যার শোবিজ অঙ্গনে ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল জয়া মাসউদ নামে। দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান। মডেল ও অভিনেতা ফয়সাল আহসানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে নিজের নামের শেষে মাসউদের বদলে জুড়ে নেন আহসান। সেই থেকে তিনি 'জয়া আহসান' নামেই দুই বাংলায় সমধিক পরিচিত।
দুই দশকের বেশি সময় চলচ্চিত্র পথচলা এই অভিনেত্রীর। নাটকের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন তিনি। পরে সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। নূরুল আলম আতিক পরিচালিত 'ডুবসাঁতার' দিয়ে নাম লেখান বড় পর্দায়। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ভারতেও তার এক দশকের বেশি সময়ের ক্যারিয়ার। প্রথমে কলকাতা এবং এরপরে বলিউড।
অনেকেই অবশ্য বলেন, জয়া আহসানের বয়স বাড়ে না। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি কাটিয়ে ফেলেছেন ২৭ বছর! নায়িকার আসল বয়স নিয়ে বিতর্ক থাকলেও বিয়ে আর ডিভোর্স নিয়ে কোনো কনফিউশন নেই।
জয়া আহসানকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ও কমতি নেই। তবে গত দুদিন/তিন বছরে তাকে বিয়ে, বিচ্ছেদ এবং ঘরসংসার নিয়ে বেশি কথা বলতে দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আবারও বিয়ে প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জয়া। বলবেন হয়ত আরও বারবার। তিনি বলেন, 'বর্তমান জীবন খুবই এনজয় করছি। দেখুন, পরিবার তো শুধু স্বামী-স্ত্রীকেই ঘিরে নয়, অথবা পার্টনার হলেই হয় না, পরিবারে আরও অনেকেই আছে। পরিবারে মা-বাবা আছেন, আমার বাড়িতে যেসব লোক কাজ করেন তারাও আছেন। চারপেয়ে পোষ্য আছে। আমি খুবই এনজয় করি।'
আসলে যত সময় ঘনিয়ে আসছে ততই যেন সংসার নিয়েই কথা বলার ফুসরতই বাড়ছে বেশি। তবে তখন আর সংসার করার আগ্রহ দেখা যাবে না। ক্যারিয়ারে একাধিক সাফল্যের পলক মুকুটে যুক্ত করলেও ব্যক্তিজীবনে বর্তমানে সিঙ্গেল তিনি। কিন্তু সিঙ্গেল জয়া মাসউদ তো বিয়ে করেছিলেনই। মডেল ফয়সাল আহসানের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন জয়া মাউসাদ। ভালোবেসে ফয়সালকে বিয়ের পর নিজের নামের পাশে জুড়েছিলেন স্বামীর পদবি। একসঙ্গে বেশ কিছু নাটকে অভিনয়ও করেছেন জয়া-ফয়সাল। বিয়ে করে নিজের নামের অংশ মাউসাদ ফেলে ফয়সালেরই আহসান নিয়েছিলেন। ২০১১ সালে বিয়েবিচ্ছেদ হয় তাদের। ১৯৯৮ সালে ফয়সাল আহসানকে বিয়ে করেছিলেন জয়া। কিন্তু কী কারণে তাদের মধ্যে সেই বিচ্ছেদ হয় সেটা এখনো তাদের কেউই পরিষ্কার করে বলেনি। বিচ্ছেদের আগুনে পুড়লেও প্রকাশ্যে ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তেমন কথা বলেন না জয়া আহসান। দুজনেই একে অপরের প্রতি সম্মান বজায় রেখে চলেছেন। সেটা জ্বলন্ত প্রমাণ তার নামের সঙ্গে আহসান রেখে দেওয়া। সম্ভবত এই বোধ থেকেই এবার তাদের দুজনকে আবার এক হওয়ার জন্য বার্তা দিলেন সিদ্দিকী নাজমুল আলম।
ক্যারিয়ারের প্রথমদিকেই, জয়া খুঁজে পেয়েছিলেন তার মনের মানুষকে। সেই সময়ে তার নাম ছিল জয়া মাউসাদ। ভালোবেসে তিনি বিয়ে করেছিলেন নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল এবং অভিনেতা ফয়সাল আহসান উলস্নাহকে। ২০১১ সালে ১৩ বছরের সেই দাম্পত্য জীবনের ইতি টানেন। তবে সাবেক স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা আজও অটুট জয়ার মনে। তাই হয়তো নিজের নামের পাশ থেকে সাবেক পদবি আজও মুছে ফেলেননি জয়া। জানা যায়, ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার নবাব খাজা আহসানউলস্নাহ পরিবারের সন্তান ফয়সাল আহসানের পুরো নাম মোহাম্মদ ফয়সাল আহসানউলস্নাহ। এক যুগ ধরে ফয়সাল আহসান জয়ার স্বামী না হলেও জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখনো কেন তার নামের অংশ ধরে রেখেছেন? আর কেন ডিভোর্সের পথে হেঁটেছিলেন?
জানা যায়, ব্রিটিশ ভারতের ঢাকার নবাব খাজা আহসানউলস্নাহ পরিবারের সন্তান ফয়সাল আহসানের পুরো নাম মোহাম্মদ ফয়সাল আহসানউলস্নাহ। এক যুগ ধরে ফয়সাল আহসান জয়ার স্বামী না হলেও জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী এখনো কেন তার নামের অংশ ধরে রেখেছেন? ভক্ত-অনুরক্তদের রয়েছে জানার কৌতূহল। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাব কখনোই দেননি অভিনেত্রী।
তবে সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আজতক বাংলার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফয়সাল আহসানরা ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। তার পূর্বপুরুষদের হাতেই গড়ে উঠেছিল সদরঘাটে অবস্থিত দেশের ঐতিহাসিক স্থাপনা আহসান মঞ্জিল। এমন একটি পরিবারের বউ হয়েছিলেন জয়া। আর তাই ডিভোর্সের পরও 'আহসান' পদবি নাম থেকে মুছে ফেলতে পারেননি।
বিচ্ছেদের পর অভিনয় ক্যারিয়ারের দিকেই ফোকাস করেন জয়া। বাংলাদেশের সিনেমার পরে তাকে দেখা দিয়েছে টলিউড এবং বলিউডের সিনেমাতেও। কী কারণে তাদের বিচ্ছেদ হয় তা এখনো কাউকেই জানাননি তিনি। জয়া সম্প্রতি ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, তিনি কিছু বিষয় আড়ালে রাখতেই পছন্দ করেন। সেই সঙ্গেই জয়া জানান, সেই সময়ে তার সম্পূর্ণ ফোকাস ছিল কাজের দিকেই। তার নিজের কাজ থেকে সরে আসেননি তিনি।
কিন্তু মানুষ শেষ পর্যন্ত তো একাই। যত আলোকোজ্জ্বল ও আড়ম্বরপূর্ণ ব্যক্তিদের ভিড়ে তাকে দেখা যাক এক সময় সেখান থেকে তাকেও একা হয়ে যেতেই হবে। সেখানে সে শুধু থাকবে। একা থাকা প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর পরিকল্পনা প্রশ্নে জয়ার উত্তর, 'আমি তো কোনো কিছু পরিকল্পনা করি না। যদি মনে করি যে, সিঙ্গেল থেকে ডাবল হতে চাই, দরকার আছে, তখনই হব। তবে এই মুহূর্তে আমার কোনো পরিকল্পনা নেই। কারণ, আমি খুবই ভালো আছি, শান্তিতে আছি চারদিকে। আমার আপাতত কোনো পস্ন্যান নেই।'
জয়ার তারুণ্য প্রসঙ্গে অভিনেত্রীর ভাষ্য, 'তরুণ কীভাবে আছি জানি না, তবে সময়টাকে উপভোগ করাটাই মনে হয় সবচেয়ে বড় বিষয়।'
সামনে কাজ নিয়ে জয়া বলেন, 'বাংলাদেশে এখন পরিচালক আশফাক নিপুণের সঙ্গে একটি ওয়েব সিরিজ। যেটা আমার প্রথম ওয়েব সিরিজ হবে। আর ভারতেও অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর একটি কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।'
এর আগে ভারতীয় সাময়িকী ফিল্মফেয়ারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিচ্ছেদ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জয়া। সে সময় জয়ার ভাষ্য ছিল, 'উত্থান-পতন প্রত্যেক মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা যুদ্ধের মতো। সেই সময়ে আমার মানসিক ধারণাটাই পরিবর্তন হয়ে গেল। আমি পুরোপুরিভাবে কাজের দিকে দৃষ্টি ঘোরাই। সাধারণত সেই সময়ে মেয়েরা অনেক কিছু থেকেই বিচু্যত হয়ে পড়ে। এমনকি ফোকাস থেকেও সরে যায়। কিন্তু আমার কাজ আমাকে সান্ত্বনা দিয়েছে। যে কারণে আমি কাজকেই ভালোবেসেছি। আমি কখনোই কাজ থেকে দূরে সরে যাইনি। আমি আমার এই যাত্রাকে ভালোবাসি। এর মধ্য দিয়েই মানুষ আমার প্রশংসা করেন, আমি কাজকেই সম্মান করি।'
এদিকে এক সময়ের জনপ্রিয় মডেল ফয়সাল অভিনয় জীবন শেষ। বর্তমানে রেস্টুরেন্ট, বুটিক হাউস ও আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। এছাড়া সাবেক হকি খেলোয়াড়দের নিয়ে 'ভ্যাটারান হকি বাংলাদেশ' নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন বলে শোনা যায়।
আর বিচ্ছেদের পর থেকেই অভিনয়েই জয়ার দিগিজ্বয়। এর পাশাপাশি চারপেয়ে সন্তানদের নিয়েই সময় কাটে তার। সাবেক স্বামীর প্রতি কোনো তিক্ততা নেই জয়ার। তার সাবেক স্বামীও কোনো দিন প্রকাশ্যে জয়াকে নিয়ে কোনো বিরূপ মন্তব্য করেননি।