ফাঁকা মাঠে তৌসিফ
প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তারার মেলা রিপোর্ট
চলতি সময়ে ছোটপর্দায় যারা দু'হাতে, দু'পায়ে চুটিয়ে কাজ করে চলেছেন তাদের অন্যতম তরুণ অভিনেতা তৌসিফ মাহবুব। টিভি নাটক বা টিভিসি দুটোতেই সমানতালে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। চলতি সময়ে বিরতিহীনভাবে কাজে থাকা তৌসিফ অল্পসময়ের মধ্যেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন তার অভিনয় দিয়ে। এই মেধাবী অভিনেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমান সক্রিয়। বলতে গেলে এখন তিনি ছোটপর্দায় একচেটিয়াই কাজ করে চলেছেন। সমসাময়িক সময়ের অন্যসব ব্যস্ত অভিনেতাদের প্রায় সবাই যেখানে ওটিটির দিকে ঝুঁকছেন সেখানে তৌসিফ ছোটপর্দায় প্রায় ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা ধারাবাহিকভাবেই অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে থাকছে। গত কয়েক বছর ধরে এটাকে যেন তিনি এক প্রকার নিয়মে দাঁড় করিয়ে নিয়েছেন। বিশেষ করে রোমান্টিক চরিত্রে এমনিতেই তৌসিফকে বেশ মানিয়ে নেওয়া যায়। এই সময়ে যেসব তরুণী নায়িকা আছেন কেয়া পায়েল থেকে শুরু করে তানজিন তিশা পর্যন্ত তাদের বিপরীতে রোমান্টিক চরিত্রগুলোতে তাকেই যেন বেশি মানায়। রোমান্টিক অভিনেতা হিসেবে তার 'লুক' এর মধ্যে এক ধরনের নির্দোষতার ছাপও রয়েছে। সেজন্যও এ দিবসটিতে তার প্রতি একটা বাড়তি চাহিদা তো আছেই। সেক্ষেত্রে জুটি হিসেবে কখনো কেয়া পায়েলের সঙ্গে কখনো তানজিন তিশা কখনো তাসনিয়া ফারিণ যে-ই আসুক সবার সঙ্গেই তাকে বেশ মানিয়ে যায়।
তার একটি নাটক আছে যেটা গত বছর সিএমভি'র ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত হওয়া মাসরিকুল আলমের 'বউ বোঝে না'। এতে কেয়া পায়েলের বিপরীতে তার অভিনয় দর্শক দারুণ উপভোগ করেছেন। এ ছাড়া একই ইউটিউব চ্যানেলে প্রচারিত তানজিন তিশার বিপরীতে করা মোহাম্মদ মিফতা আনান পরিচালিত 'অন্তহীন' নামের দারুণ একটি রোমান্টিক নাটক ছিল। নয়ন চরিত্রে তৌসিফ মাহবুব এবং তারা চরিত্রে তানজিন তিশাকে নিয়ে নির্মিত হওয়া ভালোবাসা দিবসের এই বিশেষ নাটকের দুটো চরিত্রেই অনবদ্য অভিনয় করেছেন তৌসিফ-তিশা। দারুণ রোমাঞ্চকর গল্পের এই নাটকটিতে দেখা যায় বিস্তীর্র্ণ সরিষা ক্ষেতের মাঝে ছুটে চলেছে এক অপরূপা মেয়ে। মুখে তার প্রশান্তির হাসি। উৎসুক নয়ন সেই অপরূপার পেছন পেছন ছুটে চলে। যখনই মেয়েটার কাছে এসে মুখ দেখবে, তখনই নয়নের বাবা তাকে ঘুম থেকে ডেকে তোলে! এমনই এক স্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাওয়া বাস্তবে পৌঁছানো গল্পের এই নাটকটিতেও তৌসিফের রোমান্টিক অভিনয় মুগ্ধ করে দর্শককে।
এভাবে অতি সাম্প্রতিক অভিনয় করা নাটক পর্যন্ত নিজেকে প্রমাণের বেশ ভালো ক্ষুধাই আছে তৌসিফ মাহবুবের। সেই যে ২০১৩ সালে করা 'অল টাইম দৌড়ের ওপর' দিয়ে শুরু করেছিলেন তৌসিফ সেই দৌড় এখনো অব্যাহত রেখেছেন তিনি। কোনো বিরতি নেই। এ ব্যাপারে নিজেই তিনি বলেন, 'সবকিছুরই একটা সীমা নির্ধারিত থাকে যে, কখন কোনটা শেষ হবে। আমি এখনো কোনো সীমা নির্ধারণ করিনি। সীমার পরেও যদি কিছু থাকে আমি সে পর্যন্ত যেতে চাই।' তার মানে অভিনয়ে প্রতি বেশ ভালোই ক্ষুধা আছে তৌসিফ মাহবুবের।
এই ক্ষুধা আছে বলেই দেখা যায় বিভিন্ন পর্ব বা দিবস উপলক্ষে যখন নাটক খুব বেশি হয় সেখানে যেন তিনি 'অল টাইম দৌড়ের ওপর'ই থাকেন। সেটা দুই ঈদেই হোক আর ভালোবাসা দিবসেই হোক। এখানে ডজনের কম অভিনয় করতে তাকে কাছে সময়ে খুব কমই দেখা গেছে। ২০২১ সালের এক ঈদে তো সর্বোচ্চ ৫০টি পর্যন্ত অভিনয় করে রেকর্ড গড়েছেন তৌসিফ। সে বছর আবার সস্ত্রীক জারাসহ করোনায় আক্রান্তও হয়েছিলেন তিনি। সেজন্য তার ১৯টি নাটক আটকেও যায়। পরে নেগেটিভ হয়ে শুটিংয়ে ফিরেন। মূলত সে বছর থেকেই তৌসিফের নিজেকে প্রমাণের শুরু। নয়ত এর আগে মোশাররফ করিম-চঞ্চল চৌধুরী বা অপূর্ব-নিশোদের তারকাদু্যতির ছায়ায় প্রায় ঢাকাই পড়ে থাকতেন তিনি। এ নিয়ে তার একটা আক্ষেপও হয়ত ছিল। এখন তাকে প্রতি মাসেই যেরকম ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাতে নিশ্চয় এতদিনে তার সেই আক্ষেপ ঘুচেও গেছে।
অথচ এক সময়ে তার অনুযোগ ছিল, সিন্ডিকেটের কারণে তিনি ঈদে বা ভালোবাসা দিবসগুলোতে তুলনামূলকভাবে কম অভিনয়ের সুযোগ পান। ছোটপর্দায় হোক আর বড়পর্দাতেই হোক এই অভিযোগটি বহুল চর্চিত একটা বিষয়। সে যা-ই হোক, এখন তৌসিফ মাহবুব যে ছোটপর্দার শীর্ষ তারাকায় উত্তীর্ণ হতে চলেছেন- এ নিয়ে হয়ত এখন কারোরই দ্বিমত নেই। এক সময়ে যে অভিনেতা তারকা অভিনেতাদের ছায়ায় আড়াল হয়ে থাকতেন- এখন সময় এসেছে তার ছায়াতেই নতুনদের আড়াল হয়ে থাকার।