গানের ঐশ্বর্য ঐশী
প্রকাশ | ১১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তারার মেলা রিপোর্ট
তরুণ প্রজন্মের কণ্ঠশিল্পী ঐশী। অল্প সময়েই তার সুরেলা কণ্ঠ দিয়ে মন জয় করে নিয়েছেন শ্রোতামহলের। পুরো নাম ফাতেমা তুজ যাহ্রা ঐশী। তবে সবার কাছে তিনি পরিচিত গানের মেয়ে ঐশী নামে। নবীন প্রজন্মের সাড়া জাগানো কণ্ঠশিল্পী। খুব অল্পসময়েই সঙ্গীত ভুবনের একজন শিল্পী হিসেবে নিজেকে জানান দিয়েছেন। বিভিন্ন করপোরেট অনুষ্ঠানে, কনসার্টে, টেলিভিশনে সঙ্গীত পরিবেশন করে এরই মধ্যে ঐশী সুরপ্রেমী মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। ঐশী বলেন, 'আমি যেমন একজন অতি সাধারণ মানুষ, তেমনই ক্ষুদ্র একজন গানের মানুষ হওয়ার চেষ্টা করছি। সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কিছুটা পরিচিতি পেলেও এখনো নিজেকে শিল্পী মনে করি না। শিল্পী হওয়া অনেক বড় বিষয়। প্রচুর সাধনা করতে হয়।' সম্প্রতি গানে সময় কম দিচ্ছেন। কারণ তিনি বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিসিইউর মেডিকেল অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। নিজের পেশাগত কাজের ফাঁকেই সময় পেলে কোথাও দুয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন নিরুপায় হয়ে। কারণ, গানই যে তার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে! নিজের গান নিয়ে তার ভবিষ্যতের চিন্তাটাও সেরকম। আগে নিজের পেশার প্রতি যত্নশীল হওয়া তারপরে যতটুকু সময় পাওয়া যায় তখন কিছুটা বিনোদনের জন্য গান করা। তিনি বলেন, 'গান আমার নেশা- তবে পেশা হিসেবে একজন ডাক্তার হতে চাই। গান আমার রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। গান ছাড়া বাকি জীবনের চিন্তা করতে পারি না। গান নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। অনেক ভাবনা। গান নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই বহুদূর।'
গানের সঙ্গে ঐশীর সখ্য সেই ছোটবেলা থেকেই। নোয়াখালীতে তার জন্ম হলেও বাবার চাকরির সুবাদে ঐশীর শৈশব কেটেছে রংপুরে। সেখানে ২০০০ সালে তিনি শিশু একাডেমিতে সঙ্গীত শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এরপর ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পযর্ন্ত সঙ্গীত শিক্ষা নেন নোয়াখালী মৌমাছি কচি-কাঁচার মেলার শিক্ষক মো. শরীফের কাছে। তারপর ২০০৮ থেকে সঙ্গীত শিক্ষা নিয়ে আসছেন ঐশীর শিক্ষা গুরু হাফিজউদ্দিন বাহার। যদিও তার গানের হাতেখড়ি হয়েছিল মায়ের কাছে মাত্র চার বছর বয়সে। মায়ের উৎসাহ, ঐকান্তিক চেষ্টা ও সহযোগিতায় এত দূর আসতে পেরেছেন বলে মনে করেন তিনি। বলেন, 'গানের পেছনে পথচলা শুরু হয়েছিল মা'র হাত ধরে। পরিবারের সমর্থন থাকলেও মায়ের সহযোগিতা আমাকে অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। মা পাশে না থাকলে হয়ত আজ আমি গানের ঐশী হতে পারতাম না।' ২০১২ সাল থেকে গানরে ভুবনে পরিচিতি পান ঐশী। আধুনিক সময়ের রক ব্যান্ড ও উন্নত কালচারের ছয়লাবে যখন ভরপুর, তখন বাংলার সঙ্গীতাঙ্গনে ফোক গান নিয়ে যারা সাড়া জাগিয়েছেন তাদের একজন ঐশি। তার কণ্ঠে বাংলার মানুষের প্রাণের ফোকসঙ্গীত যেন যুগোপযোগী হয়ে এসেছে। সুন্দরভাবে ফোক গানগুলো আধুনিক রক ফিউশনের মাধ্যমে তার কণ্ঠ দিয়ে জয় করতে সক্ষম হয়েছে দেশ-বিদেশের লাখো শ্রোতাদের হৃদয়। ফোক গান নিয়ে ঐশী বলেন, 'কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সব ধরনের গানই আমার ভালো লাগে। তবে বেশি গাওয়া হয় ফোক গান। ফোক গানে একটা তৃপ্তি পাওয়া যায়।'
সঙ্গীত জগতে ঐশীর জোয়ার শুরু হয় হৃদয় মিক্সড অ্যালবামের মাধ্যমে। এরপর ২০১৫ সালে লেজার ভিশনের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এই মিষ্টি শিল্পীর প্রথম একক অ্যালবাম 'ঐশী এক্সপ্রেস'। এরপর ২০১৬ সালে জনপ্রিয় শিল্পী বেলাল খানের সুরে ও জেকের সঙ্গীত আয়োজনে প্রকাশিত হয় ঐশীর ২য় একক অ্যালবাম 'মায়া'। একই বছর ঈদুল আজহায় প্রদীপ সাহার কথায় নাজির মাহমুদ ও অভি আকাশের সুরে প্রকাশিত হয় তার ৩য় অ্যালবাম 'হাওয়া'। '২০১৬ সালে চ্যানেল আই-সিম্ফনি মিউজিক অ্যাওয়ার্ডের পপুলার চয়েসের সেরা হয়েছিলেন ঐশী। গানের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। সঙ্গীত ভুবন যেন সর্বাঙ্গে তাকে বরণ করতে অপেক্ষা করছে। ঐশী বলেন, 'এ পর্যন্ত ৩০/৩২টির মতো ছবিতে পেস্নব্যাক করেছি।' তবে বছর তিনেক আগে বলিউডের একজন পর্নো তারকা সানি লিওনের সঙ্গে নেচে গেয়ে তিনি প্রথমবারের মতো নিজেকে বিতর্কিত করে ফেলেন। তখন তার ভক্তরা এ নিয়ে খুবই বিরক্তির প্রকাশ করেছেন সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
গত বছর জুনে ঐশী বিয়ে করেছেন। প্রায় আড়াই বছরের পরিচয় ও বন্ধুত্বের পর গত ২ এপ্রিল আংটি বদল হয় জিলানী ও ঐশীর। জিলানী পড়ালেখা করেছেন নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বর্তমানে একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত গায়িকার স্বামী।
বর্তমান সময়ের শিল্পীরা যেখানে মিউজিক ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন সেখানে ঐশী এ নিয়ে একেবারেই নির্বিকার। কারণ তার কাছে মিউজিক ভিডিওর চেয়ে গানের গুরুত্বই বেশি। বরং তিনি মিউজিক ভিডিওর কারণে গানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিতও। তবে তার মানে এই নয় যে, তিনি মিউজিক ভিডিওর বিরোধী। ঐশী বলেন, 'সময়ের দাবি হিসেবে গানের মিউজিক ভিডিও গুরুত্ব আছে- তবে গানের গুরুত্ব দিতে হবে। গান শোনার, দেখার নয়, এটা মাথায় রাখতে হবে।'