জীবনলড়াকু ফাতিমা
প্রকাশ | ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তারার মেলা ডেস্ক
শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে জার্নি শুরু ফতিমা সানা শেখের। কমল হাসান, তব্বু অভিনীত 'চাচি-৪২০', ঋষি কাপুরের 'বড়ে দিলওয়ালা', 'শাহরুখ খানের 'ওয়ান টু কা ফোর'-এর মতো ছবিতে কাজ করেন তিনি। ফতিমার ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল খুব অল্প বয়সেই। শিশুশিল্পী হিসেবে বলিউডে যাত্রা শুরু করেছিলেন ফাতিমা সানা শেখ। সেই ছবিটি ছিল ১৯৯৭ সালে করা 'চাচি-৪২০'। তার বহু বছর পর ববিতা ফোগাতের চরিত্রে 'দঙ্গল' ছবিতে দেখা যায় তাকে। তারপর 'লুডো-র মতো ছবিতে কাজ করেছেন হিন্দি ধারাবাহিকে দেখা গেছে ফতিমা সানা শেখকে। 'আগলে জনম মোহে বিটিয়া হি কিজো', 'লেডিস স্পেশাল'-এর মতো ধারাবাহিকে অভিনয় করেন। এ ছাড়াও 'মর্ডান লাভ মুম্বাই' সিরিজে লালির চরিত্রে প্রশংসিত হয়েছেন অভিনেত্রী। এতগুলো বছর কেটে গেলেও এখনো মুম্বাইয়ে কষ্ট করেই নাকি জীবন কাটাচ্ছেন তিনি।
অথচ নায়িকা হিসেবে রুপালি পর্দায় পা রাখার শুরুতেই 'দঙ্গল' ছবিটিই তার ক্যারিয়ারকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এই ছবির পর রীতিমতো তারকায় পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন ফাতিমা সানা। 'দঙ্গল' ছবিতে অভিনয় করার পর থেকেই ফতিমা সানা শেখের সঙ্গে আমির খানের সম্পর্কের গুজব শোনা গিয়েছিল বলি পাড়ায়। 'দঙ্গল' ছাড়াও 'ঠগস অব হিন্দুস্থান' ছবিতে একসঙ্গে কাজ করেছেন দু'জনে। কিন্তু তারপরও তার কষ্টের জীবন ফুরায়নি। এখনো টিকে থাকার সংগ্রাম করছেন। আজও ভাড়া করা বাসায় দিন কাটান তিনি।
অথচ 'দঙ্গল' সিনেমাটি যে তাকে অন্যদের তুলনায় কতটা দূরত্বে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেটা নিজেও বুঝতে পেরেছিলেন। আবার সেটাকে ধরে রাখাসহ নিজেকে আরও দূরত্বে এগিয়ে রাখতে যা যা করা দরকার সে বিষয়ে কেন তিনি সজাগ ছিলেন না। এ বিষয়ে ফাতিমা যে বুঝতে পারতেন না তাও নয়। তিনি নিজের জবানিতেই বলেছেন, 'দঙ্গল' আমার জীবনটাই পাল্টে দিয়েছিল। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে আমার অবস্থান যেখানে, তার নেপথ্যে ওই ছবিটার অবদান রয়েছে। আবার তার পরের ছবি, অর্থাৎ 'ঠগস অব হিন্দুস্থান' ফ্লপ হয়েছিল। কাজেই স্ট্রাগলের কোনো শেষ নেই। ধীর গতিতে এগোচ্ছি, কিন্তু এতেই আমি খুশি এবং নিজেকে নিয়ে গর্বিত।'
এই 'এতেই আমি খুশি'- এতটুকু আত্মতৃপ্তির জন্যও হয়ত এখনো ফাতিমা সানা সেখের সেই শৈশবের কষ্টের জীবন আজও শেষ হলো না। অথচ অনেক নায়িকাই আছেন যাদের সিনেমা 'দঙ্গল' সিনেমার মতো তুমুল ব্যবসা তো দূরের কথা, ব্যবসাই করেনি তাদের সিনেমা। অথচ তাদেরও এমন কষ্টের জীবন যাচ্ছে না যেমনটি যাচ্ছে সানা শেখের। তবে কি কষ্টের জীবন এড়াতে ডাইনে-বাঁইয়ে আরও নানা কিছু করার পথ যে থাকে অভিনেত্রীদের সেটার প্রতি তার কোনো লোভ নেই? আর সেই জন্যই আজও তিনি তার কষ্টের জীবন অতিবাহিত করছেন? নাকি এই বক্তব্যটি তার স্রেফ রোমান্টিক বয়ান?
নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে হিউম্যানস অব সিনেমাকে এক সাক্ষাৎকারে ফাতিমা সানা শেখ আরও জানিয়েছেন, 'আমি নিতান্তই নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা এক মেয়ে। আমরা সবাই মিলে নিচতলার একটা ঘরে থাকতাম। আসলে ওটা ছিল গাড়ি রাখার জায়গা, যাকে ঘর বানানো হয়েছিল। অবশ্য আমি নিজেকে নিয়ে সত্যি গর্বিত। এই নয় যে, আমি নিজে বাড়ি কিনেছি। এখনো আমি ভাড়াবাড়িতে থাকি। তবে অনেক পথ অতিক্রম করে আজ আমি এই জায়গায় এসেছি। আমি আমার সংগ্রামের দিনগুলোতে এই জায়গায় আসার কথা ভাবতাম। আমি এখনো সংগ্রাম করে চলেছি। আর এটা চলতেই থাকবে। টিকে থাকার সংগ্রাম কখনো শেষ হবে না।'
টানা ১৬ বছর বিবাহিত জীবনে থাকার পর ২০২১ সালে দ্বিতীয় স্ত্রী কিরণ রাওকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন আমির। সেই সময় ফাতিমাকেই বিয়ে ভাঙার জন্য দায়ী করেছিলেন কেউ-কেউ। কিরণ রাওয়ের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে একাধিক বার বলিউড অভিনেত্রী ফাতিমা সানা শেখের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট খ্যাত অভিনেতা আমির খানের। এমনকি বারবার গুঞ্জন ছড়ায় যে, তারা বিয়ে করতে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে শেষ হতে চলেছে ফাতিমার না ফুরানো কষ্টের জার্নি। যদিও এসবের প্রমাণ এখনো মেলেনি। অন্যদিকে, আমির খান ও ফাতিমা দু'জনের কেউই বিষয়টি নিয়ে কখনো মুখ খোলেননি।
শোনা যায়, 'দঙ্গল' ও 'ঠগস অব হিন্দুস্থান' সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে একে অপরের প্রেমে পড়েন তারা। সেই সূত্রে আমিরের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত ছিল ফাতিমার। আমির-কন্যা আইরা খানের সঙ্গেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ফাতিমার। আইরার বাগদানে সকাল থেকেই হাজির ছিলেন তিনি। কিন্তু আচমকাই নাকি আমির-ফাতিমার সম্পর্কে ছন্দপতন ঘটে। বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যম বিশ্বস্ত সূত্রের বরাতে সংবাদ প্রকাশ করে, তাদের সম্পর্কে নাকি চিড় ধরেছে! সেই গুঞ্জন আরও ডালপালা মেলে আমির কন্যার বিয়ে ঘিরে। কারণ সেখানে দেখা যায়নি ফাতিমাকে।
তবে আমির-কন্যার বিয়ে মিটতে না মিটতেই 'প্রেমেই রয়েছেন' বলে ঘোষণা দিলেন এই অভিনেত্রী। তবে সরাসরি আমিরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্বীকার না করলেও সেদিকেই ঈঙ্গিত দিয়েছেন ফাতিমা। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বছরের শেষ থেকে নতুন বছরের শুরু কেমন ছিল সেই জীবনযাপন জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
তিনি লিখেছেন, 'হেসে-খেলে, নেচে-গেয়ে শেষ হলো শুটিং। বছরের শেষ ও শুরুটা এদের সঙ্গেই কাটালাম। জীবন বদলে দেওয়ার মতো একটা জার্নি। শুধু ভালোবাসা রয়েছে যেখানে। আগামী কয়েকদিন শুধুই এদের ছবি দিয়েই ভরাবো।' আর এতেই কেন আমির কন্যা ইরার বিয়েতে তিনি উপস্থিত ছিলেন না সেই সমালোচনার জবাব পেয়ে গেছেন সমালোচকরা।
ফতিমা জানান অভিনেতাদের জীবনটাই এমন, শুধু চাকচিক্যই শেষ কথা নয়। ফতিমাকে খুব শিগগিরই দেখা যাবে মেঘনা গুলজার পরিচালিত 'স্যাম বাহাদুর' ছবিতে।