প্রায়ই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন নুসরাত জাহান। টলিউডের অভিনেত্রী। তার মাও অভিনেত্রী ছিলেন। একইসঙ্গে বিতর্কিত ও দর্শকপ্রিয়। অনেকটা কঙ্গোনা রানাউতের মতো। যারা নানা সময় প্রচারে থাকতে বিতর্ককেই উসকে দেন। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় নেটদুনিয়ায়।
সম্প্রতি একটি ভাইরাল হওয়া ভিডিও নিয়ে বসিরহাটের এই সংসদ সদস্য নুসরাতকে তুলোধোনা করেছেন নেটিজেনরা। কী এমন করেছেন নুসরাত, যে তার ভিডিও নিয়ে হচ্ছে এত হইচই! যশ দাশগুপ্তের সঙ্গে নুসরাতের এক লিপলকের অন্তরঙ্গ ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, ব্যক্তিগত ভিডিও কেন সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই আবার টেনে এনেছেন নায়িকার রাজনৈতিক পরিচয়ও।
নুসরাত বসিরহাটের সংসদ সদস্য, একজন জনপ্রতিনিধি। তার অন্তরঙ্গ ভিডিও যে অনেকেই ভালোভাবে নেবেন না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। তবে প্রশ্ন হলো, নুসরাতের ভিডিও ভাইরাল কারা করেছেন।
কোথা থেকেই বা সেই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল। জানা গেছে, নুসরাত ও যশের একটি পার্টির ভিডিও ছিল সেটি। গেল বছরকে বিদায় জানাতে এক পার্টিতে মেতে উঠেছিলেন তারা। ভালোবেসে হঠাৎই নুসরাতকে চুমু খেয়ে বসেন যশ। নুসরাতও দেন সাড়া। এই ছবি শেয়ার করা হয়েছে এক ফ্যান ক্লাবের পক্ষ থেকে। যা আবার শেয়ার করেছেন নুসরাত নিজেই। কটাক্ষকে পাত্তা দিতে নারাজ নুসরাত। সাহসী ছবিই হোক বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নানা রটনা ট্রলিং যে তার জীবনে খুব একটা প্রভাব ফেলে না সে কথা স্পষ্টভাবে আগেও জানিয়েছেন তিনি। এমন কান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। ব্যক্তিজীবন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করার অনুরোধ জানিয়েছেন অনেকেই।
নুসরাতের প্রথম অভিনীত চলচ্চিত্র রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় 'শত্রম্ন।' এই চলচ্চিত্রে তিনি জিতের বিপরীতে অভিনয় করেন। অভিষেক সেই সিনেমার মতোই এরপর তার ব্যক্তিগত জীবন, চলচ্চিত্র এবং রাজনৈতিক জীবন প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই 'শত্রম্ন'-'শত্রম্ন' খেলায় কেটে যাচ্ছে একের পর এক। ইতোমধ্যে চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারও তার পেরিয়ে গেছে এক যুগেরও বেশি। অতঃপর প্রেম আর রাজনীতি এই নিয়েই রসাতলে গেল তার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার। ফ্ল্যাট বিক্রির নামে প্রতারণায়ও জড়িয়ে পড়ে নিজের তারকা ইমেজকে আরও বেশি রসাতলে নামিয়ে আনেন এই পশ্চিমবঙ্গের অভিনেত্রী ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ সদস্য।
তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদ হয়েও যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য খুব ভালো ইমেজ তৈরি করতে পেরেছেন এমনও নয়। বরং তিনি একের পর এক যেসব বিতর্কিত কাজ করে চলেছেন তাতে করে বরং মমতা ব্যানার্জীর দলটিই ইমেজের সংকটে পতিত এখন।
এরই মধ্যে গেল বছরের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকেছিলেন। সেদিন কলকাতার ইডি দপ্তরে হাজিরও হন নুসরাত। ইডির গোয়েন্দারা তাকে একটানা ৬ ঘণ্টা জেরা করেন। সে সময় নুসরাত জাহান ফ্ল্যাট বেচাকেনার দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে যেসব নথি ইডির হাতে তুলে দেন, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি গোয়েন্দারা। তাই অভিনেত্রীর কাছে আরও নথি চেয়েছেন ইডি। তখন ইডি বলেছে, কীভাবে তিনি তার নিজের সংস্থার পরিচালকের পদে থেকে ঋণ পেয়েছিলেন, সে সংক্রান্ত নথি ইডিকে দেখাতে হবে।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার অনেক জল ঘোলা করে অবশেষে শনিবার কলকাতার চাঞ্চল্যকর ফ্ল্যাট প্রতারণাকান্ডে আলিপুর আদালতে হাজির হলেন অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য নুসরাত জাহান।
এজন্য বিজেপি নেতা শাঙ্কুদেব পান্ডার নেতৃত্বে তারা সল্টলেকের সিজিও কমপেস্নক্সে গিয়ে ইডি দপ্তরে তারকা সাংসদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ জানান। এর মধ্যে নুসরাত পাম অ্যাভিনিউয়ে একটি ফ্ল্যাট কেনেন। ব্যাংককর্মীরা গড়িয়াহাট থানায় নুসরাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, আদালত কক্ষে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদকে। ফ্ল্যাট প্রতারণা মামলায় অবশেষে প্রকাশ্যে তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান।
আলিপুর জাজেস কোর্টে চারদিনের মধ্যে হাজিরা দেন তিনি। যদিও ওইদিন তার হাজিরার দিন ছিল না। কিন্তু ওইদিনই তিনি চলে এসেছিলেন আদালতে।
বিজেপি এ ঘটনার পর দাবি তুলেছে, অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেপ্তার করা হোক। তার সংসদ সদস্য পদও বাতিল চেয়েছে বিজেপি। তারা মনে করেন, এমন প্রতারক চরিত্রের কোনো সংসদ সদস্য রাজনীতিতে না থাকাই বরং ভালো। তারা বলেন, চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির বাজে দৃষ্টান্তগুলো এ সাংসদ সংসদের মতো পবিত্র জায়গাকে দূষিত করতেই বেশি ভূমিকা রাখছেন।
ফলে রাজনীতির পথ যে তার জন্য কাঁটা বিছানো- এটা বুঝে গেছেন ইতোমধ্যেই নুসরাত। তাই ভোটের সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই উত্তেজনার পারদ চড়ছে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশী নেতাদের মনে। কিন্তু নুসরাতই যেন ব্যতিক্রম। এবারের লোকসভা নির্বাচনের আগেই সংসদের শেষ দিনে তাকে একটি বিশেষ পোস্ট করতে দেখা যায়।
পোস্ট করা এই ভিডিওতে তাকে বাংলার মানুষের হয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
তিনি এদিন ১০০ দিনের মনরোগা স্কিমের আওতায় কাজ করা কর্মীদের বকেয়া টাকা নিয়েও কথা বলেন। সেই মুহূর্তের ক্লিপ পোস্ট করে একটি আবেগঘন বার্তা লেখেন নুসরাত।
নুসরাত লেখেন, সংসদে আমার শেষ দিন। ঈশ্বর এবং আমাদের সম্মানীয় দিদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ বাংলার মানুষের জন্য, তাদের হয়ে কথা বলতে সুযোগ পাওয়ার জন্য। বিশেষ করে বসিরহাট নির্বাচনী এলাকার মানুষের হয়ে কথা বলতে পারার জন্য। সবাইকে ধন্যবাদ ভালোবাসা ও সমর্থন দেওয়ার জন্য। আর তার এমন পোস্টেই ফুটে ওঠে তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নিচ্ছেন। এখন কি তবে নুসরাত পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চান টলিউডেই। কী হবে তার ভবিষ্যৎ?