'সবাই আমাকে এখন 'কাজলরেখা' নামে ডাকছেন। প্রথম সিনেমা করে এতটুকু বিশাল পাওয়া কিছু।' সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া লোকসাহিত্যের অনন্য সম্পদ মৈমনসিংহ গীতিকা অবলম্বনে নির্মিত 'কাজলরেখা' চলচ্চিত্রটি দর্শক ও সমালোচকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। তবে প্রথম সিনেমাতেই আলাদা করে নজর কেড়েছেন সিনেমাটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা মন্দিরা চক্রবর্তী। সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন তিনি।
অবশেষে বৈশাখেই দর্শকের মাঝে মুগ্ধতা ছড়াতে আসে মন্দিরার বহুল প্রতীক্ষিত এবং তার প্রথম অভিনীত সিনেমা 'কাজলরেখা'। বারবার মুক্তির তারিখ পেছাতে পেছাতে এমন হয়েছে সর্বশেষ ৯ ফেব্রম্নয়ারির তারিখও পিছিয়ে দিয়ে অবশেষে সিনেমাটির মুক্তির তারিখ খুঁজে পেয়েছে বাংলা বছরের সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর মাস বৈশাখ।
অনেকেই ভাবতে পারেন কে এই মন্দিরা, প্রথমেই এমন একটি সুন্দর গল্পের সিনেমায় কাজ করার সুযোগ পেলেন? ছোটবেলায় শুরু করেছেন একজন নাচিয়ে হিসেবে। পারিবারিক নাম মন্দিরা চক্রবর্তী। যেখানে নৃত্য পারিবারিক ও ধর্মীয় সংস্কৃতিরও অংশ। সে হিসেবেই বড় হচ্ছিলেন ধীরে ধীরে মন্দিরা। ২০১২ সালে চ্যানেল আই আয়োজিত 'সেরা নাচিয়ে' নামের একটি নৃত্য প্রতিভা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় সবার মনোযোগ আকর্ষণ করেন তিনি। দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছিলেন। এরপর নাটকেও অভিনয় করে আসছিলেন। আর সেই যে নৃত্যশিল্পী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর মন্দিরা এরপর হঠাৎ করেই হয়ে গেলেন চলচ্চিত্রের অভিনয় শিল্পী।
নৃত্যশিল্পী থেকে অভিনয় শিল্পী হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। তবে মন্দিরা চলচ্চিত্রে পা রেখেছেন একেবারে সরাসরি নায়িকা হিসেবেই। সেই অভিষেক সিনেমাটির পরিচালকও পেয়ে গেলেন 'মনপুরা' সিনেমা দিয়ে রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া গিয়াস উদ্দিন সেলিমকে। একেই বলে পয়মন্ত কপাল!
যখন এই পরিচালকের সিনেমায় নায়িকা হিসেবে যুক্ত হলেন মন্দিরা- তখন সিংহভাগ মানুষের কাছে আধো চেনা, আধো অচেনা। অনেকেই ভাবছিলেন এ নায়িকা আবার কে? তাও এমন জাঁদরেল পরিচালকের সিনেমায়? সত্যিই একজন আনকোরাকে নিয়ে এসে এ পরিচালক তার সিনেমায় যেন একটা জুয়াই খেলতে যাচ্ছেন!
৪০০ বছর আগের একটি ক্লাসিক রূপকথাভিত্তি মৈমনসিংহ গীতিকার 'কাজলরেখা' অবলম্বনে তৈরি 'কাজলরেখা'। জীবনের প্রথম ছবিটিতেই এই চিত্তাকর্ষক গল্পের নাম ভূমিকায় অভিনয় করলেন মন্দিরা।
এই যে মন্দিরার মতো একদম আনকোরাকে নিয়ে এমন একটি বহু জনশ্রম্নত লোক কাহিনীভিত্তিক সিনেমা বানালেন, সফল হয়েছে তো? এর উত্তর খুঁজতে গেলে পরিচালকের সঠিক বিবেচনারই পরিচয় পাওয়া যায়। নয়তো একটা ঐতিহাসিক ধ্রম্নপদী গল্পের সিনেমায় তারকা নায়িকা দিয়ে বানালে অবিবেচকের কাজই হতো। কারণ, যারা 'মৈমনসিংহ' গীতিকা পড়েছেন তারাই বুঝবেন, সিনেমাটিতে তারকা অভিনেত্রী থাকলে দর্শকই সেই অকৃত্রিম 'কাজলরেখা'র কাজলরেখাকে খুঁজে পেতেন না সে রকম বাণিজ্যিক অভিনেত্রীর মধ্যে। এটা এমনই ধ্রম্নপদী জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনী, এমনই লৌকিক জীবনের কালজয়ী গল্প যে, এর নায়িকা তারকা বা বাণিজ্যিক শিল্পী দিয়ে বানালেই বরং গল্পটি কৃত্রিম হয়ে উঠত। একটু অচেনা-অচেনাগন্ধী শিল্পী দিয়েই বরং এমন গল্পের সিনেমা ভালো হয়। 'মনপুরা' সিনেমার ব্যবসায়িক সাফল্যের রহস্যও ছিল তাই। সিনেমাটিতে সুপার-ডুপার তারকা শিল্পী রাখলে মনে হয় না সিনেমাটি এত সাফল্য পেত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারকা শিল্পীরা মানানসই বরং কমার্শিয়াল অ্যাকশনধর্মী সিনেমাতেই।
একটি সিনেমার কাহিনীই যদি তার সবকিছুর 'হিরো' হয় তখন আলাদাভাবে কোনো হিরো বা তারকা লাগে না। 'কাজলরেখা' সে রকমই গ্রাম-বাংলার কাহিনী। 'মৈমনসিংহ' গীতিকার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে রয়েছে রূপকথা 'কাজলরেখা'র পালায়। এক সময় যাত্রাপালা কিংবা বইয়ের পাতায় উঠে এসেছে এই কল্পকাহিনীটি। অসংখ্য দর্শক-শ্রোতা মুগ্ধ হয়েছেন এই পালাটি দেখে।
সিনেমাটি মুক্তির পর এখন সবাই আমাকে 'কাজলরেখা' নামে ডাকছেন- নিজের উচ্ছ্বাস এভাবেই গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। 'কাজলরেখা' মুক্তির পর সময় কেমন কাটছে?
ক্যারিয়ারের সবচেয়ে সুন্দর সময় কাটছে। বড় পর্দায় প্রথম নিজের উপস্থিতি সেজন্য অন্যরকম সময় কাটছে। চারপাশের মানুষজন প্রশংসা করছেন। বন্ধুরা প্রশংসা করছেন। পরিবার থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছি। সব মিলিয়ে নতুন নতুন অনুভূতি জন্ম নিচ্ছে আমার ভেতরে। এই ভালো লাগা নিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
মন্দিরা জানান, বড় পর্দায় প্রথম নিজের উপস্থিতি অন্যরকম সময় কাটছে। চারপাশের মানুষজন প্রশংসা করছেন। বন্ধুরা প্রশংসা করছেন। পরিবার থেকেও ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
ঈদের দিন দর্শকবেশে কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছি। স্টার সিনেপেস্নক্সে প্রথমে যাই এবং সেখানে যাওয়ার পর মনটা ভরে যায়। কেননা, দর্শক কানায় কানায় ভরা ছিল। হাউসফুল গেছে সবকটি শো। তারপর আরও একটি প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে হাউসফুল দেখতে পাই। এখন পর্যন্ত যতদূর খোঁজ নিয়েছি, মুক্তির পর রাজধানীর সবগুলো প্রেক্ষাগৃহে হাউসফুল যাচ্ছে। 'কাজলরেখা' হাউসফুল যাচ্ছে সেজন্য মনটা ভরে গেছে।
স্টার সিনেপেস্নক্সে দেখেছি। পরিবারের সবাই মিলে দেখেছি। পরিবারের সবাই খুব খুশি। আমিও বড় পর্দায় নিজেকে দেখে ভীষণ খুশি। 'কাজলরেখা' দিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। এতদিন তো একটা স্বপ্নের মধ্যে ছিলাম। অনেক স্বপ্ন দেখতাম 'কাজলরেখা' নিয়ে। এখন আমার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। আমি খুশি। দর্শকদের সঙ্গে সিনেমাটি দেখেও অনেক খুশি।
আরেকটি কথা, পহেলা বৈশাখ কেমন কেটেছে এবার? সত্যি কথা বলতে এবারের বাংলা নববর্ষ আমার জন্য স্পেশাল ছিল। পহেলা বৈশাখেও প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছি। ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। একটি সিনেমা বড় দুটি উৎসবকে ধরতে পেরেছে। সীমান্ত সম্ভারে গিয়েছিলাম নববর্ষের দিন। ওখানেও 'কাজলরেখা' হাউসফুল যাচ্ছে। আমি মনে করি, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ আমার জন্য, 'কাজল রেখা'র জন্য ভালোবাসা নিয়ে এসেছে।
অবশ্যই। দর্শকরা আমাকে দেখে কথা বলেছেন। আমার সামনেই 'কাজলরেখা' সিনেমার প্রশংসা করেছেন। আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। সব শিল্পীই প্রশংসা করেছেন। আমাকে অনেক দর্শকরা 'কাজলরেখা' নামে ডেকেছেন। মন্দিরার চেয়ে 'কাজলরেখা' নামেই বেশি ডাকছেন দর্শকরা। এটা বড় প্রাপ্তি।
'প্রথম অভিনীত সিনেমা 'কাজলরেখা' দিয়ে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে। পহেলা বৈশাখেও প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছি। ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। একটি সিনেমা বড় দুটি উৎসবকে ধরতে পেরেছে। সীমান্ত সম্ভারে গিয়েছিলাম নববর্ষের দিন। ওখানেও 'কাজলরেখা' হাউসফুল যাচ্ছে। আমি মনে করি, ঈদ ও পহেলা বৈশাখ আমার জন্য, 'কাজলরেখা'র জন্য ভালোবাসা নিয়ে এসেছে।' বললেন নবাগত এ অভিনেত্রী।
দর্শকদের নিয়ে মন্দিরা জানান, অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন দর্শকরা। অনেক দর্শক 'কাজলরেখা' নামেই ডেকেছেন। এটা বড় প্রাপ্তি। প্রথম সিনেমা থেকে অর্জন বলতে মানুষের ভালোবাসাটাকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন মন্দিরা।
গিয়াস উদ্দিন সেলিমের পরিচালনায় এতে অভিনয় করেছেন 'পরাণ' ও 'হাওয়া' চলচ্চিত্র দিয়ে পরিচিতি পাওয়া অভিনেতা শরীফুল রাজ। আর খল চরিত্রে কাজ করেছেন খাইরুল বাশার।
আরও আছেন অভিনেতা আজাদ আবুল কালাম, ইরেশ যাকের, গাউসুল আলম শাওনসহ অনেকে।