নায়কদের খুব একটা সমস্যার না হলেও নায়িকারা কমবেশি প্রায় সবাই প্রচন্ড সমস্যায় পড়ে যান যখন তার ক্যারিয়ারে নায়িকা হিসেবে থাকার বয়সটি পেরিয়ে যায়। তখন প্রস্তাব পেলেও তার পক্ষে নায়িকার বাইরে অন্য কোনো চরিত্রে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচন্ড কষ্ট হয়। যেটা পুরুষ অভিনেতাদের ক্ষেত্রে এমন কষ্ট তেমন একটা হয় না। যেমন বাংলার মুকুটহীন সম্রাট খ্যাত আনোয়ার হোসেন শেষ দিকে অত্যন্ত ছোট চরিত্রেও অভিনয় করেছেন। কিন্তু সুপারস্টার নায়িকারা এতটা স্বাভাবিক হতে পারেন না। তাতে তাদের খুব কষ্ট হয়। এই কষ্ট থেকেই এক সময়ের নায়িকা পরবর্তী সময়ে তার ক্যারিয়ারকে সঙ্কোচিত করে ফেলেন। অনিয়মিত হয়ে পড়েন সিনেমায়। সাংবাদিকদের সামনে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়লে মান বাঁচাতে বলেন, 'আমি এখন গল্প, স্ক্রিপ্ট, চরিত্র ও পরিচালক বাছাইয়ের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। গল্প ও চরিত্র পছন্দমতো না হলে অভিনয় করছি না'- ইত্যাদি।
এক সময়ের হার্টথ্রব নায়িকা ঐশ্বরিয়ার হয়েছে তাই। দীর্ঘদিন ধরেই লম্বা বিরতি দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান। যখন নতুন করে ফিরে দাঁড়ান তখনই সংবাদ হয় 'ফের ক্যামেরার সামনে ঐশ্বরিয়া'। সেই ২০১৩ সাল থেকে হওয়া শুরু। তারপর ২০২১ সালে। এবার আবারও দীর্ঘ বিরতির পর ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। যাকে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল মণি রত্নমের 'পন্নিয়িন সেলভান-২' সিনেমায়। এরপর ক্যামেরার সামনে দেখা যায়নি সাবেক এ বিশ্বসুন্দরীকে।
অবশ্য ল'রিয়াল নামে একটি প্রসাধনী পণ্যের বিজ্ঞাপনে প্রতি বছরই দেখা যায় তাকে। কাজেই পাঠক বলতে পারেন এ আর নতুন কি?
নতুন না হলেও আবার নতুন রূপেই বিজ্ঞাপনটির শুটিং করেছেন সম্প্রতি এ রাই। অনেকে প্রশংসাসূচক মন্তব্য করলেও নেটিজেনদের কেউ কেউ এ নিয়ে তাকে ট্রল করতেও ছাড়েননি।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার জীবনে যেরকম ঝড় বইতে শুরু করেছিল তাতে অনেকের মনে হয়েছিল সিনেমা তো দূরের কথা, সাধারণ এমন বিজ্ঞাপনেও আর তাকে দেখা যাবে কিনা, এ নিয়ে ছিল ঘোরতর সংশয়। কারণ, একেবারেই খাদের কিনারায় অপেক্ষা করছিল ঐশ্বরিয়া-অভিষেকের সংসার। কখন ভেঙে তছনছ হয়ে যায় তাদের সাধের সংসার এরই অপেক্ষায় ছিল গোটা ভারতের মানুষ। অবশেষে বচ্চন পরিবারে চূড়ান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস। এই স্বস্তির নিঃশ্বাস যেন একটা প্রবল ঝড় থেমে যাওয়ার পর যেমন শান্ত ও শীতল হাওয়া বিরাজ করে, তেমন স্বস্তিরও।
স্বস্তির তো হবেই; কেননা, একদিকে নতুন করে দাঁড়ালেন ক্যামেরার সামনে আবার প্রায় ভাঙা সংসারেও লাগতে বসেছে জোড়া। যদিও এই জোড়ার দাগটি এখনো মুছে যায়নি- তারপরেও এতটুকুতেই দারুণ এক স্বস্তি নিয়েই পরিবারের সঙ্গে রঙের উৎসব পালন করলেন ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন। বচ্চন পরিবারের নাতনি নভ্যা নাভেলি নন্দার শেয়ার করা ছবিতে পরিবারের সঙ্গে দোল উদযাপন করতে দেখা গেল এই 'রাই সুন্দরী'কে।
কিন্তু হঠাৎ কেন এত আলোচনায় নভ্যার শেয়ার করা ঐশ্বরিয়ার ছবি? উত্তর খুঁজতে ফিরতে হবে পেছনে। শোনা গিয়েছিল, বচ্চন পরিবারের সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না। আর সে কারণেই নাকি বাড়ি ছেড়েছেন ঐশ্বরিয়া। এমনকি ঐশ্বরিয়া এবং অভিষেক একে অপরের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিল বেশ কিছু দিন। তখন তার জন্মদিনে বচ্চন পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো শুভেচ্ছা আসেনি। পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের একসঙ্গে দেখা গেলেও দূরত্ব যেন কমছিল না। তবে এরপর দুজনের একসঙ্গে ছবি শেয়ার করেছিলেন অভিষেক বচ্চন। তবে পরিবারের সঙ্গে দেখা যায়নি ঐশ্বরিয়াকে। গুঞ্জনের পর এই প্রথম পরিবারের সঙ্গে দেখা গেল ঐশ্বরিয়াকে।
সামাজিকমাধ্যমে হোলির আগের রাতে হোলিকা দহন পালনের ছবি শেয়ার করেছিলেন নভ্যা। বাড়ির উঠানে আগুন জ্বেলে পালন হয় হোলিকা দহন উৎসব। একে অপরকে আবিরের টিপ পরিয়ে দেন সবাই। এরপর দোলের দিন সকালেও একগুচ্ছ ছবি শেয়ার করেন নভ্যা। আদরের নাতনি জড়িয়ে ধরে রয়েছেন অমিতাভ বচ্চন ও জয়া বচ্চনকে। কখনো আবার সেই ছবিতেই ধরা পড়ল ছোটদের মতোই দোল খেলছেন জয়া। একেবারে অন্য মেজাজে দেখা গেল বর্ষীয়ান অভিনেত্রীকে।
ঐশ্বরিয়ার বাবা কৃষ্ণরাজ রাই ২০১৭ সালের ১৮ মার্চ মারা যান। তারপর থেকে প্রতি বছর অভিনেত্রী এই তারিখে বাবার সঙ্গে কাটানো সুমধুর মুহূর্তের একটি ছবি পোস্ট করেন। এবারও ঐশ্বরিয়া, তার মা বৃন্দা রাই এবং মেয়ে আরাধ্যা বচ্চনের সঙ্গে বাবার ফটো ফ্রেমসহ একটি ছবি শেয়ার করেছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আরাধ্যা আর ঐশ্বরিয়া দুজনেই পরে আছেন সাদা পোশাক। আর যত দিন যাচ্ছে, আরাধ্যা যেন সত্যিই মায়ের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে।
দাদুর কোলের ছোট্ট আরাধ্যার একটি ছবিও সামাজিকমাধ্যমে শেয়ার করেছেন ঐশ্বরিয়া। যেখানে তার মেয়ে তার বাবার গালে চুমু দিচ্ছে। আরাধ্যার বয়স দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছবিটি বেশ আগের। তখন আরাধ্যা বয়স ৪ বা ৫ বছর হবে।
যখন ব্যক্তিগত জীবনে খুবই খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে ঐশ্বরিয়াকে এবং যখন বচ্চন পরিবারের থেকে আলাদা থাকছিলেন মায়ের কাছে তখনই এই বার্তা দেন ঐশ্বরিয়া। শাশুড়ি জয়া ও ননদ শ্বেতার সঙ্গে একেবারেই ভালো সম্পর্ক নেই তার। এরই মধ্যে ছিল শ্বেতার ৫০তম জন্মদিন। সেই পার্টিতেও ছিলেন না ঐশ্বরিয়া, অভিষেক ও আরাধ্যা তাদের কেউই।
প্রায়ই খবর হয় এবার আর রেহাই নেই, বিচ্ছেদ হচ্ছেই। তবে এবার শাশুড়ির সঙ্গে যেভাবে রাই হোলি উৎসবে নেচে-গেয়ে মেতে উঠেছেন তাতে করে কে না বলবে উপমহাদেশীয় পরিবারগুলোতে এমন চিত্র একেকবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো মতো চির নতুনই!