে সাইড এফেক্ট, ববি জাসুস, হামারি আধুরি কাহানি, কাহানি টু, বেগমজান, তুমহারি সুলু, মিশন মঙ্গল, শকুন্তলা দেবী, শেরনী, জলসা এবং নিয়ত এর মতো ছবিগুলোতে দর্শক বিদ্যাকে বিচিত্র ধরনের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করতে দেখেছেন। সর্বশেষ নিয়ত ছবিতে একজন চৌকস নারী গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভূমিকায় দেখা গেছে। আগামীতে জনপ্রিয় হরর কমেডি সিনেমা ভুল ভুলাইয়ার নতুন পর্বে তাকে আবারো মনজুলিকা চরিত্রে দেখা যাবে। প্রায় ১৭ বছর আগে ভূতের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালান। 'ভুল ভুলাইয়া' সিনেমায় তার অভিনীত সেই চরিত্রটির নাম মঞ্জুলিকা। এ সিনেমার দ্বিতীয় কিস্তিতে মঞ্জুলিকার চরিত্রে দেখা গিয়েছিল টাবুকে। ১৭ বছর পর সিরিজের তৃতীয় কিস্তিতে আবারও ফিরছেন বিদ্যা, এমন খবরই দিয়েছে গণমাধ্যম। শুধু ফিরছেনই না, এ সিনেমার বেশিভাগ অংশে বাংলায় কথা বলতেও শোনা যাবে তাকে। এর কারণ, সিনেমাটির প্রায় আশিভাগ শুটিং হবে কলকাতা ও তার আশপাশে। 'ভুল ভুলাইয়া' ও 'ভুল ভুলাইয়া-২' মুক্তির পর বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসাও করেছিল। প্রথম কিস্তিতে অক্ষয়কে দেখা গেলেও দ্বিতীয় কিস্তিতে তিনি ছিলেন না। তৃতীয় কিস্তিতেও নেই। তবে ভক্তদের দাবি তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য। নির্মাতা আনিস বাজমী অক্ষয়কে ফিরিয়ে না আনলেও বিদ্যাকে ফিরিয়ে এনেছেন। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে শুরু হয়েছে এ সিনেমার কাজ। এ প্রজেক্টের মাধ্যমে ফের বাণিজ্যিক সিনেমায় ফিরছেন অভিনেত্রী। বিদ্যা বালান ছাড়াও সিনেমায় আরও দেখা যাবে কার্তিক আরিয়ানকেও। তিনি অবশ্য দ্বিতীয় কিস্তিতেও ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে