সূর্য থেকে যে শক্তি পাওয়া যায় তাকে সৌরশক্তি বলে। পৃথিবীতে যত শক্তি আছে, তা সূর্য কিরণ ব্যবহার করেই তৈরি হয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ও তেল ইত্যাদি আসলে বহু দিনের সঞ্চিত সৌরশক্তি।
পৃথিবীর সব শক্তির উৎসই সূর্য। সৌরশক্তি থেকে সরাসরি তাপ শক্তি পাওয়া যায়। আবার সৌরকোষের সাহায্যে সৌর আলোককে সরাসরি বিদু্যতে পরিণত করা যায়। সৌরশক্তিই আবার পৃথিবীর জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। সৌরশক্তি থেকেই বাতাসের সৃষ্টি হয়। আমরা বায়ুশক্তি পাই। সৌরশক্তির তাপেই সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হয়। মেঘ তৈরি হয়, বৃষ্টি হয়। জলবিদু্যৎ কেন্দ্রে শক্তির উৎসও সৌরশক্তি।
সৌরশক্তি হলো সূর্যের আলোকসজ্জা এবং তাপ- যা বহুবিবর্তিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবহৃত হয়; যেমন- সূর্যের উষ্ণতা, ফটোভোলটিক, সৌর তাপীয় শক্তি, সৌর স্থাপত্য, গলিত লবণ শক্তি কেন্দ্র এবং কৃত্রিম আলোকসংশ্লেষণ।
এটি পুনর্বীকরণযোগ্য শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এর প্রযুক্তিগুলো সৌরশক্তি কীভাবে গ্রহণ করে এবং বিতরণ করে বা সৌরশক্তিতে রূপান্তর করে, এর ওপর নির্ভর করে নিষ্ক্রিয় সৌর বা সক্রিয় সৌর হিসেবে বিস্তৃতভাবে চিহ্নিত করা হয়। সক্রিয় সৌর কৌশলগুলোর মধ্যে ফটোভোলটাইক ব্যবস্থার ব্যবহার, কেন্দ্রীভূত সৌর শক্তি এবং সৌরশক্তি দ্বারা গরম করে শক্তি ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত। নিষ্ক্রিয় সৌর কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে সূর্যের দিকে একটি ভবনকে কেন্দ্র করে নেওয়া, অনুকূল তাপের ভর বা হালকা- ছড়িয়ে দেওয়ার বৈশিষ্ট্যযুক্ত উপাদানগুলো নির্বাচন করা এবং প্রাকৃতিকভাবে বায়ুতে সঞ্চালিত স্থানগুলো নকশা করা।
উপলব্ধ সৌরশক্তির বিশাল পরিমাণ এটিকে বিদু্যতের একটি চিত্তাকর্ষক উৎস তৈরি করে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২০০০ সালের বিশ্ব জ্বালানি অ্যাসেসমেন্টে দেখা যায়, সৌরশক্তির বার্ষিক উৎপাদন সম্ভাব্য ১,৫৭৫-৪৯,৮৩৭ জুল। এটি মোট বিশ্ব বিদু্যৎ ব্যবহারের চেয়ে কয়েকগুণ বড়- যা ২০১২ সালের হিসাবে ৫৫৯.৮ ইজে ছিল।
পৃথিবীর উপরের স্তরের বায়ুমন্ডল থেকে আগত সৌর বিকিরণের ১৭৪ পেটাওয়াট (পিডবিস্নউ) গ্রহণ করে। প্রায় ৩০% মহাকাশে ফিরে যায় প্রতিফলিত হয়ে, যখন বাকি অংশ মেঘ, মহাসাগর এবং স্থলভূমি দ্বারা শোষিত হয়। পৃথিবীর পৃষ্ঠে সৌর আলোর প্রায়শই বর্ণালির দৃশ্যমান এবং নিকট-অতিবেগুনীর একটি ছোট অংশসহ অবিচ্ছিন্ন ইনফ্রারেড রেঞ্জজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বের জনসংখ্যার বেশিরভাগ অংশে প্রতি দিন ১৫০-৩০০ ওয়াট/এমও বা ৩.৫-৭.০ কিলোওয়াট /বর্গ এম ইনসোলেশন স্তর রয়েছে এমন অঞ্চলে বাস করে।
\হসৌরশক্তি হলো- সূর্য রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে বিদু্যৎ শক্তিতে রূপান্তর করা। দুইভাবে রূপান্তরের এই কাজটি করা হয়ে থাকে- প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। প্রত্যক্ষভাবে সূর্য রশ্মিকে ব্যবহার করাকে ফোটোভোলটাইক (পিভি) বলা হয়। প্রাথমিকভাবে ছোট ও মাঝারি পরিসরে এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পরোক্ষভাবে সূর্য রশ্মিকে ব্যবহার করাকে বলা হয় ঘনীভূত সৌরশক্তি বা কনসেনট্রেটেড সোলার পাওয়ার (সিএসপি)।
সৌরশক্তির ব্যবহার
১. সৌর তাপশক্তির সাহায্যে বাষ্প তৈরি করে সেই বাষ্পকে নিয়ে টারবাইন চালিয়ে বিদু্যৎ তৈরি করা ও তা ব্যবহৃত হয়।
২. সৌরকোষের সাহায্যে সৌরশক্তিকে সরাসরি বিদু্যতে পরিণত করা।
\হ৩. লেন্সের সাহায্যে সূর্যের আলোকে অভিসারী করে আগুন লাগানো যায়।
\হ৪. সূর্যের আলোকে ধাতব পাতের সাহায্যে প্রতিফলিত করে সৌরচুিলস্নতে রান্না করা যায়।
\হ৫. শীতের দেশে ঘরবাড়ি গরম করার কাজে ব্যবহার হয়।
\হ৬. মাছ, শস্য, সবজি শুকানোর কাজে সৌরশক্তি ব্যবহৃত হয়।
৭. সৌরশক্তির আরও উদাহরণ হচ্ছে- সোলার ওয়াটার হিটার, সোলার কুকার ইত্যাদি।
সারা বিশ্বে বর্তমানে ব্যাপকভাবে সৌরশক্তির ব্যবহার শুরু হয়েছে। বর্তমানে পৃথিবীতে পুনর্বীকরণযোগ্য শক্তির উৎস থেকে প্রায় চার লাখ ৫০ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদন হয়।