রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

আত্মপ্রত্যয়ী সুনীল শেঠি

তারার মেলা ডেস্ক
  ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
সুনীল শেঠি

নায়ক এবং খলনায়ক- দুই রূপেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন বলিউড অভিনেতা সুনীল শেঠি। যিনি হিন্দি ছাড়াও ইংরেজি, মালায়ালাম ও তামিলসহ বিভিন্ন ভাষায় অভিনয় করেছেন। পুরোদস্তর একজন ডাকসাইটে অভিনেতা। তবে তার এই ডাকসাইটে অভিনেতা হওয়ার ক্ষেত্রে অভিনয় জীবনের প্রথমে কম মূল্য দিতে হয়নি। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি যেদিকে গড়িয়ে চলছিল তাতে করে তার অভিনয় জীবন অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যেতে পারত। বঞ্চিত হতো গোটা বলিউডসহ ভারত; এমন একজন ডাকসাইটে অভিনেতার অভিনয়ের আস্বাদ থেকে। ব্যাপারটি বিস্ময়কর হলেও এখানেই বেশ মজার যদি সত্যি-সত্যি এমন অভিনেতার অভিনয়ের আস্বাদ থেকে বঞ্চিত হতে হতো গোটা উপমহাদেশকে- তাহলে এর পেছনে কারা দায়ী থাকত, তখন কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতে পারত? কখনোই না। যার প্রতিভাই বিকশিত না হয় তখন তাকে নিয়েই বা কে কী আলোচনা করবে? বাস্তব সত্যটি হলো, সুনীল শেঠির অভিনয় জীবন যেখানে আটকে ছিল সেটা হলো নারী অভিনেত্রীদের তাকে পছন্দ না হওয়া। ফলে একের পর এক নারী অভিনেত্রী তাকে প্রত্যাখ্যান করতে থাকে কো-আর্টিস্ট হিসেবে না নেওয়ার বিষয়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজি হলেন একজন অভিনেত্রী। শুধু তাই নয়, যেসব নারী সুনীল শেঠিকে কো-আর্টিস্ট হিসেবে না নেওয়ার বিষয়ে বদ্ধপরিকর ছিলেন সেই সব নারীর চেয়ে অনেক বেশি অনিন্দ্য সুন্দরী নারী ছিলেন এই নায়িকা। আর সুনীল শেঠির অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার যে প্রধান সহায়িকা ছিলেন একজন অনিন্দ্য সুন্দরী নায়িকা, সে নায়িকার উদারতা থেকে যেমন প্রমাণ হয় কালো পুরুষদের প্রত্যাখ্যানের বিষয়ে বেশিরভাগ নারী বর্ণবাদী হলেও খুব কম হলেও এমন দু'একজন নারী থাকেন যারা ওই অন্যসব নারীর থেকে একেবারে আলাদা এবং যারা শুধু দেহের সৌন্দর্যেই নয়, মনের সৌন্দর্যেও অনন্য ও অসাধারণ। তাহলে এখন একনজর চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক কে ওই অনিন্দ্য সুন্দরী নারী!

তবে এই তথ্যটি গণমাধ্যমের কেউ দেননি। স্বয়ং সুনীল শেঠি নিজেই এই তথ্যটি দিয়েছেন সম্প্রতি। নিজ দেশ ভারতেই কীভাবে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন এ বিষয়ে জানিয়েছেন বলিউড অভিনেতা সুনীল শেঠি। আর সেটা নিজ কর্মক্ষেত্র 'বলিউড'-এ। তাও নিজেরই সহকর্মীদের কাছ থেকে। গায়ের রং কালো ছিল বলে তার সঙ্গে অভিনয় করতে চাইতেন না বলিউড অভিনেত্রীরা!

সুনীল শেঠিকে এখন বলিউডের সবচেয়ে সফল তারকাদের মধ্যে একজন বলে গণ্য করা হয়েছে। ৩৩ বছরেরও বেশি সময়ের ক্যারিয়ারে সুনীল শেঠি একশ'টিরও বেশি সুপারহিট ছবিতে অভিনয় করেছেন। কিন্তু তার ক্যারিয়ারের প্রথমদিকের দিনগুলোতে তার গায়ের রঙের জন্য বেশ কয়েকটি নায়িকার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। নয়ের দশকের কোনো নায়িকাই তার সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত ছিলেন না।

সুনীল শেঠি ১৯৯২ সালে দিব্যা ভারতীর সঙ্গে অ্যাকশন ফিল্ম 'বলওয়ান' দিয়ে তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। কিন্তু, এর আগে সুনীল শেঠিকে অনেক নায়িকাই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু, নয়ের দশকের সুন্দরী সুপারস্টার দিব্যা ভারতী তার সঙ্গে একটি ছবি করতে রাজি হন এবং সেখান থেকে সুনীল শেঠি সুপারস্টার হয়ে ওঠেন।

সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই দাবি করেছেন সুনীল শেঠি। ক্যারিয়ারের শুরুতে এমন অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হয়েছেন বহুবার তিনি। অপবাদও সহ্য করেছেন। সুনীল শেঠি বলেন, তিনি ১৯৯০ সালে নায়ক হওয়ার জন্য বলিউডে এসেছিলেন। সেই সময়ে মানুষের মনে নায়কের ভাবমূর্তি ছিল একেবারেই আলাদা। মানুষ কোনো কালো চামড়ার নায়ক দেখতে চাইত না।

এই কারণে পরিচালকরাও এমন লোককে কাস্ট করেননি। সুনীল শেঠি একবার বলেছিলেন যে, তার কালো চামড়ার কারণে অনেক নায়িকাই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তারা খোলাখুলি বলেছিল যে, এমন স্কিন টোনের অভিনেতার সঙ্গে কাজ করবেন না। তবে সুনীল শেঠি হাল ছাড়েননি এবং লড়াই চালিয়ে যান।

সুনীল বলেন, '৯০ দশকের শুরুর দিকে বলিউডে হিরো বলতেই আলাদা কিছুকে বোঝানো হতো। যারা হবে ফর্সা বা সুন্দর। শ্যামবর্ণের কেউ হলে তাকে খলনায়কের চরিত্রে ভাবা হতো। নায়িকাদের অনেকে এমন কথা বলতেও ছাড়তেন না, যে তাকে দেখলে তাদের 'বমি' এসে যায়। পরিচালক, নায়িকাসহ সবাই এটাই মনে করতেন। এমন ভাবনার কারণে ক্যারিয়ারে শুরুর দিকে অনেক প্রত্যাখ্যান সহ্য করেছি। কিন্তু হাল ছাড়িনি। দিব্যা ভারতীই আমাকে সহযোগিতা করেছেন। একমাত্র তিনিই আমার গায়ের রংকে প্রাধান্য না দিয়ে কাজকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তখন থেকেই বলিউডে আমার পথচলা শুরু হয়।'

সুনীল জানান, কঠোর পরিশ্রম করে, বহু প্রত্যাখ্যান সহ্য করার পর 'বলওয়ান' সিনেমায় সুযোগ পান। মুক্তির পর দীপক আনন্দ পরিচালিত এ সিনেমাটি বক্স অফিসে চুটিয়ে ব্যবসা করে। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ক্যারিয়ারে একশরও বেশি হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন সুনীল শেঠি।

গোটা নব্বইয়ের দশক জুড়ে সুনীল মূলত মারামারির চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্র খলনায়ক হিসেবে অভিনয় করে দর্শকের নজরে পড়েন। তবে দশকটির শেষের দিকে নায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তিনি। ২০০০-এর দশকের শুরুর দিকে সুনীল পুরোদস্তুর নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন। ২০০১ সালের 'পিয়ার ইশক অর মহাব্বাত' নামের দারুণ রোমান্টিক চলচ্চিত্রটিতে তিনি একেবারেই ভিন্ন লুকে উপস্থিত হন। এটাতে তিনি ইশা কোপিকর এবং অর্জুন রামপাল। ধড়কন চলচ্চিত্রের জন্য সুনীল ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছিলেন খল অভিনেতা হিসেবে ভালো অভিনয় করার জন্য। সুনীল তিনটি চলচ্চিত্র নিজেই প্রযোজনা করে অভিনয় করেছিলেন, এই সিনেমাগুলো হচ্ছে, 'খেল', 'রক্ত' এবং 'ভাগম ভাগ'।

সামনে তাকে দেখা যাবে 'ওয়েলকাম টু দ্য জঙ্গল' সিনেমায়। ছবিটি চলতি বছরের বড়দিনে মুক্তি দেওয়া হবে। ছবিটি ওয়েলকাম (২০০৭) এবং ওয়েলকাম ব্যাক (২০১৫)-এর নিজস্ব সিকু্যয়েল এবং ওয়েলকাম সিরিজের তৃতীয় পার্ট। তার অভিনীত সর্বশেষ 'হান্টার টুটেগা নেহি' একটি সিরিজ কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে