নতুন অভিযানে অদম্য বুবলী

পুরো নাম শবনম ইয়াসমিন বুবলী। ছিলেন প্রথমে বাংলাভিশনের একজন সংবাদ পাঠিকা। সংবাদ পাঠের চমৎকার শব্দ চয়ন তাকে এনে দিয়েছে অভিনয়ের সুললিত সংলাপ আওড়ানোর মঞ্চে। ২০১৬ সালে 'বসগিরি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে তার অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি শ্রেষ্ঠ নবীনশিল্পী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। ওই বছরই 'শুটার' নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। আর অভিষেক সিনেমাতেই তার বিপরীতে পেয়ে গিয়েছিলেন সময়ের সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খানকে

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মাতিয়ার রাফায়েল
গত কয়েক বছরে কলকাতার সিনেমায় ঢাকার একঝাঁক অভিনেত্রীর দেখা মিলেছে। তাদের বেশিরভাগই ছোটপর্দা থেকে যাওয়া। ঢাকাই সিনেমা থেকেও গিয়েছেন কয়েকজন। অবশেষে তাদের কাতারে নাম লিখালেন শবনম বুবলীও। অর্থাৎ ঢালিউডের গন্ডি পেরিয়ে এবার টলিউডে পা রাখতে চলেছেন ঢাকাই \হসিনেমার দর্শকপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম বুবলী। অনেকের কাছে হয়ত মনে হবে কলকাতা অভিযানের ক্ষেত্রে তিনি অন্যদের চেয়ে \হঅনেকটা পিছিয়ে ছিলেন বলেই তার এত দেরি হয়ে গেল টলিউডে তার নাম লেখাতে। বিষয়টি সেরকমও নয়। ঢাকাই সিনেমায় বর্তমানে যেসব নায়িকারা তুমুল ব্যস্ত সময় পার করছেন তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে বুবলীই এগিয়ে থাকবেন। কাজেই এত ব্যস্ততার মধ্যে থাকা একজন অভিনেত্রীর পক্ষে দেশের ছবিতে কাজ ফেলে রেখে বাইরের ছবিতে কাজ করার সময় বের করা কম ঝক্কির নয়। সেজন্যই মূলত বুবলীর এত দেরি হয়ে গেল কলকাতার সিনেমা যুক্ত হতে। কারণ, তার আগে যারা গত কয়েক বছরে কলকাতার ইন্ডাস্ট্রিতে নাম লিখিয়েছেন তাদের সবই ছিলেন এখানকার সিনেমায় একেবারেই অনিয়মিত। এমনকি যারা টিভি পর্দা থেকে গেছেন তারাও খুব বেশি ব্যস্ততার মধ্যে ছিলেন না। শবনম বুবলী এই যে সিনেমায় এখনো এত ব্যস্ত সময় পার করছেন এটাই তো অনেক বিস্ময়ের। অনেকে মনে করেছিলেন শাকিব খানের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ির পর তার ক্যারিয়ার আর প্রলম্বিত হবে না। তিনিও অপু বিশ্বাসের মতো কর্মহীন হয়ে পড়বেন নায়কের অভাবে। কিন্তু যারা এটা মনে করেছিলেন তাদের সেই ধারণা নিমেষেই উধাও হয়ে যেতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি বুবলীকে। তবে এই ধারণা হওয়ার কারণও আছে। অপু বিশ্বাসের পরিণতি দেখে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে অনেকেই এমনটা আঁচ করে নিয়েছিলেন যে বুবলীরও ক্যারিয়ার শেষ। তবে বুবলী তার আপন ক্ষমতা দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সবাইকে এক পালস্নায় মাপা ঠিক নয়। সেজন্যই শাকিবের জুটি সঙ্গী থেকে ছিটকে গিয়েছেন বলে অপু বিশ্বাস যেরকম নায়কের সংকটে পড়ে যান সেটা বুবলীর ক্ষেত্রে হয়নি। কারণ, বুবলী যে অপু বিশ্বাসের পথেও হাঁটেননি। যিনি সুযোগ থাকা সত্ত্বেও শাকিব ভিন্ন অন্য নায়কদের সঙ্গে জুটি কদাচিৎই বেঁধেছেন। সম্ভবত অপু বিশ্বাস থেকে এই শিক্ষা নেওয়াতেও এমন আবহাওয়ার পূর্বাভাস পড়ার আগেই বুবলী বরং তার ক্যারিয়ারকে নিষ্কণ্টক রাখতে শুরুতেই শাকিব ভিন্ন অন্য নায়কের সঙ্গেও কাজ করা শুরু করে দেন। শাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্ক টিকে থাকার সময় থেকেই অন্যান্য অভিনেতাদের সঙ্গে জুটি বাঁধতে শুরু করেন। বুবলীর এই দারুণ বিচক্ষণতাই আখেরে কাজে দিল! অবশ্য শাকিবের সঙ্গে যখন দূরত্বের শুরু সেই থেকে টানা ১১ মাস বুবলীও লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন। আবার সেই অন্তরালও ভাঙেন। ১১ মাস পর আবার নিরব ও রোশানের বিপরীতে 'চোখ' নামের সিনেমায় অন্তর্ভুক্ত হন। এর আগে সর্বশেষ যে সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন সেটাও শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে নয়। নিরব হোসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে যে সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি সেই সিনেমাটি সৈকত নাসিরের 'ক্যাসিনো'। এই 'ক্যাসিনো'র সঙ্গে আরও একটি সিনেমা চয়নিকা চৌধুরী পরিচালিত 'প্রহেলিকা'ও মুক্তি পেয়েছিল এবারের কোরবানির ঈদে। এক অদম্য মনোবলই তাকে টিকিয়ে রেখেছে এই রেসের দৌড়ের ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে। যারা মনে করেছিলেন, শাকিব খান ছাড়া শবনম বুবলী অচল তাদের দেখিয়ে দিলেন তিনি গস্নামার থাকলে এবং অভিনয় জানলে তিনি যে কোনো নায়কের সঙ্গেই ভালো পারফর্ম করতে পারবেন। ব্যক্তিগত জীবনে যে হোঁচট খেলেও তাতেও বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি মচকালেও ভাঙবেন না কিছুতেই। 'যেতে হবে বহু দূর'..... মনের জোর থাকলে এমন সংকল্পও যে কিছুতেই টলে না শবনম বুবলীর আবার একের পর এক সিনেমায় সাইন করার মধ্য দিয়ে সেটা প্রমাণ দিয়ে রেখেছেন। পুরো নাম শবনম ইয়াসমিন বুবলী। ছিলেন প্রথমে বাংলাভিশনের একজন সংবাদ পাঠিকা। সংবাদ পাঠের চমৎকার শব্দ চয়ন তাকে এনে দিয়েছে অভিনয়ের সুললিত সংলাপ আওড়ানোর মঞ্চে। ২০১৬ সালে 'বসগিরি' চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পে তার অভিষেক ঘটে। চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে তিনি শ্রেষ্ঠ নবীনশিল্পী বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন। ওই বছরই 'শুটার' নামে আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করেন তিনি। আর অভিষেক সিনেমাতেই তার বিপরীতে পেয়ে গিয়েছিলেন সময়ের সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খানকে। সহসা ভাগ্যচক্রেই যেন বাঁধা পড়ে গিয়েছিলেন এই ছবিটির সঙ্গে। কেননা, ছবিটিতে তার আগে নায়িকা হিসেবে অভিনয় করার কথা ছিল অপু বিশ্বাসের। ভাগ্য বিরাগ না হলে শবনম বুবলীর আরও তিনটি সিনেমা থাকতে পারতো। কিন্তু তিনটি না হয়ে দুটি হওয়ার কারণও সেই একই। যে কারণে তার শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে 'প্রিয়তমা' ছবিটিতে অভিনয় করা হলো না ঠিক একই কারণে অপু বিশ্বাসেরও 'বসগিরি' সিনেমায় অভিনয় করা হয়নি- যে সিনেমায় অপু বিশ্বাসেরই থাকার কথা ছিল- কিন্তু সেটা তাকে ছেড়ে দিতে হয়। যেমন ছেড়ে দিতে হয়েছে শবনম বুবলীকেও 'প্রিয়তমা' ছবিকে। কিন্তু 'প্রিয়তমা'র আকাচুম্বি সাফল্য দেখে ক্ষণিকের জন্য হলেও কি মোচড়ে ওঠেনি বুবলী'র মন! তবে তাতেও হতোদ্যম না হওয়া অবিচল বুবলী যে থেমে যাওয়ার পাত্রী নন। চেহারায় দেখতে অনেকখানি নরম প্রকৃতির মনে হলেও মনের দিক থেকে বেশ অদম্য ও অবিচলই বলা যায় বুবলীকে। কোরবানির ঈদের আগের ঈদেও মুক্তি পেয়েছিল শবনব বুবলী অভিনীত 'লোকাল' সিনেমা। সেই সিনেমাটিও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিল। শাকিব খান ছাড়াও যে তার নায়কের অভাব হবে না সেটা তার হাতে থাকা সিনেমা থেকেই প্রমাণ হয়ে যেতে খুব বেশি সময় নিতে হয়নি। যে নায়ক সংকটের কারণে অপু বিশ্বাসকে আবার শাকিব খানের কাছে ফিরে আসতে হয়েছে- সেরকম নায়কের সংকট যে বুবলীর ক্ষেত্রে হবে না সেটা ইতোমধ্যেই এক প্রকার নিশ্চিতই হয়ে গেছে। কারণ, বর্তমানে বুবলীর হাতে আছে আরও বেশ কয়টি নির্মাণাধীন সিনেমা। যেমন, মোহাম্মদ ইকবালের 'রিভেঞ্জ' এবং 'লন্ডন লাভ', জসিম উদ্দিন জাকিরের 'মায়া: দ্য লাভ', সাইফ চন্দনের 'বিট্রে' প্রভৃতি। কথাবার্তাও চালিয়ে যাচ্ছে আরো বেশ কিছু সিনেমা নিয়ে। আর এবারে 'ফ্য্লাশব্যাক' সিনেমার মধ্য দিয়ে তো তিনি আরও এক ক্রোশ এগিয়ে গেলেন। সিনেমাটির তিনটি চরিত্রের একটি স্বেতা। আর দুটি চরিত্রে আছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং সৌরভ দাস। ছবির গল্পে ঘটনাক্রমে দেখা হবে এই তিন চরিত্রের। ছবিটির প্রেক্ষাপট পাহাড়। সেখানে দাঁড়িয়ে সিনেমার থেকেও জীবনের চিত্রনাট্য আরও কতটা রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে সেটা নিয়েই এই ছবি। দেখা যাবে এই তিন চরিত্রের জীবন কোন দিকে বাঁক নেয় সেটা। আর এই বাঁক নেওয়ার মধ্য দিয়েই দেখা যাবে কলকাতা অভিযানে শবনম বুবলীর অভিনয়ের ক্যারিয়ারেও এসে গেছে আরেক বাঁকবদল।